‘২০১৯ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকখাত এবং বস্ত্র কারখানাগুলো থেকে ৫৭৭,০০০ টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়েছিলো। আর এই বর্জ্যরে মধ্যে প্রায় অর্ধেকই (২৫০,০০০ টন) ছিলো সম্পূর্নরূপে তুলার বর্জ্য। সে হিসেবে বাংলাদেশের কারখানাগুলো রিসাইক্লিং বাজারে উল্লেখিত তুলার বর্জ্য ১০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যে বিক্রি করতে পারতো।’
গ্লোবাল ফ্যাশন এজেন্ডা এর নেতৃত্বে গৃহীত সার্কুলার ফ্যাশন পার্টনারশীপ শীর্ষক প্রকল্পটি সাম্প্রতিক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষন করে বলেছে যে ফ্যাশন কোম্পানিগুলোর জন্য বাংলাদেশে সার্কুলার সিস্টেম বাস্তবায়নের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। বিশ্লেষন অনুযায়ী, বাংলাদেশে টেক্সটাইলখাতে যে বর্জ্য উৎপাদন হয়, রিসাইক্লিং বাজারে তার আর্থিক মূল্য ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক।
১৬ জুন ২০২১ সার্কুলার ফ্যাশন পার্টনারশীপ প্রকল্পটি বিশিষ্ট নীতিনির্ধারক এবং ফ্যাশন ইন্ডাষ্ট্রি নির্বাহীদের নিয়ে এক অনলাইন ইভেন্ট এর আয়োজন করে বাংলাদেশের উপর পরিচালিত গবেষনাটি প্রকাশ করে। এতে মূল বক্তব্য প্রদান করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম, এমপি।
ডেনমার্কে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত এম, আল্লামা সিদ্দিকী, বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি স্ট্রাপ পিটারসেন , বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, গ্লোবাল ফ্যাশন এজেন্ডার সিইও ফেডরিকা মারচিওনি), রিভার রিসোর্সেস এর হেড অব রিসাইক্লিং ও প্রধান প্রকল্প কর্মকর্তা নিন ক্যাসল আলোচনায় অংশ নেন। সার্কুলার ইন্ডাষ্ট্রী’তে উত্তোরণের পথে প্রতিবন্ধকতাসমূহ ও সম্ভাবনা এবং বাংলাদেশ কিভাবে বিশ্বে সার্কুলার ফ্যাশনে নেতৃত্ব দিতে পারে, সে বিষয়ে তারা মতবিনিময় করেন।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান তার বক্তব্যে বলেন এই গ্রহের অস্তিত্ব আজ ঝুঁকির মুখে পড়েছে। আমরা এ অবস্থায় বসে থাকতে পারি না। আমাদেরকে অবশ্যই অবস্থান পরিবর্তন করে ফ্যাশন সার্কুলার এর লীনিয়ার ইকোনোমিক মডেলে যেতে হবে। এটাই আমাদের ভবিষ্যত এবং এ ব্যাপারে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ।
উল্লেখ্য যে, সার্কুলার ফ্যাশন পার্টনারশীপ প্রকল্প পরিচালিত সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকখাত এবং বস্ত্র কারখানাগুলো থেকে ৫৭৭,০০০ টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়েছিলো। আর এই বর্জ্যরে মধ্যে প্রায় অর্ধেকই (২৫০,০০০ টন) ছিলো সম্পূর্নরূপে তুলার বর্জ্য। সে হিসেবে বাংলাদেশের কারখানাগুলো রিসাইক্লিং বাজারে উল্লেখিত তুলার বর্জ্য ১০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যে বিক্রি করতে পারতো।
সার্কুলার ফ্যাশন পার্টনারশীপ প্রকল্পের গবেষনা অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশ টেক্সটাইল ফাইবার আমদানির উপর অত্যধিক নির্ভরশীল। ২০১৯ সালে দেশে ১.৬৩ মিলিয়ন টন স্ট্যাপল কটন ফাইবার (৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যে) আমদানি হয়েছিলো। এই পরিসংখ্যান এর উপর ভিত্তি করে সার্কুলার ফ্যাশন পার্টনারশীপ প্রকল্প বলেছে শতভাগ তুলার বর্জ্য দেশের ভিতরেই রিসাইকেল করে বাংলাদেশ প্রায় ১৫% তুলা আমদানি হ্রাস করতে পারে। আর এভাবে দেশ অর্ধ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করতে পারে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গ্লোবাল ফ্যাশন এজেন্ডা এর নেতৃত্বে গৃহীত সার্কুলার ফ্যাশন পার্টনারশীপ একটি ক্রস-সেক্টরিয়াল প্রকল্প এবং এতে অংশীদার হিসেবে যুক্ত রয়েছে রিভার্স রিসোর্সেস ও বিজিএমইএ। প্রকল্পে পিফোরজি (চ৪এ) সমর্থন দিচ্ছে। ২০২০ সালের নভেম্বরে প্রকল্প উদ্বোধনের পর থেকে এ পর্যন্ত ৫০ এরও অধিক ব্র্যান্ড,
ম্যানুফ্যাকচারার, রিসাইকেলার এবং এনজিও প্রকল্পে অংশগ্রহনের জন্য স্বাক্ষর করেছে। ফ্যাশন কোম্পানিগুলোর মধ্যে সর্বশেষ বেনেটন, ফ্যাশন কিউব, জিমহার্ক, কিবি, নেক্সট, প্রাইমার্ক এবং দি ভেরি গ্রুপ প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে।
পার্টনারশীপ প্রকল্পটি উৎপাদন পরবর্তী ফ্যাশন বর্জ্যকে পুনরায় নতুন উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশনা দানের মাধ্যমে বাংলাদেশের রিসাইক্লিং ইন্ডাষ্ট্রিকে সহায়তা করছে। অধিকন্তু, প্রকল্পটি কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে রপ্তানিতব্য তৈরি পোশাক পণ্যের যে ডেডস্টক হয়েছে, সেগুলো সমাধানে বাংলাদেশে বস্ত্র এবং পোশাক প্রস্তুতকারক, রিসাইকেলারস এবং ফ্যাশন ব্র্যান্ডদের মধ্যে সহযোগিতার যোগসূত্র স্থাপন করে দিচ্ছে।-সংবাদ বিজ্ঞপ্তি