ঠাকুরগাঁও থেকে মোঃসোহেল রানা: আশানুরূপ ফলন ও দাম না পাওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে আদি ফসল কাউন, যব ও ঢেমসি। এক সময় ব্যাপকভাবে আবাদ হয়েছিল এ জেলায় । এখন আর ওই সব ফসল চাষের প্রতি কৃষকের আগ্রহ তেমন নেই। হাতে গোনা কয়েকজন কৃষক করছেন কাউন, যবের চাষ। তবে ঢেমসির আবাদ ঠাকুরগাঁওয়ে বিলুপ্তপ্রায়।
কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা যায়, কাউন জৈষ্ঠ্য মাসে উঠে। যব উঠে গমের মৌসুমে। আর শীতের শেষে চাষ হয় ঢেমসির। সব ধরণের জমিতে চাষ করা হয় এসব ফসল। কৃষি অধিদপ্তরের মতে জনা যায় জেলায় মোট ২ হেক্টর জমিতে কাউনের আবাদ হয়েছে। আরো জানা যায়, জেলার হাট-বাজার গুলোতে এখনও প্রতিকেজি কাউনের চাল বিক্রি হচ্ছে ১শ থেকে ১২০ টাকা দরে। ভোজন বিলাসীরা পায়েস, পিঠা ও নাড়ু তৈরির জন্য কিনছেন এই দানাদার খাদ্যশস্য। যবের ছাতু বিক্রি হচ্ছে প্রায় ২শ টাকা কেজি দরে। এর ব্যাপক চাহিদা লক্ষ্য করা যায়।
সদর উপজেলার আখানগর ইউনিয়নের আরাজি পাহাড়ভাঙ্গা গ্রামের কৃষক সোহরাব জানান, কাউন, যব ও ঢেমসির আবাদ করেছিলেন তিনি। ওই সব আদি ফসলের আবাদ থেকে তিনি সরে এসেছেন। এখন তিনি ধান, পাট, আখ, ভুট্টা, গম ও সবজির চাষ করছেন। সময় মত আখের মুল্য না পাওয়ায় আখ চাষও তিনি ছেড়ে দিয়েছেন।শুধুমাত্র নিজের নাম খাওয়ার জন্য ৪ কাঠা মাটিতে তিনি এই কাউন আবাদ করেন।
সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের কুড়ালীপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল জব্বার জানান, কৃষিতে এখন খরচ বেশি। একদিকে বৈরী আবহাওয়া, অন্যদিকে শ্রমিকের মজুরি বেশি । তার উপর কৃষি উপকরণের মুল্য দিন দিন বাড়ছে। তাই কৃষক লাভজনক ফসল চাষে ঝুকছেন বেশি।আমি মোট দেড় বিঘা জমিতে মরিচ চাষের পাশাপাশি রিলে কাউন চাষ করেছি।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন বলেন, ‘কৃষির আধুনিকীকরণ ও উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের ফলে লাভজনক শস্য উৎপাদন করছে কৃষকেরা । তবে কাউন, যব ও ঢেমসি চাষের গুরুত্ব স্বীকার করে বলেন, কাউন চাষে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। আদি ফসল গুলো খরাসহিঞ্চু, রোগবালাই ও কীটপতঙ্গমুক্ত। কাউনের চালের ভাত, পায়েস, পিঠা ও নাড়ু খেতে সু-স্বাদু। যবের ছাতু ও ঢেমসির চালের ভাত-খৈ পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ।’ এ জাতীয় ফসলের বৈচিত্র ধরে রাখতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।