বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: কানাডার প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করলেন জাস্টিন ট্রুডো । একইসঙ্গে তাঁর দল লিবারেল পার্টির প্রধান হিসেবেও পদত্যাগ করেছেন তিনি। ৯ বছর ধরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী পদে ছিলেন ট্রুডো।
সোমবার অটোয়ায় তাঁর বাসভবন রিডো কটেজের বাইরে সংবাদিক বৈঠকে ইস্তফার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, “কানাডার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে চাই। আমার এই ইচ্ছের কথা আমি দল এবং গভর্নরকে জানিয়েছি। দল নতুন নেতা নির্বাচন করার পর দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেব।” তাঁর সংযোজন, “এই বছরের শেষের দিকে নির্বাচন হবে। তা না হওয়া পর্যন্ত দল এবং কানাডার নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একজন নতুন নেতা খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ জন্য আমি ২৪ মার্চ পর্যন্ত সংসদ স্থগিত করছি।” লিবারেল পার্টির নেতা ট্রুডো ৯ বছর ধরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ট্রুডোর দাবি, তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর তিনি পদত্যাগের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর সফলতার নেপথ্যে পরিবারের ভূমিকা রয়েছে। গত রাতে নৈশভোজের সময় সন্তানদের কাছে তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্তের বিষয়ি জানিয়েছেন।
কানাডার আইনসভা রীতি অনুসারে, এই পরিস্থিতে ক্ষমতাসীন দল পরবর্তী নেতা নির্বাচনের জন্য আগামী ৯০ দিন সময় পাবে।
বিবিসি জানায়:মি. ট্রুডো এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেই ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সেবা করার সুযোগ পাওয়ায় আমি গর্বিত। আমি করোনা মহামারির সময়ে সেবা করতে পেরেছি, গণতন্ত্রকে মজবুত করার জন্য কাজ করেছি, ব্যবসা বাণিজ্যের জন্যও কাজ করেছি। আপনারা সবাই জানেন যে আমি একজন লড়াকু মানুষ।”
“আমি যখন ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী হই তখন থেকেই কানাডার জন্য, তার স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করেছি। মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে মজবুত করার জন্য কাজ করেছি আমি।”
এবছরই কানাডায় সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা এবং জনমত সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে যে ভোটারদের মধ্যে মি. ট্রুডোর জনপ্রিয়তা ক্রমশ কমছে। এর অর্থ হলো তার দল নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
মি. ট্রুডো তার নিজের দল – লিবারেল পার্টির ভেতর থেকেই চাপে ছিলেন। দলের সদস্যরা গত গ্রীষ্মকাল থেকেই প্রধানমন্ত্রীকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য বলছিলেন। ওই সময়েই টরোন্টোর একটি উপনির্বাচনে কনসার্ভেটিভদের কাছে ব্যাপক ভোটে পরাজিত হয় লিবারেলরা।
জনমত সমীক্ষাতেও পিছিয়ে পড়ছিলেন মি. ট্রুডো। ডিসেম্বর মাসে মাত্র ২২ শতাংশ কানাডিয়ান তার নেতৃত্বে ভরসা রাখছিলেন। তিনি ২০১৫ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এত কম জনসমর্থনের ইঙ্গিত আগে কখনও আসেনি।
টরোন্টো থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জেসিকা মারফি জানাচ্ছেন, “কানাডায় রাজনৈতিক অস্থিরতা এমন একটা সময় দেখা দিলো যখন দেশটি অর্থনৈতিক কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে চলেছে, যার মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য কারণ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নিতে চলেছেন আগামী ২০শে জানুয়ারি।
“মি. ট্রাম্প বলেই দিয়েছেন যে কানাডা যদি অনুপ্রবেশকারীদের এবং বেআইনি মাদক আমেরিকায় প্রবেশের ওপরে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে তাহলে কানাডা থেকে আসা পণ্যের ওপরে তিনি ২৫% কর আরোপ করবেন। এই পরিমাণ কর কানাডার অর্থনীতিকে শেষ করে দিতে পারে,” জানাচ্ছেন জেসিকা মারফি।
তার কথায়, “এই কঠিন চ্যালেঞ্জ আসলে কতটা অনুধাবন করতে পেরেছেন মি. ট্রুডো, সে ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি হঠাৎই ইস্তফা দেন দেশটির অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড।“