Home First Lead টেকনাফ স্থলবন্দরের সাবেক কর্মী নুরুল ইসলাম গ্রেপ্তার

টেকনাফ স্থলবন্দরের সাবেক কর্মী নুরুল ইসলাম গ্রেপ্তার

নুরুল ইসলাম

অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের মূল্য ৪৬০ কোটি টাকা

নামে বেনামে ৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

ঢাকা: কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরের সাবেক চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার অপারেটর নুরুল ইসলামকে (৪১) আটক করা হয়েছে।

জাল টাকা, বিদেশি মুদ্রা ও মাদকসহ রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে তাকে আটক করা হয়েছে বলে মঙ্গলবার এক ব্রিফিংয়ে র‌্যাব জানিয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে একটি গোয়েন্দা সংস্থা ও র‌্যাবের যৌথ অভিযানে সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযানে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকার জালনোট, ৩ লাখ ৮০ হাজার মিয়ানমার মুদ্রা, ৪ হাজার ৪০০ পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট এবং নগদ ২ লাখ ১ হাজার ১৬০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নুরুল ইসলাম জানান, তিনি ২০০১ সালে টেকনাফ স্থলবন্দরে চুক্তিভিত্তিক দৈনিক ১৩০ টাকা হারে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি নেন। বন্দরে কর্মরত থাকাকালীন নিজের অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে চোরাকারবারী, শুল্ক ফাঁকি, অবৈধ পণ্য খালাস, দালালি ইত্যাদির কৌশল রপ্ত করেন তিনি।

নিজের অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে নুরুল ইসলাম বন্দরে বিভিন্ন রকম দালালি সিন্ডিকেটে যুক্ত হন। একপর্যায়ে একটি দালালি সিন্ডিকেট তৈরি করেন। ২০০৯ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন।

নুরুল ইসলাম নিজেই আস্থাভাজন একজনকে ওক্ত কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু নিজে দালালি সিন্ডিকেটটির নিয়ন্ত্রণ রেখে দেন। এভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, গ্রেপ্তারকৃত নুরুল টেকনাফ বন্দর কেন্দ্রিক দালালি সিন্ডিকেটের অন্যতম মূলহোতা। তার সিন্ডিকেটে ১০-১৫ জন সদস্য রয়েছেন যারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে দালালি কার্যক্রমগুলো করে থাকেন।

এই সিন্ডিকেটটি পণ্য খালাস, পরিবহন সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পথিমধ্যে অবৈধ মালামাল খালাসে সক্রিয় ছিল। সিন্ডিকেটের সহায়তায় পার্শ্ববর্তী দেশ হতে কাঠ, শুঁটকি, আচার, মাছ ইত্যাদির আড়ালে অবৈধ পণ্য নিয়ে আসা হতো।

চক্রটির সদস্যরা টেকনাফ বন্দর, ট্রাক স্ট্যান্ড, বন্দর লেবার ও জাহাজের আগমন-বহির্গমন নিয়ন্ত্রণ করত। গ্রেপ্তারকৃত নুরুল ইসলামের সঙ্গে চিহ্নিত মাদক কারবারীদের যোগসাজশ ছিল বলে তিনি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান।

এছাড়া তিনি অন্যান্য অবৈধ পণ্যের কারবারের জন্য হুন্ডি সিন্ডিকেটের সঙ্গে সমন্বয় এবং চতুরতার সঙ্গে আন্ডার ও ওভার ইনভয়েজ কারসাজি করতেন। অবৈধ আয়ের উৎসকে ধামাচাপা দিতে তিনি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন।

এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এমএস আল নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজ, এমএস মিফতাউল এন্টারপ্রাইজ, এমএস আলকা এন্টারপ্রাইজ, আলকা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড এবং এমএস কানিজ এন্টারপ্রাইজ অন্যতম।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ইতোমধ্যে ঢাকা শহরে নুরুল ইসলাম ৬টি বাড়ি ও ১৩টি প্লট ক্রয় করেছেন। এছাড়া সাভার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, ভোলাসহ বিভিন্ন জায়গায় নামে/বেনামে সর্বমোট ৩৭টি জায়গা/প্লট/বাগানবাড়ি/বাড়ি রয়েছে তার।

এতে বলা হয়, নুরুল ইসলামের অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের আনুমানিক মূল্য ৪৬০ কোটি টাকা। তার নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ১৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। বর্তমানে তিনি জাহাজ শিল্প ও ঢাকার সন্নিকটে বিনোদন পার্কে বিনিয়োগ করছেন বলে জানা গেছে। নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়।