Home Second Lead বড় অর্থনীতির দেশের মধ্যে ৩৫তম বাংলাদেশ

বড় অর্থনীতির দেশের মধ্যে ৩৫তম বাংলাদেশ

বিশ্ব অর্থনীতির কঠিন চ্যালেঞ্জের বছরেও বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার অনেক বেড়েছে। আর তাতে ভর করে বিশ্বের ৩৫তম বড় অর্থনীতির দেশ এখন বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তৈরি এই তালিকায় বিশ্বের ৫০টি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু ভারত ও বাংলাদেশ রয়েছে।

৪৬৫ বিলিয়ন ডলার জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) নিয়ে বিদায়ী ২০২২ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫তম। এর আগের বছরে এই অবস্থান ছিল ৪১, সে সময় বাংলাদেশের জিডিপির আকার ছিল ৩৯৭ বিলিয়ন ডলার।

আইএমএফের পরিসংখ্যানের বরাতে কানাডার অনলাইন প্রকাশনা সংস্থা ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্টে গত ২৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। দেশগুলোর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) নিরিখেই এ তালিকা করা হয়েছে।

একটি দেশের অভ্যন্তরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের একটি বড় নির্ণায়ক জিডিপি। একটি দেশে, একটি নির্দিষ্ট সময়ে সরকারি ও বেসরকারি খাতের পুরো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের (পণ্য ও পরিষেবা—সবই) মোট মূল্য উঠে আসে জিডিপিতে।

এর আগে গত বছরের ১২ জুলাই ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট ‘বিশ্ব অর্থনীতিতে কোন দেশ কোথায়?’ শীর্ষক আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০২১ সালে বিশ্বের ৪১তম বড় অর্থনীতি বাংলাদেশ। ওই প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তও আইএমএফের কাছ থেকে নেয়া হয়েছিল।

‘দি টপ হেভি গ্লোবাল ইকোনমি’ শীর্ষক ২৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী দেশ ভারত বিশ্ব অর্থনীতিতে পঞ্চম স্থানে চলে এসেছে। জুলাইয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতের অবস্থান ছিল ষষ্ঠ।

২০২২ সালে ৩ দশমিক ৪৬ ট্রিলিয়ন আমেরিকান ডলার জিডিপি নিয়ে যুক্তরাজ্যকে পেছনে ফেলে পঞ্চম স্থান দখল করে নিয়েছে ভারত।

তালিকায় প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ও জার্মানি। দেশ ৪টির জিডিপি যথাক্রমে ২৫ দশমিক শূন্য ৩, ১৮ দশমিক ৩২, ৪ দশমিক ৩০ ও ৪ দশমিক শূন্য ৩ ট্রিলিয়ন আমেরিকান ডলার।

বিশ্বের ১০টি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের বাকি ৫টি দেশ হচ্ছে যথাক্রমে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, রাশিয়া এবং ইতালি। দেশ ৫টির জিডিপি যথাক্রমে ৩ দশমিক ২০, ২ দশমিক ৭৮, ২ দশমিক ২০, ২ দশমিক ১৩ ও ১ দশমিক ৯৯ ট্রিলিয়ন আমেরিকান ডলার।

প্রতিবেদেন বলা হয়, বিদায়ী ২০২২ সালে বিশ্বে দুটি বড় ঘটনা ঘটেছে। প্রথমত-বিশ্বের জনসংখ্যা ৮০০ কোটি পার হয়েছে। দ্বিতীয়ত-বিশ্ব অর্থনীতির আকার ১০০ ট্রিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে ১০১ দশমিক ৫৬ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব অর্থনীতির আকার এই যে ১০০ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়াল, তাতে ছোট-বড় সব দেশের জিডিপির হিসাব যুক্ত হয়েছে। তবে এর বড় অংশজুড়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, জার্মানি ও ভারত। বিশ্বের মোট জিডিপির অর্ধেকই এ কয়েকটি দেশের। আরও পাঁচটি দেশকে যদি এর সঙ্গে যুক্ত করা যায়, তবে ১০ দেশের মিলিত জিডিপি হয় বৈশ্বিক জিডিপির ৬৬ শতাংশ। আর বিশ্বের ২৫টি দেশ বৈশ্বিক জিডিপির ৮৪ ভাগের অংশীদার।

বিশ্বের বাকি ১৬৭টি দেশের জিডিপির পরিমাণ কিন্তু খুবই কম, মাত্র ১৬ শতাংশ। নিম্ন জিডিপির দেশগুলোর বেশির ভাগই ওশেনিয়া অঞ্চলের দ্বীপদেশ।

মোট ১৯১টি দেশ নিয়ে তৈরি আইএমএফের এই তালিকায় সর্বশেষ নামটি হচ্ছে টুভালু। ৬৬ মিলিয়ন ডলার জিডিপি নিয়ে দেশটির ১৯১তম অবস্থানে রয়েছে।

যেখানে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ : প্রতিবেদনে দেখা যায়, বৈশ্বিক জিডিপির তালিকা অনুযায়ী বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থান ৩৫তম। বাংলাদেশের জিডিপির আকার এ সময় ছিল ৪৬০ বিলিয়ন ডলার বা ৪৬ হাজার কোটি ডলার। বাংলাদেশের ঠিক আগেই রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর ও অস্ট্রিয়ার মতো দেশ। আর ঠিক পরেই আছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম।

বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা : অর্থনীতির এক ঘোর অনিশ্চয়তা নিয়ে শুরু হয়েছে ২০২৩ সাল। করোনা মহামারি, এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মূল্যস্ফীতিতে নাকাল বিভিন্ন দেশের মানুষ। অনেক বিশেষজ্ঞ স্বল্প আকারে মন্দা সৃষ্টি হওয়ার কথা বলছেন। তবে এটা স্বল্প না দীর্ঘস্থায়ী হবে, তা নিয়ে বিতর্ক আছে।

এরই মধ্যে আইএমএফ বলেছে, বিশ্বের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ দেশ মন্দার কবলে পড়বে। অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, অর্থনীতির নিম্নগামী প্রবণতাকে রুখতে পারবে চীন। এই ধারণা যদি ঠিক হয়, তবে বিশ্ব জিডিপির হিস্যায় দেশটির অংশ বাড়বে আরও।