Home স্বাস্থ্য এই শীতেও নিয়ন্ত্রণে থাকুক সুগার

এই শীতেও নিয়ন্ত্রণে থাকুক সুগার

শীতকাল যতই আরামদায়ক হোক না কেন, এই মরশুেম ডায়াবিটিকরা বেশ ভয়ে ভয়ে থাকেন। এই মরশুমে ইনফেকশন, ফ্লু প্রভৃতি সাধারণ ঘটনা। আর এইসব সাধারণ রোগ থেকেই রক্তে শর্করার মাত্রায় পরিবর্তন হতে পারে । তাই নিয়মিত সুগার চেক করানো থেকে ব্যালেন্সেড ডায়েট মেনে চলা এবং শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা একান্ত জরুরি।

লিখেছেন এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ডাঃ অরুন্ধতী দাশগুপ্ত 

 শীতকালে শর্করার মাত্রায় প্রভাব পড়ার কারণ

 ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ঠান্ডা তাপমাত্রার কারণে শরীরে স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ হয়, যা ইনসুলিন প্রতিরোধ বাড়ায়। সেইসঙ্গে যাঁদের টাইপ-২ ডায়াবিটিস রয়েছে তঁfদের রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়। অর্থা‌ৎ শীতকালে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়তে পারে।

শরীরচর্চার অভাব অনেকেই শীতের সকালে হাঁটা এড়িয়ে চলেন। ফলে শারীরিক সক্রিয়তা কমে যায়। এই যে শরীরচর্চার অভাব এটা রক্তে শর্করার মাত্রায় প্রভাব ফেলে, এমনকি ওজনও বাড়তে পারে।

খাবারে পরিবর্তন  শীতে অনেকে উচ্চ মাত্রার ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার বেশি খান। এই জাতীয় খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে।

সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি এই মরশুমে ঠান্ডা লাগা, ফ্লু এবং শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ স্বাভাবিক ঘটনা। এরফলে ডায়াবিটিস মোকাবিলা করা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়। কারণ, এই ধরনের সংক্রমণে শরীরে আরও চাপ পড়ে। ইনসুলিন সেনসিভিটি কমে যায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ে।

দৈনন্দিন রুটিনে পরিবর্তন যেহেতু শীতের সকাল অনেকেরই দেরিতে শুরু হয় তাই রোজকার সময়সূচিও পিছোতে থাকে। আর যদি ছুটি থাকে তাহলে তো কথাই নেই! বিশেষ করে খাওয়াদাওয়া করতে বেশ দেরি হয়ে যায়, যা রক্তে শর্করার মাত্রায় প্রভাব ফেলে।

 ডায়াবিটিকরা শীতে যা করবেন

রক্তচাপ মাপান ঠান্ডা আবহাওয়ায় রক্তচাপ বাড়তে পারে। আর এটা যদি খুব বেশি হয় তাহলে তা শরীরের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে। এর ফলে আপনার হাত-পায়ে রক্তসঞ্চালন কমে যেতে পারে। যদি আপনার ডায়াবিটিস সংক্রান্ত জটিলতা যেমন হৃদরোগ বা স্নায়ু ব্যথা (নিউরোপ্যাথি) থাকে তাহলে এই মরশুম আপনাকে হয়রান করতে পারে।

পায়ের দিকে লক্ষ রাখুন কারও ডায়াবিটিস রয়েছে মানেই তাঁর পায়ে গুরুতর সমস্যা হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। প্রতিদিন জুতো-মোজা খুলতে ভুলবেন না। নিয়মিত পায়ের দিকে লক্ষ রাখুন এবং কোনও প্রকার সমস্যা দেখলে এড়িয়ে যাবেন না। নিউরোপ্যাথি যেমন আপনাকে তাপমাত্রা পরিবর্তনের প্রতি অসংবেদনশীল করে তোলে, তেমনই গ্যাংগ্রিন জাতীয় সমস্যার প্রতি অতিসংবেদনশীল করে তোলে। মনে রাখবেন পায়ের পাতা ও আঙুলে কাটাছেঁড়া ও আঘাত সারতে সময় লাগে। তাই নিয়মিত পায়ের দিকে লক্ষ রাখুন। আর জুতোটিও যাতে পায়ে ঠিকঠাক ফিট হয় সেদিকেও লক্ষ রাখুন।

আপনার যদি নিউরোপ্যাথি থাকে তাহলে একটু বেশি সজাগ থাকুন, বিেশষ করে যদি গরম জলের বোতল, বৈদ্যুতিক কম্বল বা হিটার ব্যবহার করেন। কারণ রোগীর যদি পায়ে কোনও অনুভবই না থাকে তাহলে তিনি গরম জলের বোতল বা হিটার থেকে গরম লাগলেও বুঝবেন না। ফলে ছ্যাঁকা খেতে পারেন। তাই গরম জলের বোতল ব্যবহার করলে তােত যেন শুধু গরম জল থাকে, কোনও ফোটানো জল নয় এবং বোতলটি অবশ্যই যেন একটা কাপড় দিয়ে জড়ানো থাকে। শোওয়ার আগে বিছানা থেকে গরম জলের বোতলটি সরিয়ে ফেলুন। একইভাবে বৈদ্যুতিক কম্বলের সুইচটিও শোওয়ার আগে বন্ধ করে দিন।

নজর রাখুন ত্বকে ঠান্ডা আবহাওয়ার সঙ্গেই আসে শুকনো বাতাস। এছাড়া ঘরে বা গাড়ির হিটার থেকেও ত্বক শুকনো হতে পারে। সেইসঙ্গে চুলকানি হলে ত্বক ফেটে যেতে পারে, যা থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। তাই ত্বক ও পা – উভয় দিকে লক্ষ রাখুন। কোনওরকম সমস্যা দেখলে সত্বর চিকিৎসা করাবেদে

শর্করার মাত্রা চেক করান এই মরশুমে শর্করার মাত্রার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন। তবে সুগার মাপতে গিয়ে ঠান্ডার জন্য আঙুল থেকে রক্ত বের করতে সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে সুগার মাপার আগে আঙুল উষ্ণ রাখতে গরম চায়ের কাপে হাত রাখুন বা গ্লাভস পরুন।

শরীরচর্চা  শীতের সকালে বা সন্ধ্যায় বাইরে হাঁটতে যেতে না চাইলেও শরীরচর্চা বাদ দেওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে ঘরেই যোগ থেকে স্ট্রেচিং, নাচ করতে পারেন। ট্রেডমিল থাকলে সেখানেও ঘাম ঝরিয়ে নিন কিংবা অ্যারোবিক ওয়ার্কআউট করুন। মোদ্দা কথা, বেিশরভাগ দিন অন্তত ৩০ মিনিট আপনাকে শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকতেই হবে।

মরশুমি অসুস্থতা থেকে সুরক্ষিত থাকুন শীতকালজুড়ে ইনফেকশন যেমন ফ্লু বা ঠান্ডা লাগা এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি সাধারণ ঘটনা। তাছাড়া অসুস্থতার কারণেও রক্তে যথাযথ শর্করার মাত্রা বজায় রাখা খানিক কঠিন হতে পারে। তবে সংক্রমণ প্রতিরোধে যা করতে পারেন –

ভ্যাকসিন নিন যাঁদের ডায়াবিটিস রয়েছে তঁাদের নিজেদের নানা অসুখবিসুখ থেকে সুরক্ষিত রাখতে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত। ফ্লু ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ কার্যকর হতে কমপক্ষে দু’সপ্তাহ প্রয়োজন। তাই অক্টোবরের শেষে এই ভ্যাকসিন নিলে ভালো হয়। পরে নিলে সেটা জানুয়ারি এবং তার পরবর্তীতে কাজে লাগবে।

স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখুন বারেবারে হাত ধোবেন। যত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবেন তত নানা রোগ থেকে দূরে থাকবেন।

বিশ্রাম নিন এবং হাইড্রেটেড থাকুন যদি শরীর খারাপ লাগে তাহলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। হাইড্রেটেড থাকবেন এবং সুগার চেক করাতে ভুলবেন না।

উষ্ণ থাকুন, কিন্তু খুব উষ্ণ নয় আপনার হাত, পা ও মাথা উষ্ণ রাখুন। তবে অতিিরক্ত হিট এড়িয়ে চলুন, নয়তো অস্বস্তি বা ডিহাইড্রেশন হতে পারে।

 কী খাবেন এবং খাবেন না

  • রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখতে ব্যালেন্সড ও স্বাস্থ্যকর ডায়েট ফলো করুন।
  • শীতকালে প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনিযুক্ত পানীয় এবং উচ্চ ফ্যাটসমৃদ্ধ দুধের তৈরি খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • সবুজ শাকসবজি, ওটস, ব্রাউন রাইস খেতে পারেন।
  • খাদ্যতালিকায় রাখুন চর্বিহীন প্রোটিন যেমন, মুরগির মাংস, টার্কি, মাছ, ডাল, বিনস প্রভৃতি।
  • রান্নায় অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন।
  • ডাল ও সবজি সহযোগে তৈরি স্বাস্থ্যকর সুপ শীতের দারুণ খাবার।
  • ফলের মধ্যে কমলালেবু খেতে পারেন, তবে পরিমিত মাত্রায়। তাই বলে কমলার রস খাবেন না।