বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
প্রযুক্তি থেকে শুরু করে জীবনের গুণগত মান– সবদিক থেকেই জাপান টেক্কা দিতে পারে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোকে। এমনকি সৌন্দর্যের ) দিক থেকেও বিশ্বের নিরিখে এতটুকু পিছিয়ে নেই জাপান। নৈসর্গিক শোভা তো রয়েছেই, পাশাপাশি জাপানের মহিলাদের রূপ দেখেও মুগ্ধ হতেই হয়। যেন কোনও ঐশ্বরিক জাদুবলে সে দেশের মহিলারা নিজেদের চিরযুবতী করে রেখেছেন! সবই কি প্রযুক্তির খেলা? নাকি অন্য কোনও রহস্য লুকিয়ে তাঁদের এই চিরযৌবনের নেপথ্যে?
গভীর পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা বলছে, জাপানি মহিলাদের সৌন্দর্যের চাবিকাঠি লুকিয়ে তাঁদের জীবনযাপনের খাঁজে খাঁজেই। দৈনন্দিন যাপনে এমন কিছু বিষয়কে তাঁরা জড়িয়ে নিয়েছেন অভ্যেসের মতো, যা তাঁদের সুন্দর তো বটেই, পাশাপাশি সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে।
সেগুলি কী কী, জেনে নিন
গ্রিন টি: অজস্র স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য বিশ্বে এখন বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে গ্রিন টি। তবে জাপানে এর ব্যবহার অনেক আগে থেকেই। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ গ্রিন টি হজমে, রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে, ক্ষত নিরাময়ে, হার্টের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে। গ্রিন টি-র পাতায় বায়ো-অ্যাকটিভ কম্পাউন্ড, ফ্ল্যাভোনয়েড ও ক্যাটেচিনের মতো ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট থাকে। এগুলো ভীষণ শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যা শরীরকে ক্ষতিকর ফ্রি ব়্যাডিক্যাল হওয়া থেকে আটকাতে পারে, ফলে অকালবার্ধক্য আসে না। গ্রিন টি-র সর্বোচ্চ উপকারিতা পেতে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কাপ পান করা যেতেই পারে।
সামুদ্রিক খাবার: জাপানি রন্ধনসামগ্রীতে সামুদ্রিক খাবারের বিপুল সম্ভার রয়েছে। সামুদ্রিক মাছ, স্কুইড, অক্টোপাস, ঈল, শেলফিশ আরও কত কী! এই সমস্ত খাবারই প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ ও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সম্পন্ন। এগুলোতে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ কম, ফলে সুস্থ শরীর, বিশেষত সুস্থ হার্টের জন্য এইসব সামুদ্রিক খাবার দারুণ কার্যকরী। খাদ্য তালিকায় এ সব খাবার থাকলে অসুখ-বিসুখের আশঙ্কা নিঃসন্দেহে কমে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন পর্যন্ত ভাল থাকাও সম্ভব হয়।
প্রচুর হাঁটাহাঁটি: জাপানের লোকেরা চাইলে পায়ে হেঁটেই বিশ্ব জয় করে ফেলতে পারেন। ও দেশে হাঁটার বিষয়টা শুধু প্রয়োজনেই নয়, সংস্কৃতির মধ্যেও পড়ে। অধিকাংশ মানুষই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। এই ধর্মে পায়ে হাঁটাকে ধ্যানের আরেক অঙ্গ বলে মনে করা হয়। হাঁটলে মন ভাল থাকে, পাশাপাশি শরীরও থাকে চাঙ্গা। মেদ জমে না, সহজে রোগ ঘেঁষতে পারে না। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার এমনিই অজস্র উপকারিতা রয়েছে। কোনও রকম অতিরিক্ত এক্সারসাইজ নয়, স্রেফ নিয়মিত পায়ে হেঁটেই জাপানি মহিলারা নিজেদের স্লিম অ্যান্ড ট্রিম (Japanese Beauty) রাখেন।
সময় নিয়ে খাওয়া: ব্যস্ত জীবনে আমাদের নাওয়াখাওয়ার সময়ই নেই। এক বেলা ধীর-স্থির হয়ে বসে খাওয়া মানেই আমাদের কাছে বিরাট ব্যাপার। রাস্তায়, অফিসে চলতে ফিরতে ফুচকা, রোল, চাউমিনেই আমাদের উদরাপুর্তি। কিন্তু জাপানিদের কাছে এমন চলতে ফিরতে খাওয়া মানে খাবারকে অসম্মান করা। ওদের কাছে খাওয়া একটি অত্যন্ত পবিত্র কাজ। যাতে শরীরকে আবার চালিকা শক্তি প্রদান করা হয়, জীবনকে তার চলার জন্য জ্বালানি দেওয়া হয়। তাই রীতিমতো মন দিয়ে শ্রদ্ধার সঙ্গে খাবার খাওয়ার রীতি রয়েছে সে দেশে।
টিভি দেখতে দেখতে বা অন্য কাজ করতে করতে খেতে গেলে অনেক সময় খাওয়ায় মনোনিবেশ করা হয় না। ফলে কী খাচ্ছি, তার স্বাদ কেমন, কতটা খেলে পেট ভরছে, কতটায় খিদে মিটছে না, সে সব খেয়াল আমাদের থাকে না। এর ফলে সঠিক পুষ্টিতে অসম্পূর্ণতা থেকে যায়। খাদ্যাভ্যাসে ত্রুটির কারণে বিচ্যুতি হয় আমাদের সৌন্দর্যেও, যে সুযোগ জাপানে খুবই কম।
রন্ধনপ্রক্রিয়া: রান্নার দোষে আমরা অনেক খাবারেরই যথাযথ খাদ্যগুণ নষ্ট করে ফেলি। ফলে ভাল ভাল খাদ্য উপাদানে রান্না হলেও পুষ্টি অধরাই থেকে যায়। জাপানে রান্নার বিষয়টা খুবই পদ্ধতিগত। খাদ্যের পুষ্টিগুণ সর্বোচ্চ বজায় রাখার জন্য ও দেশে সিদ্ধ খাওয়ার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। এতে তেল-মশলার ব্যবহার না থাকার জন্য হজমেও সমস্যা হয় না। পাশাপাশি শরীরও ভাল থাকে, অসুখ-বিসুখ দূরে থাকে। টক্সিন ফ্রি কোষ-কলা-তন্ত্রের কারণে ত্বকের স্বাস্থ্যেও তার প্রভাব পড়ে। সার্বিক সুস্থতা লাভ সহজ হয়।
মার্শাল আর্টস: জাপানে মার্শাল আর্টস শুধু খেলা বা শরীরচর্চার অঙ্গ নয়, আধ্যাত্মিক অনুশীলনও বটে। পাশাপাশি এটি এমন একধরনের ওয়ার্কআউট, যাতে শরীরের প্রতিটি পেশি শক্তিশালী ও নমনীয় হয়। কার্ডিও-ভাস্কুলার হেল্থ উন্নত করারও এক দুর্দান্ত উপায় মার্শাল আর্টস। ওজন কমাতেও সাহায্য করতে পারে এটি। এই অনুশীলনে দৃঢ়তা, নৈতিকতা এবং মূল্যবোধেরও উন্নয়ন হয়। আত্মবিশ্বাস বাড়ে। মন এবং শরীরের মধ্যে গভীরভাবে সংযোগ ঘটানোর একটি দুর্দান্ত উপায় মার্শাল আর্টস। এতে জাপানি মহিলারা ভেতর থেকে আরও সুন্দর (Japanese Beauty) ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।
মুক্ত বাতাস: জাপানের যে প্রান্তের ছবিই আপনি দেখুন না কেন, নজরে পড়বে প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য। সে দেশে প্রকৃতি মানবজীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। সভ্যতার প্রয়োজনে প্রকৃতির উপর যথেচ্ছ হস্তক্ষেপ হয় না জাপানে। ফলে সেখানকার মানুষ মুক্ত প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় আলাপচারিতায় মগ্ন থাকার সুযোগ পান অনেক বেশি। এতে স্ট্রেস কমে, লম্বা আয়ু পান জাপানিরা।
স্কিনকেয়ার: জাপানি মহিলাদের সুন্দর, প্রাণোজ্বল নিখুঁত ত্বক পৃথিবীর বাকি সমস্ত দেশের মহিলাদের ঈর্ষার কারণ। পাশ্চাত্যের দেশগুলোর মতো জাপানের মহিলাদের চেহারায় দ্রুত বলিরেখা পড়ে যায় না। কারণ সে দেশের মহিলাদের স্কিনকেয়ার রুটিন বাকিদের থেকে অনেকটাই আলাদা। ডায়েট ও হাইজিন মেনটেন করাও জাপানের স্কিনকেয়ার রুটিনের অন্যতম অঙ্গ। জাপানের ওখানে স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টের অধিকাংশই অয়েল বেসড। জাপানিরা মনে করেন, অয়েলি প্রোডাক্টই ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখতে ও ত্বককে প্রাণবন্ত রাখতে বেশি কার্যকর। ক্লিনজিং-টোনিং-ময়েশ্চারাইজিঙের পাশাপাশি ম্যাসেজ করাও স্কিনকেয়ার রুটিনের অন্যতম ধাপ বলে মনে করেন জাপানি মহিলারা।