Home First Lead জাহাজ ও চ্যানেলের জন্য হুমকি বাল্কহেড

জাহাজ ও চ্যানেলের জন্য হুমকি বাল্কহেড

বাল্কহেড। চলার কথা অভ্যন্তরীণ নৌপখে, চলে বঙ্গোপসাগরে, কর্ণফুলীতে

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম: বালুবাহী নৌযান বাল্কহেড। কেবলমাত্র অভ্যন্তরীণ নৌপথে স্বল্প দূরত্বে শুধুমাত্র বালি পরিবহনের জন্য তৈরি। সেগুলো এখন চলছে বহির্নোঙর থেকে পণ্য পরিবহনে বেআইনিভাবে। আর তা কর্ণফুলী চ্যানেল এবং আউটার এ্যাংকরেজে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলে হুমকি সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর।

গত ১৫ অক্টোবর, মঙ্গলবার মধ্যরাতে বন্দরের ডলফিন জেটি এলাকায় ডুবে গিয়েছিল একটি বাল্কহেড। জাহাজ চলাচল পথেও বাল্কহেড ডুবির ঘটনা ঘটেছিল। তাতে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বন্দরে জাহাজ চলাচল। এ রকম ঘটনা আরও বহু।

চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য ভয়াবহ আশংকার কারণ হওয়া সত্ত্বেও কতিপয় পণ্যের এজেন্ট বাল্কহেড দিয়ে বেপরোয়াভাবে বহির্নোঙরে মাদার ভেসেল থেকে পাথর, কয়লাসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করছেন। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর থেকে বারে বারে সতর্ক করা হয়েছে।

প্রতিদিন এভাবে গড়ে প্রায় ৮০০ লাইটার জাহাজ অলস নোঙর করে থাকে

অনুসন্ধানে জানা যায়, বহির্নোঙরে মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাস হয় প্রধানত লাইটার জাহাজ দিয়ে। ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি)তাদের সিরিয়ালে থাকা জাহাজ বরাদ্দ করে লাইটারিংয়ের জন্য। কতিপয় আমদানিকারকের পক্ষে তাদের পরিবহন এজেন্টরা অধিক মুনাফার লোভে বাল্কহেড দিয়ে বহির্নোঙর থেকে মাদার ভেসেলের পণ্য পরিবহন করছেন। কর্ণফুলী চ্যানেল এবং বহির্নোঙরে জাহাজ চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও কম ভাড়ার বাল্কহেড ব্যবহার করছেন তারা। বাল্কহেডের কোন বিমা সুবিধাও নেই। তাই ডুবে গেলে কোনরূপ ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে না। তারপরও জেনে শুনে আমদানিকারকরা এই সুযোগ নিচ্ছেন। কারণ হিসেবে এক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহি জানান যে দেশের সব এলাকায় লাইটার জাহাজ যেতে পারে না। বাঁশখালী এবং মিরেরসরাইর যেসব স্থানে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলছে সেখানে অবাধে যেতে পারে বাল্কহেড। তাছাড়া, লাইটার জাহাজের তুলনায় বাল্কহেডের ভাড়া একেবারে কম। এ কারণে প্রচুর বাল্কহেড ঝুঁকি নিয়ে ব্যবহার হচ্ছে।      বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, বাল্কহেড কোন কারিগরি নকশায় নির্মাণ করা হয় না। যারা তৈরি করে তাদের নেই কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। মিস্ত্রি এবং ওয়েল্ডাররা নির্মাণ করেন।

সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর সূত্র জানায়, অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারি নৌযানের শ্রেণিবিন্যাস ও কাঠামো অনুযায়ী বালিবাহী নৌযানসমূহ বালি পরিবহন ছাড়া অন্য কোন প্রকার পণ্য পরিবহন করার সুযোগ নেই। তা সত্ত্বেও  চট্টগ্রাম বহির্নোঙর হতে বালিবাহী নৌযান দিয়ে মালামাল পরিবহন করা হচ্ছে বেআইনিভাবে। আরও জানায়, বালিবাহী নৌযানের কাঠামো পণ্য পরিবহন এবং বে-ক্রস করার উপযোগী নয়।

আরও জানায়, কর্ণফুলী চ্যানেলে চলাচলরত সব অভ্যন্তরীণ ও মালবাহী নৌযানসমূহে কর্তব্যরত মাস্টারদের যোগ্যতা সনদে কর্ণফুলী এনডোর্সমেন্ট থাকা বাধ্যতামূলক, বাল্কহেড চালকদের তা নেই। বালিবাহি নৌযান দিয়ে বহির্নোঙর থেকে পণ্য পরিবহন রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর থেকে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

খুরশিদ আলম

বাংলাদেশ কার্গোভেসেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাবেক সহ-সভাপতি খুরশিদ আলম জানান, ডব্লিউটিসি’র সিরিয়াল বহির্ভূতভাবে লাইটার জাহাজ চলাচল এবং বাল্কহেড দিয়ে পণ্য পরিবহনের জেরে গড়ে প্রায় ৮০০ লাইটার জাহাজ অলস বসে থাকতে হয়। যাদের দায়িত্ব এই অবৈধ কারবার রোধ করা তাদের যোগসাজশে মাত্র ৪/৫ টি পণ্যের এজেন্ট এর জন্য দায়ী।

এক জাহাজ মলিক বলেন, কিছু সুবিধাভোগী কর্মকর্তা, পণ্যের এজেন্ট ও জাহাজ মালিকের কারণে নৌপথে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থায় চরম অব্যবস্থাপনা বিদ্যমান। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।  মো. ইকবাল হোসেন আহবায়ক ও ইঞ্জিনিয়ার মেহবুব কবির সদস্য সচিব, মাহবুব উদ্দীন আহমেদ প্রধান উপদেষ্টা, মোঃ রকিবুল আলম দিপু কমিটির মুখপাত্র ।