ক্যাব প্রণীত খসড়া জ্বালানি নীতির ওপর নাগরিক মতবিনিময় সভা ইউএসটিসিতে
চট্টগ্রাম: কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) প্রণীত খসড়া জ্বালানি নীতির ওপর নাগরিক মতবিনিময় সভা শনিবার (৪ ডিসেম্বর) ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগাং (ইউএসটিসি) ডি-ব্লকে হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ক্যাব কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন।
রিসোর্স পার্সন হিসাবে বক্তব্য রাখেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম। অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান, ইউএসটিসির ভিসি প্রফেসর ডঃ জাহাঙ্গীর আলম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডীন অধ্যাপক হোসেন কবীর, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন সাবেক সভাপতি এম নাসিরুল হক, সরকারি হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজের রসায়ন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক পরিবেশবিদ ডঃ ইদ্রিস আলী, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, প্রাণ-প্রকৃতি মঞ্চের শমসের আলী, ন্যাপের সাংগঠনিক সম্পাদক মিথুল দাশ গুপ্ত, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এস এম সোহরাব উদ্দীন, প্রিমিয়ার বিশ^বিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সঞ্জয় বিশ্বাস, গণসংহতি আন্দোলনের হাসান মারুফ রুমি, প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ চৌধুরী, ইউএসটিসির ডীন প্রফেসর দেব প্রসাদ পাল, প্রকৌশলী সনাতন চৌধুরী, উন্নয়ন কর্মী ওবায়দুর রহমান, ক্যাব দক্ষিন জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান, ক্যাব যুব গ্রুপের সভাপতি চৌধুরী কেএনএম রিয়াদসহ বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণীর প্রতিনিধিরা অংশনেন। ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী সূচনা বক্তব্য রাখেন।
অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, জনগনের পক্ষে জ্বালানি নীতিমালা দাবি হিসাবে আমরা প্রস্তাবনা করছি। এনার্জি ট্রানজেকশনে পরিবেশ সুরক্ষা সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। স্বাধীন দেশে জ্বালানি সম্পদ রক্ষার জন্য সংগ্রাম বিরল। আমরা সেই সম্পদ রক্ষা করতে পারিনি। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কমলেও দেশীয় বাজারে দাম কমে নাই। বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে দাম বেড়ে যায়। ন্যায্য দামের চেয়ে জ্বালানির বেশি দাম নেয়া হচ্ছে। সরকারকে বিদ্যুতে ১৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আমরা সেটা থেকে বের হতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, ভোক্তা স্বার্থ রক্ষার সময় সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলি নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকে। মন্ত্রণালয়ে যে লোকগুলোকে রাখা হয়েছে তারা যদি ব্যবসার অংশ হয়, তাহলেই সমস্যা। এ সুযোগে বেসরকারী খাত সুযোগ খুঁজবে। এই সেক্টর পরিচালনায় সরকারের দর্শন পরিষ্কার হওয়া উচিত। জ্বালানি অধিকার সুরক্ষা হলে সব ব্যয় কমে যাবে। জাতীয় আয় বেড়ে যাবে। সামনে জ্বালানি এভাবে দাম বাড়লে আমরা লক্ষ্য থেকে ছিটাকে পড়বো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান বলেন, জ্বালানি সমস্যা একটি রাজনৈতিক সমস্যা। এই সমস্যার কারণে আজ আমাদের অধিকার লুণ্ঠনের শিকার। মৌলিক অধিকারের বিবেচনায় জ্বালানি উপর অধিকার জন্মায়। এই অধিকার সঠিকভাবে বাস্তবায়ন সরকারের দায়িত্ব।
তিনি আরও বলেন, এলএনজি, সিএনজি খাতে বিশাল বিশাল কোম্পানি গড়ে উঠেছে। সেখানে ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারিনি। ভোক্তাদের প্রণীত রাষ্ট্র যে দায়িত্ব সেটা নিশ্চিত করে অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জ্বালানি নীতির মাধ্যমে ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিতের সময় এসেছে।
ইউএসটিসির ভিসি প্রফেসর ডঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নেপালে বাড়ীর ছাদে সোলার প্যানেল বসিয়ে সেখান থেকে ন্যাশনাল গ্রিডে দিচ্ছে। এটার দাম আমরা জানি। প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ কত টাকা খরচ পড়ছে সেটা আমরা জানি। কিন্তু নিউক্লিয়ার, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আমাদের অন্ধকারে রেখেছে। কত কিলোওয়াট কত টাকায় সেটা আমরা জানি না। নেপালে শতভাগ সোলারে চলে গেছে। জামার্নীতে সব পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ করে একটা সময়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে চলে যাবে।
তিনি আরও বলেন, আমার জ্বালানি আমি উৎপাদন করবো, সে অধিকার আমাকে দিতে হবে। শহরের লোকেরা যে বিদ্যুৎ, গ্রামের লোকেরাও সে সুবিধা যেন পায়। বিদ্যুতের অপচয়ের দায় কে নিবে? সেটাও দেখতে হবে। দেশ ডিজিটাল হচ্ছে, বিদ্যুৎ শক্তি থাকবে। রিনিওয়েবল এনার্জি একমাত্র বাংলাদেশে সম্ভব।
এস এম নাজের হোসাইন বলেন, জ্বালানি নীতি এবং নাগরিক অধিকার দরকার সবাই সেটাতে একমত। জ্বালানি নীতি বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকার পর চট্টগ্রামে প্রথম আন্দোলনের সূচনা হলো। এই নীতিমালা কার্যকর করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে হতাশা থাকবে, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশে অনেক ক্ষেত্রে বিশাল উন্নয়ন হয়েছে। মৌলিক অধিকারের মধ্যে জ্বালানি জড়িত। রাষ্টীয়ভাবে নীতি না থাকলে অধিকার লংঘিত হবে। নাগরিকরা চুপ থাকলে ব্যবসায়ীরা দখলে নিবে। নাগরিকদের কথা বলতে হবে। সত্যিকার অর্থে জ্বালানিতে জনগনের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি