
বহির্নোঙরে ১০ জাহাজে সাড়ে ৫ লাখ টন
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: এখন চলছে ইট পোড়ানোর মওসুম। এরজন্য শুরু হয়েছে তাপ কয়লা আমদানি। জাহাজে জাহাজে কয়লা আমদানি হচ্ছে। বর্তমানে বহির্নোঙরে ১০টি জাহাজ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টন খালাস করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের পথে রয়েছে আরও কয়লাবোঝাই জাহাজ।
বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, গত ৩ সপ্তাহে এসেছে কয়লার জাহাজগুলো। দেশের বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানি করছে কয়লা। প্রধানত আফ্রিকা এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, এ বছর দেদার আমদানি হলেও দর চড়া। গত বছর এ সময়ে টন ছিল ৭ হাজার টাকার মধ্যে। সপ্তাহ খানেক আগেও সেই দর ছিল। বর্তমানে প্রায় ৮ হাজার টাকা। বিশ্ববাজারে কয়লার সংকটের কথা বলে স্থানীয়ভাবে বাড়তি দর নেয়া হচ্ছে।
কাস্টম হাউসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বহির্নোঙরে সব জাহাজ থেকে লাইটারিং চলছে। কোন কোন জাহাজ সব কয়লা লাইটারিং করে ফিরে যাবে। আর কোন কোন জাহাজ আংশিক খালাসের পর চলে যাবে মোংলায়।
কয়লা খালাসের পর বহির্নোঙর থেকে নৌ-পথে চট্টগ্রামের মাঝিরঘাটসহ বিভিন্ন মোকামে ডাম্পিং করা হচ্ছে।
আমদানিকারকরা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে কয়লা খালাসের মত কোন বিশেষায়িত জেটি নেই। তাই জাহাজকে বহির্নোঙরে থাকতে হয়। সেখান থেকে লাইটার জাহাজে খালাস করা হয় কয়লা। এতে অতিরিক্ত ব্যয় হয়। সরাসরি জেটিতে খালাসের সুযোগ থাকলে আমদানিতে খরচ পড়তো কম।
দেশে প্রতি বছর কয়লার চাহিদা বাড়ছে, আর তা পূরণে আমদানিও হচ্ছে প্রচুর। উৎকৃষ্ট মানের কয়লা আমদানি হয়েছে আফ্রিকা থেকে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ইন্দোনেশিয়া ও আফ্রিকার কয়লা উৎকৃষ্ট মানের। সালফারের হার আমাদের গ্রহণযোগ্য মাত্রার মধ্যে।
পরিবেশ আইনে শতকরা এক ভাগের বেশি সালফারযুক্ত কয়লা আমদানিযোগ্য নয়। দীর্ঘদিন ভারত থেকে স্থল বন্দর দিয়ে একচেটিয়া কয়লা আমদানি হয়েছে। সেখানকার কয়লায় ৬ ভাগ থেকে ১২ ভাগ পর্যন্ত সালফার পাওয়া গেছে। স্থল বন্দর দিয়ে শুল্ক বিভাগের দৃষ্টি এড়িয়ে বা যোগসাজশে এ ধরনের কয়লা আমদানি হয়েছিল প্রচুর। ভারত থেকে কয়লা আমদানি ব্যাহত হলে আফ্রিকা ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানিতে ঝুঁকে পড়ে বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ছাড়া কয়লার সবচেয়ে বেশি চাহিদা ইটের ভাটায়। এ ছাড়া, রি- রোলিং মিল, চায়ের দোকান, সড়ক তৈরি ও সংস্কার কাজে প্রয়োজন হয় কয়লা।
বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারক সমিতি কর্মকর্তারা জানান, একটি ভাটায় বছরে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ ইট তৈরি হয়। এক লাখ টন ইট পোড়াতে কয়লা প্রয়োজন হয় প্রায় ২০ টন। সেই হিসেবে ইট ভাটাগুলোর চাহিদা প্রায় ৪৮ লাখ টন। এ ছাড়া, অন্যান্য খাতে প্রয়োজন আরও অন্তত দু’লাখ টন। এর সবটাই যোগান দেয় বেসরকারি আমদানিকারকরা।
এক সময় কয়লা আমদানি হতো একমাত্র সরকারি খাতে। কয়লা পরিদপ্তর এই দায়িত্ব পালন করতো। এরশাদ সরকার আমলে এই দপ্তর বিলুপ্ত করে দেয়া হয়। তারপর থেকে বেসরকারি আমদানিকারকরা প্রতিবেশি ভারত থেকে স্থল বন্দর দিয়ে কয়লা আনতো। তবে পরিবেশবাদী সংগঠনের আন্দোলনসহ নানা কারণে সেখান থেকে নিরবচ্ছিন্ন আমদানি সম্ভব হয় না।
উল্লেখ্য, নভেম্বর থেকে মে মাস হলো ইট পোড়ানোর ভর মওসুম।