বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১০ দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। ১৭ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এসব অনুষ্ঠানে পাঁচটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানসহ বিভিন্ন দেশের অতিথিরা অংশ নেবেন। বিদেশি ভিভিআইপি অতিথিদের আগমন এবং আয়োজিত অনুষ্ঠান নির্বিঘ্ন করতে রাজধানীজুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সোমবার (১৫ মার্চ) রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ১৭ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। এই উদযাপনে পাঁচ দেশের সকার ও রাষ্ট্রপ্রধান বাংলাদেশে আসবেন। তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেবে ডিএমপি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট ফোর্স ও কর্মকর্তাদের কার কি ভূমিকা থাকবে—এ ব্যাপারে সবিস্তারে নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিত নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি বা সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা নেই। তারপরেও ভিভিআইপিদের নিরাপত্তায় আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, নির্দেশনা অনুযায়ী ভিভিআইপি অতিথিদের সফর উপলক্ষ্যে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা হুমকি পর্যালোচনা করছে পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। নতুন কোনো পর্যবেক্ষণ থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, ভিভিআইপিসহ বিদেশি অতিথিরা যেসব হোটেলে অবস্থান করবেন সেসব হোটেলের ভেতরে ও বাইরে ইউনিফর্মে ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য মোতায়েন থাকবে। তারা হোটেলের যে ফ্লোরে অবস্থান করবেন সেখানে অন্য কোনো অতিথি অবস্থান করতে পারবেন না।
ঢাকা মহানগরীর যেসব রাস্তা দিয়ে ভিভিআইপিরা আসা-যাওয়া করবেন সেসব সড়কেও থাকবে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ভিভিআইপিদের গমনাগমনের সময় রাস্তার ফুটপাত ও ফুটওভার ব্রিজে কেউ চলাচল করতে পারবেন না। ভিভিআইপিরা চলাচলের সময় কেউ যেন অসৌজন্যমূলক বস্তু/পোস্টার/ব্যানার প্রদর্শন করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, অহেতুক আড্ডা, গণজমায়েত বন্ধের পাশাপাশি সন্ত্রাসী কার্যক্রম যাতে না হয় সেজন্য রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চালানো হচ্ছে ব্লক রেইড।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, কোনো স্থানে নিরাপত্তা ঝুঁকি যাতে না থাকে সেজন্য নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে ডিএমপি থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী তেজগাঁও বিভাগ পুলিশ কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে সোনারগাঁ হোটেলের আশপাশ যেমন বাংলামোটর, মগবাজার, কাওরান বাজার ও এর আশে-পাশের এলাকায় ব্লক রেইড চালানো হচ্ছে।
বিদেশি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের বাংলাদেশ সফর ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। যেন কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অতিথি, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠান সম্পর্কে উস্কানিমূলক পোস্ট, ছবি, বিরূপ মন্তব্য ও গুজব ছড়াতে না পারে। এছাড়া, বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন ও ধর্মীয় উগ্রবাদী সংগঠনের কর্মকাণ্ডের ওপর কঠোর নজরদারি রয়েছে।
রবিবার (১৪ মার্চ) মুজিববর্ষ ও সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, দেশে ৫টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান আসবেন। এখানে নিরাপত্তার বিষয়ে কম্প্রোমাইজের সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে ভিভিআইপি নিরাপত্তার যে প্রটোকল রয়েছে সে অনুযায়ী সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে।
আসন্ন উৎসবে কোনো নিরাপত্তার ঝুঁকি নেই। তবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার কথা আহ্বান জানান ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনার।
ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা দেওয়া রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। তাই ১৭ থকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত খুব বেশি প্রয়োজন না হলে চলাচল সীমিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন আইজিপি।
অতিথিদের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া এবং সাতক্ষীরা জেলার যশোরেশ্বরী দেবী মন্দিরে যাওয়ার কথা রয়েছে। এজন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ছাড়াও পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), ঢাকা জেলা, গোপালগঞ্জ জেলা ও সাতক্ষীরা জেলা পুলিশকে সম্ভাব্য যেকোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় পূর্ব পরিকল্পনা তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ডিভিআইপি ডিউটিতে নিয়োজিত পুলিশ ইউনিটগুলোতে ছুটি নিরুৎসাহিত করতে বলা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে ১০ দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠান চলবে ২৬ মার্চ পর্যন্ত। অনুষ্ঠানমালায় প্রতিদিন পৃথক থিমভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অডিও-ভিজুয়াল এবং অন্যান্য বিশেষ পরিবেশনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।
দশ দিনের অনুষ্ঠানমালায় ১৭, ২২ এবং ২৬ মার্চের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ১৭, ১৯, ২২, ২৪ এবং ২৬ মার্চের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন।
১৭ মার্চের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ, ১৯ মার্চ শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে, ২২ মার্চ নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারী, ২৪ মার্চ ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং এবং ২৬ মার্চের অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত থাকবেন।