- জয়পুরহাট সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অশোক ঠাকুর বলেন, দু’ এক জন অসাধু ঠিকাদারের জন্য সরকারের উন্নয়ন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। কৃষকদের ক্ষতি করে মাটি কাটার বিষয়টি আমি উর্দ্ধতন সকলকে জানাবো
- জয়পুরহাট সদর উপজেলা এলজিইডি’র উপজেলা প্রকৌশলী মোবারক হোসেন বলেন, কৃষকের ক্ষতি করে মাটি কাটার বিধান নেই, মাটি সরবরাহের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া আছে। সেই অর্থ দিয়ে ঠিকাদার অন্য জায়গা থেকে মাটি আনতে পারেন। আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নিব।
মোঃখোকন হোসেন জাকির, জয়পুরহাট থেকে: জয়পুরহাটে রাস্তা বর্ধিত ও সংস্কারের জন্য এক ঠিকাদার জোর করে কৃষকদের তিন ফসলি জমির টপসয়েল কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে আগামী কয়েক বছর ওইসব জমিতে ফসল হবে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যাবস্থাপনায় মাটি সরবরাহের নিয়ম থাকলেও, তা না মেনেই প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তার দু পাশের বিভিন্ন স্থানে কৃষকদের ফসলি জমি নষ্ট করে এস্কেভেটর দিয়ে অবৈধ ভাবে মাটি কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরূদ্ধে। এদিকে ঠিকাদারের প্রতিনিধিরা বলছেন অফিসের নিয়ম অনুযায়ি মাটি কাটা হচ্ছে । অন্যদিকে এলজিইডির কর্মকর্তারা বলছেন মাটি সরবরাহের টাকার চুক্তি আছে, ফসলী জমির ক্ষতি করে মাটি কাটা যাবে না । অবৈধ ভাবে মাটি কাটায় ক্ষোভ জানিয়ে ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন কৃষকরা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
সরেজমিনে জানা যায়, এলজিইডির ব্যাবস্থাপনায় জয়পুরহাট সদর উপজেলার দূর্গাদহ থেকে হরিপুরের প্রায় ৬ কিলোমিটার রাস্তা ২ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা ব্যায়ে রাস্তা বর্ধিত, সংস্কার ও কার্পেটিং কাজ করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইথেন এন্টার প্রাইজ। এ কাজের মাটি সরবরাহের জন্য ৭ লক্ষ ৮৩ হাজার ৭৭৭ টাকা চুক্তি আছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে। কিন্তুু চুক্তির নিয়ম উপেক্ষা করে স্থানীয় কৃষকদের না জানিয়ে ফসলি জমি থেকে অবৈধ ভাবে জোরপূর্বক রাস্তার দু পাশের বিভিন্ন স্থান থেকে এস্কেভেটর (ভেকো) দিয়ে ৫ থেকে ৮ ফিট সরু, গভীর ও চওড়া করে প্রায় ৩ কিলোমিটার বিভিন্ন ফসলি জমির মাটি কেটে রাস্তা বর্ধিত করছেন ঠিকাদাররা। স্থানীয় সহজ সরল গ্রামের কৃষকরা জমির মাটি কাটতে বাধা দিলে কোনো কিছুই তোয়াক্কা না করে উল্টো হুমকি দিচ্ছেন এমন অভিযোগ কৃষকদের। ক্ষতিপূরণের দাবী জানান কৃষক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
স্থানীয় কৃষক মোঃ বাবু, রফিকুর ইসলাম, সেলিনা বেগম, তরিকুল ইসলাম, হারুনুর রশিদ সহ অনেক কৃষক বলেন, আমাদেরকে না জানিয়ে রাস্তার দুপাশে আমাদের জমি থেকে ইচ্ছামতো আলু , সরিষা, কলারগাছ, নতুন লাগানো ধান নষ্ট করে ভেকো মেশিন দিয়ে ৫ থেকে ৮ ফিট সরু, গভীর ও চওড়া করে মাটি কেটে রাস্তার দুপাশে দিচ্ছে। আমরা বাধা দিলে ঠিকাদারের লোকজন বলে সরকারি কাজে বাধা দিলে তোমাদের সমস্যা হবে এবং নানা রকম হুমকি দেয়। আমরা গ্রামের মানুষ এতকিছু বুঝিনা আমরা মনে করতেছি এগুলো সরকার মাটি কাটতেছে। এখন আমরা শুনতেছি এগুলো মাটি সরকার নয় ঠিকাদার কাটতেছে। আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে আমরা ক্ষতি পুরণ চাই।
ঠিকাদারের এস্কেভেটর ড্রাইভার জয়নাল আবেদিন বলেন, ঠিকাদারের ম্যানেজার যা বলে আমরা তাই করি, আমরা ত কামলা। যেখানে দেখে দিচ্ছে সেখানেই মাটি কাটি।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার নুর আলম সিদ্দিক সাংবাদিককে দেখে অসৌজন্য মূলক আচরণ করে বলেন, আপনাদের এখানে কী ? নিউজ করবেন, করেন। রুলস রেজুলেশনের বাইরে কোনো মাটি কাটা হয়নি। রুলস অনুযায়ি মাটি কাটা হচ্ছে। অফিসের অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেন।
ভাদ্সা ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় ইউপি সদস্য রেজাউল করিম লিটন বলেন, আমার কাছে শতাধিক কৃষক অভিযোগ করার পর আমি মাটি কাটতে বাধা দিতে গিয়েছিলাম, কিন্তু ঠিকাদারের লোকজন আমার কথা শোনেনি, তারা বলেন, এলজিইডিতে যোগাযোগ করেন।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অশোক ঠাকুর বলেন, দু’ এক জন অসাধু ঠিকাদারের জন্য সরকারের উন্নয়ন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। কৃষকদের ক্ষতি করে মাটি কাটার বিষয়টি আমি উর্দ্ধতন সকলকে জানাবো এবং মাসিক সমন্বয় মিটিংয়ে বিষয়টি উত্থাপন করে ঠিকাদারের শাস্তি জানাবো। কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য আমি জোর দাবী জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে ইথেন এন্টার প্রাইজের স্বত্তাধিকারি ইকবাল শাহরিয়ার রাসেলের বক্তব্য নেওয়ার জন্য মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ব্যাস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন।
এ রাস্তার কাজের দায়িত্বে থাকা এলজিইডির (সদর) উপ সহকারি প্রকোশলী নেওয়াজ শরিফ বলেন, তারা কোথা থেকে মাটি নিবে বা সাইড থেকে মাটি নিবে সেই অনুমতি আমরা দেই নাই। ওনারা নিজ দায়িত্বে মাটি নিয়ে আসবে। জমি ওয়ালারা ডিমান্ড করলে টাকা দিতে হবে।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা এলজিইডি’র উপজেলা প্রকৌশলী মোবারক হোসেন বলেন, কৃষকের ক্ষতি করে মাটি কাটার বিধান নেই, মাটি সরবরাহের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া আছে। সেই অর্থ দিয়ে ঠিকাদার অন্য জায়গা থেকে মাটি আনতে পারেন। আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নিব।