বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং- সানেমের জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে যে প্রণোদনার অর্থ পেতে ঘুষ চাওয়ায় সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে দেশের মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। পূর্ববর্তী সময়ে যারা প্রণোদনার অর্থ পায়নি তাদের মধ্যে ২৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা প্যাকেজ পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। এদের মধ্যে মাত্র ২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আসতে সক্ষম হয়েছে।
কোভিড-১৯ মহামারি প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের আস্থা ও প্রত্যাশার ওপর সানেম পরিচালিত জরিপের ষষ্ঠ পর্যায়ের ফলাফল বুধবার এক ওয়েবিনারে উপস্থাপন করা হয়। সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান জরিপের ফলাফলগুলো তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, করোনা মহামারির সময়ে বাংলাদেশের শিল্প ও সেবা খাতের পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পেতে গত বছরের জুলাই থেকে সানেম ধারাবাহিকভাবে তিন মাস অন্তর অন্তর জরিপ পরিচালনা করছে। এবারের জরিপে উৎপাদন খাতের ২৫৫টি এবং সেবা খাতের ২৪৫টি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে গত ১০ থেকে ২৭ অক্টোবর ফোনালাপের মাধ্যমে জরিপটি পরিচালিত হয়।
আস্থা জরিপে দেখা যায়, চামড়া শিল্প ও রিয়েল এস্টেট খাত পিছিয়ে রয়েছে। একইসঙ্গে রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান ব্যবসায় অবস্থা যেসব প্রতিষ্ঠান রপ্তানি করে না তাদের তুলনায় ভালো লক্ষ্য রাখছে। ঢাকাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোও তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে। ষষ্ঠ পর্যায়ের জরিপের অংশগ্রহণকারীদের মাঝে ব্যবসায় আস্থা সূচকের মানের উন্নয়ন দেখা যায়। ৫ম পর্যায়ের জরিপে মাত্র ৯ শতাংশ শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের কথা বললেও ৬ষ্ঠ পর্যায়ে তা বেড়ে ২১ শতাংশ হয়েছে। অপরদিকে মাঝারি পুনরুদ্ধার ২৭ শতাংশ থেকে ৫২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এক্ষেত্রে বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোই তুলনামূলক কম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। প্রণোদনা প্যাকেজগুলো গ্রহণ না করার কারণ হিসেবে উদ্বেগজনকভাবে ঘুষের বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়। এ ক্ষেত্রেও ঘুষ চাওয়ায় সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান আর্থিক ক্ষতি সামাল দেওয়ার জন্য ব্যক্তিগত সঞ্চয়ের উপর নির্ভর করেছেন, ৪১ শতাংশ ধার নিয়েছেন, ১৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা প্যাকেজের আশ্রয় নিয়েছেন, ১৪ শতাংশ কর্মী ছাটাই করেছেন, ১৩ শতাংশ কর্মীদের বেতন কমিয়ে দিয়েছেন।
অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, ব্যবসায় আস্থা সংক্রান্ত ষষ্ঠ পর্যায়ের জরিপটি পরিচালিত হয়েছিলো সাম্প্রতিক জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পূর্ববর্তী সময়ে। সে কারণে তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব নিরূপণ করা সম্ভব হবে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামের উপর প্রভাব ফেলবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উপর চাপ বৃদ্ধি করতে পারে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি না করে এ খাতে প্রণোদনা দেওয়া যেতো। বর্ধিত মূল্যের ওপর ভর্তুকি দিলে এর সুফল সর্বস্তরের জনগণের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হতো। সরকার করোনা মহামারির শুরুর দিক হতে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার মাধ্যমে বিভিন্ন শিল্পকে যেভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করেছে ও সক্ষমতার জানান দিয়েছে, সেভাবে এই জ্বালানি তেলের ওপর প্রণোদনাও অসম্ভব ছিল না। এই মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির যে শঙ্কা রয়েছে তা মানিয়ে নিয়ে কিভাবে তারা ব্যবসা পরিচালনা করেন তা দেখবার বিষয়। অপরদিকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে গ্যাসচালিত যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।