ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী যাকের। আজ সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি। বাদ আসর বনানী কবরস্থান মসজিদে জানাজার নামাজ শেষে সেখানেই দাফন করা হবে বলে জানা যায়।
দেশীয় বিজ্ঞাপনশিল্পের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব আলী যাকের, যিনি টেলিভিশন ও মঞ্চ নাটকে সমান জনপ্রিয়। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটি-র কর্ণধার। এছাড়াও দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখতেন।
১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া আলী যাকের, মাহমুদ তাহের ও রেজিয়া তাহেরের চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয়। পিতার সরকারি চাকরির সুবাদে তিনি কুষ্টিয়া ও মাদারীপুরে শৈশব অতিবাহিত করেন। ১৯৬০ সালে সেন্ট গ্রেগরিজ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরবর্তীতে ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এ সময় তিনি ছাত্র ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হন।
১৯৭২ সালের জুন মাসের দিকে আতাউর রহমান ও জিয়া হায়দারের আহ্বানে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে যোগ দেন আলী যাকের। ঐ দলে তিনি আতাউর রহমানের নির্দেশনায় বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন, যার প্রথম মঞ্চায়ন হয়েছিল ওয়াপদা মিলনায়তনে। এরপর ১৯৭৩ সালে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে তিনি প্রথম নির্দেশনা দেন বাদল সরকারের বাকি ইতিহাস নাটকে, যা ছিল বাংলাদেশে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে নাট্য প্রদর্শনীর যাত্রা।
১৯৭৩ সালে ঐ দলে যোগ দেন সারা যাকের। একটি নাটকের প্রদর্শনীর আগের দিন একজন অভিনেত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে সারা যাকেরকে দেওয়া হয় চরিত্রটিতে অভিনয় করতে। আলী যাকেরের ওপর দায়িত্ব পড়ে চরিত্রটার জন্য তাকে তৈরি করার এবং খুব দ্রুত চরিত্রটির সাথে নিজেকে মানিয়ে নেন সারা যাকের। এই প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে যান আলী যাকের। ১৯৭৭ সালের এই ঘটনার রেশ ধরেই আলী যাকের আর সারা যাকেরের বিয়ে হয়। এই দম্পতির দুই সন্তান, পুত্র অভিনেতা ইরেশ যাকের ও কন্যা শ্রিয়া সর্বজয়া।
শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদক এবং মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেছেন।
-বাংলাদেশ জার্নাল