খোকন হোসেন জাকির, জয়পুরহাট থেকে: সাম্প্রতিক বর্ষণে জয়পুরহাটে মাঠের পর মাঠ আলু ক্ষেত সর্বনাশ হয়ে গেছে। কেবল আলু নয়, ক্ষতি হয়েছে গম এবং সরিষারও। কৃষকরা বলেছেন গত দু’যুগে কখনু এভাবে অকাল বর্ষণে ক্ষতি হয়নি।
পানিতে সয়লাব হয়ে আছে গম, আলু, সরিষার ক্ষেত। পানির নিচে থাকা পঁচে যাওয়া আলু তুলতে তুলতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সদর উপজেলার পাচুরচকের গৃহবধূ নিলুফা বেগম বললেন, ‘আলু পঁচে শেষ, সরিষার ক্ষেতও শেষ, আমরা
এখন কী করবো, কিভাবে কিস্তি শোধ দেবো, ধারের টাকা শোধ করবো?’
কেবল নিলুফা বেগম নয়, এলাকার সব কৃষকের একই সংকটের সম্মুখীন। সুদমুক্ত কৃষিঋণ হয়তো তাদের জন্য কিছুটা সহায় হতে পারে এ পরিস্থিতিতে।
গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ভারি বর্ষণ ও দমকা হাওয়ায় জয়পুরহাটে আলু ও অন্যন্য ফসলের ক্ষতি
হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মিরা বলেছেন যে পরিস্থিতি তারা মনিটরিং করছেন। ক্ষেতের পানি সরানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে কৃষকদের। পনির নিচে থেকে তোলা আলুর দাম নেই। তাতে কৃষকদের দুর্দশার শেষ নেই।
আলু উৎপাদনের দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা জয়পুহাট। এখানকার আলু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে
যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। অকাল বৃষ্টিতে পাঁচ উপজেলার ৭১৫০ হেক্টর আলু, ৫৪০০ হেক্টর সরিষা, ৬০ হেক্টর গম সহ অন্যান্য ফসলের জমিতে পানি জমে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে অনুমান করেছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।
সদর উপজেলার কোমর গ্রামের আলম হোসেন বিজনেস২৪ কে বলেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আলু লাগিয়েছি। অসময়ে টানা বৃষ্টিতে আলু পঁচে শেষ। যে আলু পাওয়া গেছে সেগুলোর দাম নেই, আমরা কিস্তি দিবো কিভাবে।
পাচুরচকের রবি ইসলাম মন্ডল বলেন, আলু লাগানোর জন্য দোকান থেকে সার, কীটনাশক বাকিতে নিয়েছি তা কিভাবে পরিশোধ করবো?
একই গ্রামের আব্দুল হামিদ বলেন, ‘পানির মধ্যে থেকে হাচড়ে হাচড়ে আলু তুলে বেচতে যাচ্ছি দাম নাই,
আমাদের অনেক ক্ষতি। ‘
পাচুরচকের মতিউর রহমান বলেন, জীবনে এরকম ক্ষতি দেখিনি, পানিতে ডুবে গেছে আমার আলু ও শরিষার ক্ষেত, আমরা এখন কী ভাবে সংসার চালাবো। ধারের টাকা কি ভাবে পরিশোধ করবো। সরকার তো আমাদের সাহায্য করে না। সরকার আমাদের কৃষকদের সাহায্য করে বাঁচাক।
সদর উপজেলার বাইপাস চারমাথার আলু ব্যাবসায়ী আব্দুল মুমিন বিজনেস২৪ কে বলেন, কৃষকের
আহাজারির কথা কে শোনে? সংবাদিকেরা ছবি তুলে নিয়ে যায় আর নিউজ করে, কৃষকের কী লাভ তাতে?
আলুর বর্তমান বাজার প্রকার ভেদে ১৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা মণ ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম বিজনেস২৪ কে বলেন,
৭১৫০ হেক্টর জমির আলু, ৫৪০০ হেক্টর জমির শরিষা ও ৬০ হেক্টর জমির গম বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।
কৃষকদেরকে জমি থেকে পানি সেচে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা ও ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা সম্পসারণ কর্মকর্তারা নিয়মিত মনিটরিং করছেন।