Home First Lead ডেমু :চরম ভোগান্তিতেও খুশি যাত্রীরা

ডেমু :চরম ভোগান্তিতেও খুশি যাত্রীরা



* ২ ঘন্টায় দোহাজারী, ভাড়া ২৫ টাকা

নাজমুল হোসেন/ ইব্রাহিম জুলহাজ

চট্টগ্রাম: ডেমু ট্রেন- দ্রুত গতির রেলগাড়ি। কম খরচে, কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর জুড়ি নেই এই ট্রেনের। চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে চলাচলের জন্য দুই জোড়া ডেমু ট্রেন উদ্বোধন করা হয় ৬ ফেব্রুয়ারি। চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী যাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২ ঘন্টায়, তাও আবার ২৫ টাকায়।

কমিউটার ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে  ১৫০ জন যাত্রী নিয়ে দোহাজারীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। বৃহস্পতিবার ( ৫মার্চ )  সরেজমিনে এ ট্রেন ভ্রমণে দেখা দেখা গেছে, যাত্রা শুরুর ১০ মিনিট পর ষোলশহর স্টেশনে পৌঁছাতেই শত শত যাত্রী হুমড়ি খেয়ে পড়ে ট্রেনটিতে ওঠার জন্য। যে যেভাবে পারছে ট্রেনে উঠছে। ১৫০ জন থেকে যাত্রী হয়ে যায় ৫শ’। পরের স্টেশনে থামার পর আর তিল ধারনের জায়গা নেই। প্রতিটি বগিতে ৯০ জন করে ২৭০ জনের যাতায়াতের কথা থাকলেও এর প্রায় ৩ গুণ মানুষ নিয়ে দোহাজারীর দিকে ছুটতে শুরু করে। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে ট্রেনটিতে যেনো দাঁড়ানো দায় হয়ে যায়। প্রত্যকে বগিতে ৫টি করে ফ্যান থাকলেও তার মধ্যে কয়েকটি নষ্ট। গরমে ছোট শিশুদের কষ্ট ছিল প্রচুর। ট্রেনটিতে টয়েলটও নেই। তা মহিলা ও বয়স্কদের জন্য সমস্যার।  

ষোলশহর স্টেশনে পৌঁছাতেই ওঠার জন্য এভাবে প্রাণপণ চেষ্টা।

তবে, এসব ভোগান্তির পরও খুশি এ রুটে চলাচলকারি যাত্রীরা। তারা বলেন, ডেমু ট্রেনে কম খরচে, কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যাচ্ছে। আগে লোকাল ট্রেনে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা সময় লাগতো। বর্তমানে ২ ঘন্টায় পৌঁছাতে পারছি। তাছাড়া খুব দ্রুত যায় এ কমিউটার ট্রেনটি।

চট্টগ্রামের রেলস্টেশন থেকে প্রায়ই দোহাজারী যায় সবুজ। কিন্তু বৃহস্পতিবার প্রথম ডেমু ট্রেনে করে তিনি দোহাজারী গেছেন। বললেন, ডেমু ট্রেন উদ্বোধনের পর আজকেই প্রথম উঠেছি। মাত্র ২ ঘন্টায় দোহাজারী পৌঁছে যেতে পারছি। ভাড়াও কম লাগে। ভাবি নাই এতো অল্প সময়ে বাড়ি যেতে পারবো। সকালে এসে শহরের কাজ শেষ করে আবার বিকালের ট্রেনেই বাড়ি ফিরতে পারবো এই ডেমু ট্রেনের মাধ্যমে।

দোহাজারীতে বসবাসরত গৃহকর্মী সাথী নাথ আগে শহরের আসতো বাসে চড়ে। কিন্তু গেল কয়েকদিন ধরে এই ট্রেনে করেই যাতাযত করছেন। তিনি বলেন, বাসে যেতে বেশি টাকা খরচ হয়, সময় লাগে বেশি। বাচ্চাকে নিয়ে বাসে চলাচল করতেও কষ্ট লাগে। কিন্তু ডেমু ট্রেনে অল্প সময়ে নিরাপদে বাড়ি চলে যেতে পারছি। বাসে গেলে ১২০ টাকা লাগে আর ডেমুতে ২৫ টাকা দিয়ে বাড়ি আসতে পাড়ি।

অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে কোনো দুর্ভোগ হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুর্ভোগের থেকেও বড় বিষয় কম সময়ে বাড়ি যেতে পারছি এটাই। তাছাডা ডেমু ট্রেনে চড়তে বাচ্চারাও অনেক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

বেঙ্গুরা স্টেশন থেকে উঠা কলেজ ছাত্র মিজানুর জানান, ডেমু ট্রেন অনেক দ্রুত চলে। মাত্র ৫ টাকা দিয়ে দোহাজারী চলে যেতে পারি। আগে লোকাল ট্রেনটিতে যেতে সময় লাগতো বেশি।

চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে দুই জোড়া ডেমু ট্রেন চলাচল করছে। চট্টগ্রাম থেকে ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে যাই এবং দোহাজারী গিয়ে পৌঁছাই সকাল ৭ টা ৩০ মিনিটে। দোহাজারী থেকে চট্টগ্রামের দিকে রওয়ানা দিই সকাল ৭ টা ৪০ মিনিটে এবং সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে পৌঁছাই। ট্রেনটির বিরতি স্টেশন হলো খালমোহনা, ধলঘাট, বেঙ্গুরা, পটিয়া, গোমদন্ডী, জানালীহাট, ষোলশহর, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক। আবার সন্ধ্যা ৫টা ২০ মিনিটে ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে রওয়ানা দিয়ে দোহাজারী পৌঁছায় সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে। দোহাজারী থেকে ৭টা ৪০ মিনিটে চট্টগ্রামের দিকে ছুটে এবং এসে পৌঁছয়ে রাত ৯ টা ৪০ মিনিটে। শুক্রবার বন্ধ থাকে।

এই রুটে এতদিন মাত্র একটি লোকাল ট্রেন চলাচল করতো। যা পৌঁছাতে সময় লাগতো ডেমু ট্রেনের দ্বিগুণ ।

 যাত্রীসেবার মান বাড়াতে চীন থেকে ৬৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ সেট ডেমু (ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট) ট্রেন কেনা হয়েছিল ২০১৩ সালে।

জানা যায়, ডেমু ট্রেনের দুই দিকে দুটি ইঞ্জিন এবং মাঝখানে একটি বগি। বগির পাশাপাশি ইঞ্জিনেও যাত্রী বহন করা যায়। অর্থাৎ, দুই ইঞ্জিন এবং এক বগি নিয়েই এক সেট ডেমু। সব মিলিয়ে এক সেট ডেমুতে বসে ১২৯ জন এবং দাঁড়িয়ে ১৪১ জন যাত্রী যাতায়াত করতে পারে। এর বেশি যাত্রী উঠলেই ডেমু অকেজো হয়ে যায়।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা স্নেহাশীষ দাশগুপ্ত  বলেন, চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে যে ডেমু ট্রেন উদ্বোধন করা হয়েছে, সেগুলো ঢাকা থেকে আনা। এই রুটে প্রথম দিকে যাত্রী কম পেলেও আস্তে আস্তে যাত্রী বাড়ছে। কম দূরত্বের চলাচলের জন্য ডেমু ট্রেন ঠিক আছে।

যাত্রী দুর্ভোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আগে এই রুটে মাত্র একটা ট্রেন ছিলো এখন ২ টি ট্রেন চলে। যাত্রীরা ২টি ট্রেনে ভাগ করে গেলে হয়ে যায়।