Home Third Lead প্রদেশ রাখার প্রস্তাবে ‘না’ ড. তোফায়েলের

প্রদেশ রাখার প্রস্তাবে ‘না’ ড. তোফায়েলের

ড. তোফায়েল আহমদ

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘আমরা প্রদেশ করার পক্ষে না, জেলা পরিষদ বিলুপ্ত করা যাবে না। সেটিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। জেলা পরিষদ এখনকার মতো করে থাকবে থাকবে না। সেখানে জন অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে।’

বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে স্থানীয় সরকার সংস্কার নিয়ে গঠিত কমিটির সঙ্গে ‘গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও জন-আকাঙ্খার আলোকে স্থানীয় সরকার’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন এই স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ। গভর্নেন্স এডভোকেসি ফোরাম ও ইউএনডিপি যৌথভাবে এ সংলাপের আয়োজন করে।

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান আরও বলেন, ‘নিম্ন আদালত থাকবে উপজেলা পর্যন্ত যাবে। এটা বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবেও রয়েছে। ফলে এটা গণদাবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এর মাঝমাঝি একটা কোর্ট থাকবে। বিচার বিভাগ উপজেলা পর্যন্ত এবং সেখানে ফৌজদারি ও দেওয়ানী মামলাগুলো আমলে নেওয়া হবে।’

গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও জন-আকাঙ্খার আলোকে স্থানীয় সরকার শীর্ষক জাতীয় সংলাপ। ছবি সংগৃহীত

দেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে তার নেতৃত্বে গঠিত সংস্কার কমিশন ২১০টি সংস্কার প্রস্তাব দেবে বলে বক্তব্যে তুলে ধরেন তিনি। এছাড়াও বক্তব্যে দেশের স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নানা সংকট তুলে ধরেন।

ড. তোফায়েল বলেন, ‘স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা অনেক সময় অনিয়মে জড়ান। তার চেয়ারম্যান বা মেম্বার একটা লাইসেন্স থাকে, সেটা দিয়ে বালু, পাথর খেয়ে ফেলেন তিনি। স্থানীয় সরকারে সংকটের প্রথম কারণ দুর্নীতি, যে যেখানে আছে, সেখানে দুর্নীতি করছে। এগুলো থামাতে হবে। তরুণ এবং শিক্ষিতদের নির্বাচিত করতে হবে।’

বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিভাগীয় পর্যায়ের সংলাপ থেকে পাওয়া সমস্যাগুলোর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, ক্ষমতার অতিকেন্দ্রীকরণ, আর্থিক সীমাবদ্ধতা, স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার অভাব ও দুর্নীতি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং জেন্ডার ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তির সীমিত সুযোগের বিষয়গুলো উঠে এসেছে।

সংকটের সমাধান হিসেবে গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরামের সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও দায়িত্ব বিভাজন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সকল স্তরে সরাসরি ও নির্দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজন এবং কর-রাজস্ব ব্যবস্থার স্থানীয়করণ রয়েছে।

পাশাপাশি স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত, স্থানীয় উন্নয়নের সকল স্তরে জনঅংশগ্রহণ ও তৃণমূল মানুষের অন্তর্ভুক্তি, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাবও তুলে ধরা হয় সংলাপ থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাবের আলোকে। গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরাম স্থানীয় পর্যায়ের জনগণের দাবি তুলে ধরতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ৫০টির অধিক নাগরিক সংগঠনের মতামত গ্রহণ করে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনায় পাঁচটি সংলাপ আয়োজন করা হয়।

চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সময়ে এ আয়োজিত এ সংলাপগুলোয় প্রায় চার শতাধিক অংশগ্রহণকারী তাদের মতামত ও সুপারিশ উপস্থাপন করেন, যা জাতীয় সংলাপের সংস্কার প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত করে সংগঠনটি। এসব সংলাপে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিক, পাশাপাশি জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, প্রতিবন্ধকতা ও সম্প্রদায়গতভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ৭৭ জন প্রতিনিধিও ছিলেন। এর মধ্যে দলিত সম্প্রদায়, সমতল ও পাহাড়ের আদিবাসী, হিজড়া ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গ, চা বাগান শ্রমিকরা ছিলেন।

সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক কানিজ ফাতেমা এবং গভর্নেন্স এডভোকেসি ফোরামের ফ্যাসিলিটেটর অনিরুদ্ধ রায়। গভর্নেন্স এডভোকেসি ফোরামের সমন্বয়কারী মহসিন আলীর সভাপতিত্বে সংলাপে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম, আনোয়ারুল হক এবং আমানুর রহমান।