মণীন্দ্রনারায়ণ সিংহ
কলকাতা: পথ হারিয়ে প্রায় ছয় বছর পর নিজের ঘরে ফিরতে চলেছেন আলিপুরদুয়ারের একটি হোমের আবাসিক মাফুজা খাতুন। বাংলাদেশের পাবনা জেলার ভাঙ্গাবাড়ির বাসিন্দা মাফুজা ছবছর আগে সীমান্ত পেরিয়ে এপারে চলে এসেছিলেন। তখন তাঁর ১২ বছর বয়স ছিল। শিলিগুড়িতে দিশাহীনভাবে ঘোরাফেরা করায় ওই সময় পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করেছিল। তারপর প্রথমে জলপাইগুড়ির একটি হোম ও পরে তাঁর ঠিকানা হয় কামাখ্যাগুড়ির ওই বেসরকারি হোম। কামাখ্যাগুড়ির হোমে প্রায় চার বছর কাটিয়ে এবার ঘরে ফেরার সুযোগ আসায় মাফুজা খুশি। আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ১৩ নভেম্বর মাফুজা তাঁর পরিবারের লোকদের কাছে ফিরে যাবেন। আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত জেলা শাসক (উন্নয়ন) শ্রুতিরঞ্জন মহান্তি বলেন, উদ্ধার হওয়া হোমের আবাসিককে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে তাঁর পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। সরকারি উদ্যোগে সমস্ত রকম প্রক্রিয়া চলছে। ১৩ নভেম্বর দুই দেশের প্রশাসনের কর্তাদের উপস্থিতিতে তিনি তাঁর পরিবারের লোকেদের কাছে ফিরে যাবেন।
ছ’বছর আগে এক উন্মুক্ত সীমান্ত দিয়ে মাফুজা এপারে ঢুকে পড়েছিলেন। পুলিশ প্রশাসনের নজরে পড়তেই কামাখ্যাগুড়ির ওই হোম তাঁর ঠিকানা হয়। অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে কিশোর-কিশোরীরা এদেশে এলে তাদের ঘরে ফেরাতে অনেক কাঠখড় প্রশাসনকে পোড়াতে হয়। বাংলাদেশ হাইকমিশনার থেকে শুরু করে সে দেশের সরকারের সঙ্গে চিঠি চালাচালি চলে। সেই প্রক্রিয়া শেষ হতে কয়েক বছর লেগে যায়। নাবালিকা অবস্থায় কামাখ্যাগুড়ির হোমে থাকা আবাসিক মাফুজা অবশেষে বাংলাদেশ প্রশাসনের থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পর এবার তাঁর পরিবারের লোকদের কাছে ফিরে যাচ্ছেন। আলিপুরদুয়ার জেলা সমাজকল্যাণ দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, যতদিন হোম পরিদর্শনে গিয়েছি, ওর মুখে একটাই কথা বারবার শুনেছি, আমি কবে বাড়িতে ফিরব? আমার বাড়িতে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন। শেষ পর্যন্ত ওকে পরিবারের লোকেদের কাছে শীঘ্রই তুলে দেওয়ার সুযোগ আসায় ভালো লাগছে।
মাফুজার ঘরে ফেরার সময়-সুযোগ নাগালে চলে এলে ওই হোমেরই আরেক নাবালিকাও তার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চায়। গত প্রায় আড়াই বছর ধরে সে কামাখ্যাগুড়ির ওই হোমেই রয়েছে। জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ হাইকমিশনারের মাধ্যমে ওই নাবালিকার বিষয়ে সমস্ত তথ্য সে দেশের সরকারের নজরে আনা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার চাইলেই আমরা দ্রুত তাকেও তার পরিবারের হাতে তুলে দেব। এছাড়া জয়গাঁ থেকে উদ্ধার হওয়া ভুটানের বাসিন্দা ৪ বছরের একটি শিশু প্রশাসনের হেপাজতে গত প্রায় দেড় বছর ধরে রয়েছে। ওই শিশুটির মা ইতিমধ্যেই আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে দেখাও করেছেন। তবে শিশুকে মায়ে হাতে তুলে দেওয়ার আগে দুদেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের আলোচনার পর মা ও সন্তানের- দুজনের ডিএনএ টেস্টও হতে পারে।