বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
শরীয়তপুরঃ টিকটকে পরিচয় থেকে প্রেমের সূত্র ধরে বিয়ের দাবি করা এবং প্রেমিক অস্বীকৃতি জানালে বাড়িতে অবস্থান নিয়ে মারধোরের শিকার সেই তরুণীকে ১৫১ ধারায় আদালতে চালান দেয়া হয়েছে। পরে, তিনি আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।
জানা যায়, কক্সবাজারের ঐ তরুণীর সাথে জাজিরার নাওডোবা ইউনিয়নের আবেদ আলী মুন্সি কান্দির জাহাঙ্গীর ফকিরের ছেলে সজিব ফকির(২৮) এর সাথে টিকটকে পরিচয় এবং তা থেকে প্রেম হয়। অভিযোগ করা হয়েছে, সজিব বিয়েতে অস্বীকৃতি জানালে মেয়েটি গত ২০ ডিসেম্বর তাদের বাড়িতে এসে অবস্থান নেন। সেখানে মারধোরে শিকার হন। এরপর কক্সবাজারের সেই তরুণীকে বিচারের আশ্বাস দিয়ে পদ্মাসেতু দক্ষিণ থানায় এনে মামলা করতে পাঠানোর কথা বলে আদালতে চালান করে দেয়া হয়।
অভিযুক্ত সজিব ফকিরের বাড়িতে ভুক্তভোগীর সারাদিন অবস্থান শেষে বিচারের আশ্বাস দিয়ে সন্ধ্যার পর থানায় নিয়ে সারারাত রেখে পরদিন (২১-ডিসেম্বর) বৃহস্পতিবার দুপুরে ভুক্তভোগী তরুণীর অজ্ঞতার সুযোগে আদালতে মামলা করতে পাঠাচ্ছেন এমন মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ১৫১ ধারায় চালান করেন পদ্মাসেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম। এমনটাই অভিযোগ ভুক্তভোগী ঐ তরুণীর। অবশ্য স্থানীয় এক ব্যাক্তি উকিলের মাধ্যমে আদালত থেকে মেয়েটির জামিন করান।
এদিকে, ভুক্তভোগী তরুণী পদ্মাসেতু দক্ষিণ থানার (ওসি) শরিফুল ইসলামেরও বিচার দাবী করে সাংবাদিকদের বলেন- বিচারের আশায় আমি কক্সবাজার থেকে অপরিচিত এলাকায় এসেছি। অথচ, ওসিও আমার সাথে প্রতারণা করে অন্যায়ভাবে আমাকে চালান করলো। আমার মতো একা একটি মেয়ের সাথে পুলিশের এমন আচরণে আমি প্রচন্ড ভয় পাওয়ার পাশাপাশি ন্যায় বিচারের বিষয়ে অত্যন্ত হতাশ হয়ে যাই। এমনকি জামিনের পূর্ব পর্যন্ত মনে হচ্ছিলো আত্মহত্যা করা ছাড়া আমার আর কোন পথই অবশিষ্ট রাখলোনা তারা। আমি এদের সবার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করবো।
নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন ঢালী জানান- মেয়েটিকে অনেক বোঝানোর পরেও সে ঐ বাড়ি থেকে কোথাও যাবেনা বলে জানায়। এমনকি এক পর্যায়ে সে আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে বলে তাকে মেনে নেয়া না হলে এবং সেখান থেকে সরানোর চেষ্টা করা হলে সে ঐ বাড়িতেই আত্মহত্যা করবে। পরে আমিসহ স্থানীয়রা মেয়েটিকে থানায় নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করলে ওসি সাহেব পুলিশ পাঠিয়ে মেয়েটিকে থানায় নিয়ে যান।
পদ্মাসেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম জানান- পরদিন বিচারের আশ্বাস তাকে কে দিয়েছে তা আমি জানিনা, তবে আমরা তাকে কক্সবাজারের আদালতে গিয়ে মামলা দায়ের করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু সে কোনভাবেই সেই কথায় রাজি ছিলোনা। তাই উপায়ান্তর না পেয়ে আমরা পরিস্থিতি বিবেচনায় তাকে ১৫১ ধারায় আদালতে চালান করে দিয়েছি। তবে, মেয়েটির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিলো কিনা সে বিষয়ে তিনি কিছুই বলেননি।
শরীয়তপুর জেলা পুলিশের নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো: আহসান হাবীব বলেন- কক্সবাজার থেকে আগত মেয়েটিকে ১৫১ ধারায় চালান কারার বিষয়টি আমি জানি। তাছাড়া সজিব ফকিরের পরিবারের পক্ষ থেকে মেয়েটির বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগও করা হয়েছিলো। মেয়েটিকে পরদিন বিচারের আশ্বাস প্রদান বা আদালতে মামলা করতে পাঠানোর মিথ্যা কথা বলে চালান দেয়া হয়েছে কিনা এ বিষয়ে আমি খোঁজ নেব।