বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের উপদেষ্টা রানা সানাউল্লাহ ভারতের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ এনে বলেছেন, ‘ট্রেন ছিনতািই ঘটনার পিছনে হাত রয়েছে ভারতের। আফগানিস্তানের মাধ্যমে ভারত এই হামলা পরিচালনা করেছে।’
তাহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) এবং বালুচ বিদ্রোহীদের মধ্যে যোগসাজশের বিষয়ে বলতে গিয়ে রানা সানাউল্লাহ দাবি করেন, ‘এই কর্মকাণ্ড যে ভারত করেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আফগানিস্তানে বালুচ বিদ্রোহীরা নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে।’
পাকিস্তানের একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বিস্ফোরক দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘ভারত আফগানিস্তানে বসে ষড়যন্ত্র করছে। পাকিস্তানের শত্রুরা যে আফগানিস্তানে যথেষ্ট সক্রিয় সে ব্যাপারে আর সন্দেহ নেই। এটা কোনও রাজনৈতিক বিষয় বা এজেন্ডার অংশ নয়, এটা ষড়যন্ত্র।’ আরও এক ধাপ এগিয়ে রানা সানাউল্লাহ বলেন, ‘তাহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) এবং বালুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) উভয়কেই সমর্থন করে যাচ্ছে ভারত।
শুধু ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ নয়, এদিনের সাক্ষাৎকারে পাক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা আফগানিস্তানকে রীতিমত হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, ‘ স্পষ্ট ভাষায় আমরা আফগান সরকারকে বলেছি এই ধরনের কার্যকলাপ বন্ধ করতে। তালিবান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে এই ধরনের ঘটনা এতটাও মাথাচাড়া দেয়নি। তবে তালিবান আমলে আফগানিস্তানে পাকিস্তান বিরোধী কার্যকলাপ বেড়েই চলেছে। তালিবান সরকার যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে পাকিস্তান নিজেই ব্যবস্থা নেবে।’
ট্রেন হাইজ্যাক কাণ্ডে প্রতি মুহূর্তেই দাবি পালটা দাবি উঠে আসছে দুই তরফে। একদিকে বিদ্রোহীদের উপর কব্জা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছে পাক সেনা তো অন্য দিকে সেনার সেই দাবি নস্যাৎ করে পণবন্দিদের হত্যা করার দাবি করছে বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি।
বুধবার সন্ধ্যায় ট্রেন হাইজ্যাকের ঘটনায় সব জিম্মিকে উদ্ধার করা গেছে বলে দাবি করে পাকিস্তান। একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এক পাক সেনাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ৩৪৬ জন পণবন্দিকে উদ্ধার করা হয়েছে, উদ্ধার অপারেশন চালানোর সময় ৩০ জন বালুচ বিদ্রোহীর মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে ২৮ জন পাক সেনাকর্মীকেও বিদ্রোহীরা হত্যা করেছে বলে সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে। এই সেনাকর্মীরা প্রত্যেকেই ওই ট্রেনেরই যাত্রী ছিলেন।
এই দাবির পালটা বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মির তরফে জানানো হয়েছে, পাকিস্তান সরকার তাদের প্রস্তাব না মেনে সেনা অভিযান চালিয়ে যাওয়ায় জাফর এক্সপ্রেসের পণবন্দিদের মধ্যে ৫০ জনকে খুন করা হয়েছে। বুধবার রাতে বিদ্রোহীদের তরফে জানানো হয়েছে, তাদের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে আর ২০ ঘন্টা বাকি রয়েছে। যদি এই সময়ের মধ্যে সরকার তাদের দাবি না মেনে নেয় তাহলে বাকি পণবন্দীদেরও হত্যা করা হবে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বালুচিস্তানের কোয়েট্টা থেকে ট্রেনটি খাইবার পাখতুনখোয়ার পেশোয়ারে যাচ্ছিল জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনটি। লাইনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গুলি চালিয়ে ট্রেনটি হাইজ্যাক করা হয়। তখন ট্রেনটিতে ৪৫০ জনের মতো যাত্রী ছিল। শুরুতেই বেশ কিছু সাধারণ নাগরিক, মহিলা ও শিশুদের মুক্তি দিয়েছে জঙ্গিরা। এই ঘটনার দায় স্বীকার করে সঙ্গে সঙ্গেই বিবৃতি দেয় বালুচ লিবারেশন আর্মি। বেলুচিস্তানের স্বাধীনতাকামী এই সংগঠনটি জানায়, তাঁরা চায় পাকিস্তানের জেলে আটক বালুচ নেতাদের মুক্তি দিক সরকার। না হলে প্রত্যেক পণবন্দীকে হত্যা করা হবে।