Home স্বাস্থ্য ডায়াবেটিসের বড় কারণ অলস জীবনযাপন ও ভুল খাদ্যাভ্যাস

ডায়াবেটিসের বড় কারণ অলস জীবনযাপন ও ভুল খাদ্যাভ্যাস

রুবাইয়া জুঁই: বর্তমানে  ডায়াবেটিস একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে আমাদের অলস জীবনযাপন এবং ভুল খাদ্যাভ্যাসই সবচেয়ে বড় কারণ।

‘হু’ এর মতে, ডায়াবেটিস ২ প্রকার। একধরনের ডায়াবেটিস উত্তরাধিকারসূত্রে হতে পারে এবং আর একধরনের ডায়াবেটিস হয় ভুল অভ্যাস, অনুপযুক্ত খাদ্য এবং আমাদের ভুল জীবনযাত্রার কারণে হয়। তবে প্রথম প্রকার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়না কিন্তু দ্বিতীয় প্রকার ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা যায়। যেকোনো রোগ নিরাময়ের জন্য রোগের কারণ খুঁজে বের করা খুবই জরুরি। আমাদের জীবনযাত্রায় এমন অনেক অভ্যাস রয়েছে যার কারণে আমরা এই রোগে আক্রান্ত হই। ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে হলে আজই পরিত্যাগ করুন এই অভ্যাসগুলো-

সকালের জলখাবার না খাওয়া

সকালের হালকা জলখাবার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সকালের জলখাবার না খেলে ডায়াবেটিসের শিকার হতে পারেন। সকালের জলখাবারের সময় না থাকলে কিছু ফলও খেতে পারেন। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে পুষ্টিকর খাবার দিয়ে দিন শুরু করা ভালো।

অনেকক্ষণ বসে থাকা

দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার ফলেও ডায়াবেটিস হতে পারে। কম্পিউটারে কাজ করার সময় দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা, সোফায় কাজ করা আপনার স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। অনেক গবেষণায় এটি দেখা গেছে যে ৩০ মিনিটের বেশি বসে থাকলে ডায়াবেটিস সহ শরীরে অনেক সমস্যা হয়। আপনি যদি কোনও বসে থাকা কাজ করেন তবে আপনার মাঝে বিরতি নেওয়া উচিত। এই কারণেই আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন (ADA) সুপারিশ করে যে প্রত্যেকে, এমনকি যাদের ডায়াবেটিস নেই, তারা প্রতি ৩০ মিনিটে কাজ থেকে উঠে হাটাচলা করে ঘুরে বেড়ান।

দেরিতে ঘুমানো

গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকার অভ্যাস শরীরে নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। রাতে ভালো ঘুম সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। যারা গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করেন তাদের মধ্যে ডায়াবেটিসের সমস্যা বেশি দেখা যায়। দেরি করে ঘুমালে শরীরের মেটাবলিজম প্রভাবিত হয়। ঘুমের অভাব ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। ডায়াবেটোলজিয়াতে প্রকাশিত ২০২০ সালের একটি গবেষণায়, গবেষকরা প্রায় ৯ লক্ষ মানুষের ডিএনএ অধ্যয়ন করেছেন এবং দেখেছেন যে অনিদ্রায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা ১৭ শতাংশ বেশি। ঘুমের অভাবে হরমোনের ভারসাম্যও নষ্ট হয়।

প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং মাংস খাওয়া এড়িয়ে চলুন

আজকাল আমাদের খাওয়ার ধরন সম্পূর্ণ বদলে গেছে। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এমন অনেক খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ শুরু করছি যা ভবিষ্যতে আমাদের অনেক রোগের কারণ হতে পারে। এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ১৫ শতাংশ বেড়ে যায়। রেড মিট খেলেও ডায়াবেটিস হয়, তাই এই ধরনের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

স্মোকিন ড্রিংক

আপনি যদি একজন ধূমপায়ী হন তবে আপনার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশি। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) অনুসারে, অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি। ডায়াবেটিস ছাড়াও ধূমপান এবং অ্যালকোহল সেবনের ফলে হৃদরোগ এবং উচ্চ কোলেস্টেরলের মতো রোগও হয়। ধূমপান রক্তের কোষকে প্রভাবিত করে এবং রক্তনালীগুলিকে সংকুচিত করে, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।

মিষ্টি খাবার

ডায়াবেটিসের সমস্যা এড়াতে চাইলে চিনি ও মিষ্টি জাতীয় জিনিস থেকে দূরে থাকতে হবে। চিনি ডায়াবেটিসের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক উপাদান। আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে তবে কম কার্বোহাইড্রেট যুক্ত চিনিমুক্ত খাবার খান। ডায়াবেটিস রোগীরা ডার্ক চকলেট খেতে পারেন কারণ এতে অন্যান্য চকলেটের তুলনায় অনেক কম চিনি থাকে।

পানি পান

পানি আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। সাধারণত ৫-৬ লিটার  পান করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। পানি অনেক রোগ নিরাময় করে। গবেষকরা দেখেছেন যে যারা কম পানি পান করেন তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। লিভার এবং কিডনিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল না থাকার কারণে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়তে শুরু করে। পানি খাওয়ার পরিমাণ বাড়ালে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যায়।

দেরিতে রাতের খাওয়ার গ্রহণ

কাজের চাপে ঠিক সময়ে খাবার খাওয়া হয়ে ওঠেনা অনেকেরই, দিনের বেলা সঠিক সময় খাওয়া হলেও রাতে তা অনেক সময়েই হয়না।
রাতে দেরি করে খেলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। গভীর রাতে খাওয়া, রাতের খাবারের পরে উচ্চ কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে এবং ডায়াবেটিস হতে পারে। দিনে তিনবার সুষম, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং গভীর রাতে কিছু খাওয়া এড়িয়ে চলুন।