প্রেসক্রিপশনে উপশমের কথা লেখেন চিকিৎসক। সেই প্রেসক্রিপশনকে সম্বল করেই আলোর দিশা দেখেন রোগী ও রোগীর পরিবার। সাধারণত এমনটাই হয়ে থাকে। কিন্তু পশ্চিম বঙ্গের ঢাকুরিয়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে ঘটল উলট পুরাণ। প্রেসক্রিপশনে চিকিৎসা বা ওষুধ নয়, চিকিৎসক লিখলেন প্রত্যাখ্যান! লিখিত নির্দেশ দিলেন, তাঁকে দেখানোর জন্য যে ফিজ় দিয়েছেন রোগী, তা রোগীকে ফেরত দিয়ে দেওয়ার জন্য! ৬৮ বছরের বৃদ্ধ রোগী ও তাঁর পরিবার রীতিমতো স্তম্ভিত এই ঘটনায়!
রোগী পরিবার সূত্রের খবর, প্রবীণ রমেন্দ্রনারায়ণ দত্ত তাঁর চাকরিজীবনে অবসর নেওয়ার পর থেকেই কিডনির অসুখে ভুগছেন। এক সময়ে ডায়ালিসিস শুরু হয় তাঁর। গত সাড়ে তিন বছরে প্রায় ৫০০ বার ডায়ালিসিস করানো হয়েছে তাঁকে। এর মধ্যে পায়ের একটি শিরায় (ভারকিজ় ভেন) বাসা বেঁধেছে আর এক যন্ত্রণা। এভাবেই চলছিল। ঢাকুরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
বুধবার চিকিৎসকের দেওয়া সময় অনুযায়ীই ডায়ালিসিসের জন্য মেয়ের সঙ্গে হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন রমেন্দ্রবাবু। অন্য এক চিকিৎসক ডায়ালিসিসের সময়ও জানিয়ে দেন। কিন্তু অভিযোগ, অনেকক্ষণ বসে থাকার পরেও চিকিৎসক এসে পৌঁছননি। এদিকে বসে থাকতে থাকতে পায়ের যন্ত্রণা বাড়তে থাকে রমেন্দ্রবাবুর।
রমেন্দ্রবাবুর মেয়ে স্নেহার দাবি, প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরে তাঁর বাবা যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়লে হাসপাতালের কর্মীদের কাছে তিনি জানতে চান, এত দেরি কেন হচ্ছে? তাঁর বাবা যন্ত্রণায় ভুগছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, “ডাক্তারবাবুকে ফোন করুন। বাবার এর পরে ডায়ালিসিস আছে। আরও দেরি হলে সমস্যা হবে।”
কর্মীরা তাঁদের আরও কিছুক্ষণ বসতে বলেন বলে জানিয়েছেন স্নেহা। এর পরে অভিযুক্ত চিকিৎসক অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় আসেন। অভিযোগ, বৃদ্ধ রোগী রমেন্দ্রবাবুকে ডেকে তিনি প্রেসক্রিপশনে লেখেন, “এই রোগীকে টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হোক, কারণ যে সময়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট হয়েছিল, তা অনেক দেরি হয়ে গেছে। এই রোগীকে যেন ভবিষ্যতে আর কখনও কোনও অ্যাপয়েন্টমেন্ট না দেওয়া হয়।”
দেখুন সেই প্রেসক্রিপশনের ছবি।
বৃদ্ধ রমেন্দ্রবাবু ও তাঁর মেয়ে স্নেহার অভিযোগ, ভাল করে কিছু বুঝে ওঠার আগেই রোগীকে রীতিমতো বের করে দেন চিকিৎসক। কোনও চিকিৎসক কি এভাবে কোনও রোগীকে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন, প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
কিন্তু কী এমন হল, যার জন্য এত কঠোর প্রতিক্রিয়া দিলেন চিকিৎসক?
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত চিকিৎসক অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমি অপমানিত বোধ করেছি। আমায় খারাপ কথা বলা হয়েছে। মানসিক ভাবে আঘাত পেয়েছি। তাই এর পরে আমার পক্ষে সঠিক চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয় বলেই সেটা স্পষ্ট করে লিখে জানিয় দিয়েছি।”
ওই চিকিৎসক আরও দাবি করেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, এই অপমানের কারণে এবং আঘাত পাওয়ার কারণে তিনি রোগীকে নাও দেখতে পারেন। আইন নাকি তেমনটাই রয়েছে।
তবে খোদ চিকিৎসক মহলই বলছে, প্রেসক্রিপশনে চিকিৎসার নির্দেশ বা ওষুধের নাম না লিখে রোগীকে প্রত্যাখ্যান করার লিখিত বয়ান এক কথায় নজিরবিহীন।