এডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান: ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের বৈষম্য বিরোধী ঐতিহাসিক ছাত্রগণ আন্দোলনের এক অভূতপূর্ব সাফল্য জাতির কাছে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেশের অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদে অধিষ্ঠিত করে দেয়। পুরো জাতি আজ তাঁর নেতৃত্বের প্রতি গভীর আস্থা স্থাপন করেছে। তিনি ছাত্র জনতার আশা আকাক্সক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের দীর্ঘ দুঃশাসন-শোষণ, নির্যাতন, গুম-খুন-হত্যা, দেশ ও জনগণের সম্পদ লুন্ঠন, অর্থপাচার সহ নানা অপরাধের বিচার এখন গণ দাবীতে পরিণত হয়েছে। মানুষ ন্যায় এবং সাম্যভিত্তিক একটি রাষ্ট্র পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছে।বিশ্ব যাঁকে দেখলে দাঁড়িয়ে যায় আজ তিনি আমাদের প্রধান উপদেষ্টা । তিনি দারিদ্র বিমোচনের প্রবক্তা এবং দরিদ্র মুক্ত বিশ্ব গড়তে সামাজিক ব্যবসাতত্ত্বের উপস্থাপক । ৫ই আগষ্ঠ ২০২৪ সালে নব্য স্বাধীন স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশের অন্তর্বতীকালীন সরকার প্রধান হিসেবে তাঁর কাছে স্বাধীনতা প্রিয় এ জাতির আশা আকাক্সক্ষার শেষ নাই। ইতিমধ্যে তিনি প্রয়োজনীয় প্রতিটি ক্ষেত্রে সংস্কার সংশোধনের লক্ষ্যে গঠন করেছেন ০৬টি সংস্কার কমিশন । নির্বাচন ব্যবস্থা, সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন ও দুনীতি আইন শৃঙ্খলা সংস্কারে স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে । আশা রাখি যুক্তি সঙ্গত সময়ে তিনি এসব সংস্কারে সফল হবেন । কমিশনগুলোকে তিন মাস সময় রিপোর্টের জন্য বেঁধে দেয়া হয়েছে । তবে এ মুহূর্তে আইন শৃংখলাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে । নচেৎ সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিঘিœত হবে । ধ্বংস হবে সমস্ত অর্জন ।
ড. ইউনূসের প্রতি জাতির প্রত্যাশার মূল লক্ষ্য হলো একটি দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন ও স্বর্নিভর বাংলাদেশ গড়া। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে, তা আজ ড. ইউনুসের নেতৃত্বে পূর্ণতা পেতে চলেছে। জাতি তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সবাই তাঁর নেতৃত্বে একটি সুখী, সমৃদ্ধ এবং বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে। নোবেল বিজয়ী এ মানুষটির নাম এখন উচ্চারিত হয় শ্রদ্ধায়, প্রজ্ঞা এবং গভীর ভালোবাসায় ।
বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থী ও ছাত্র জনতার আত্মত্যাগ, জীবন ও রক্তের বিনিময়ে দেশে সকল নির্যাতন, হয়রানি, অপমান ও হয়রানির অবসান হয়েছে । ঠিক কিন্তু দীর্ঘ সময় রাষ্ট্রযন্ত্রে চেপে থাকা স্বৈরাচারের ভূত রাষ্ট্রযন্ত্রকে নানাভাবে অকার্যকর করতে উঁইপোকার অস্থিত্বের মতো কাজ করছে । প্রফেসর ড. ইউনূস আজ দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের লক্ষ্যে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব লাভে আমরা দেশবাসী অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা আশাবাদী তিনি ব্যর্থ হবেন না । সফল হবেন ।
প্রথমতঃ জনমতের সঠিক প্রতিফলনে ধ্বংস হয়ে যাওয়া নির্বাচন ব্যবস্থা পূর্ণগঠন সবচেয়ে জরুরী কাজ । এজন্যে সার্বিক জরুরী সংস্কার খুবই গুরুত্বপূর্ণ । এ সংস্কার কাজের জন্য তাঁকে প্রয়োজনীয় সময় ও সহযোগিতা দিতে হবে । তবে এ সময় দীর্ঘ মেয়াদী হলে তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে । তৃতীয় শক্তির উত্থান হতে পারে । পরিবেশ সৃষ্টির জন্যে সকল দুর্নীতিবাজ, খুন, গুম, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটেরাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে । নইলে তাদের হাতে থাকা অঢেল অর্থ সম্পদ রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যর্থ করার কাজে ব্যবহৃত হবে । ন্যায় বিচারের স্বার্থে এসব দ্রুত করতে হবে । চিহ্নিত অপরাধীরা সকলের চোখে ফাঁকি কিভাবে দেশ ত্যাগ করে ?
আমরা তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বৈষম্যমুক্ত সুখী বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের সাথে আছি, পুরো জাতিও তার সাথে থাকবে ইনশাআল্লাহ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারেক রহমানও বলেছেন, অন্তর্বতীকালীন সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমানও একইভাবে বলেছেন, বহু শহীদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত করতে তাঁর দল ইউনুস সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাবে । একই ঘোষণা গণঅভ্যুথানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র জনতারও ।
দ্বিতীয়তঃ ২(দুই) মাসের কম সময়ের মধ্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ড. ইউনূসের প্রথম সফলতা হলো, গুমের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সনদে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম স্বাক্ষরকারী। এই সনদে স্বাক্ষর করার ফলে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় বাহিনী দ্বারা পরিচালিত গুম-খুন বন্ধ হয়ে গেছে। এটি একটি বড়ো সফলতা। আমরা সবাই ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটি সুখী, সমৃদ্ধ এবং বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি। এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে রাষ্ট্রের অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক সংস্কার আনতে হবে । সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রয়োজন জবাব দিহিতামূলক স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। বিগত সময়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার বহু মানুষ বিচারিক হত্যাকা- ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকার হয়ে জীবন দিয়েছে । এমন মেরুদন্ডহীন পদলেহী বশংবদ বিচার ব্যবস্থার মূলে কুঠারঘাত করতে হবে । রাষ্ট্রে সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মূল স্তম্ভ হলো স্বাধীন বিচার বিভাগ। এটি নাগরিকদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সুরক্ষিত করে এবং সরকার বা অন্যান্য ক্ষমতাশালীদের অবৈধ হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত রাখে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছাড়া গণতন্ত্রের প্রকৃত রূপ কার্যকর হয় না। বিচার বিভাগের উপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করে নাগরিকদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সুরক্ষিত করা এবং মানবাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হবে ড. ইউনুসের আরেকটি প্রধান দায়িত্ব।
তৃতীয়তঃ বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধে তদন্ত কমিশন গঠন। রাষ্ট্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকারের পরিপন্থী কর্মকান্ড বন্ধ করতে হলে এই কমিশনের বিকল্প নেই। বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিচার নিশ্চিত করতে হলে স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। এমন হত্যাকান্ড বন্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হলে আগামীতে মানবাধিকারের লঙ্ঘন রোধ করা সম্ভব হবে, যা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথকে সুগম করবে।
চতুর্থতঃ দেশের পুলিশকে বানানো হয়েছিল স্বৈরাচারের বশংবদ নির্যাতনের হাতিয়ার, তাদের হাতে তুলে দেয়া হয় খুন, নির্যাতনের ম্যান্ডেট দেয়া হয় অঘোষিত ইনডেমনিটি, মানব হত্যার লাইসেন্স । বলা তো মাছের রাজা ইলিশ, দেশের রাজা পুলিশ’ ।রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ও খুনি ছিল নিত্য নৈমিত্যিক। আয়রা ঘর নামের নির্যাতন সেল পৃথিবীর ইতিহাসে সৃষ্ঠ স্বৈরাচারের নব্য ইতিহাস । স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন। এই কমিশন গঠন করে পুলিশ বাহিনীকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। গণতন্ত্র ও সুশাসনের জন্য পুলিশ কমিশন গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার রক্ষা, এবং স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। দলীয় প্রভাব থেকে মুক্ত থাকলে পুলিশ বাহিনী জনগণের সেবা ও নিরাপত্তায় কার্যকরভাবে ভূমিকা রাখতে পারে, যা সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে পারে।পুলিশের অপরাধের তদন্ত পুলিশ দিয়ে ন্যায়, বিকল্প সংস্থা গড়ে তুলতে হবে । কমিউনিটি পুলিশের মাধ্যমে ট্রাফিক সিস্টেম ও পরিবেশ উন্নয়নে শিক্ষার্থীদের মেধাকে কাজে লাগাতে পার্ট টাইম জব সিস্টেম চালুর করা যায় ।
পঞ্চমতঃ স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশন গঠন। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করণ এবং দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখতে স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশন গঠন অপরিহার্য। এই কমিশন গঠন হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিৎ হবে। গণমাধ্যমের উপর সরাসরি বা পরোক্ষ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে আইন প্রণয়ন করা সময়ের দাবী। সংবাদমাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ বা চাপ প্রয়োগ গণতান্ত্রিক পরিবেশকে ধ্বংস করে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপকারী আইনি কাঠামো সংস্কার করা জরুরি। এটি সংবাদমাধ্যমের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে, কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত থাকবে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা উচিত, যাতে সংবাদমাধ্যম সমাজের সঠিক চিত্র তুলে ধরতে পারে।
ড. মোহাম্মদ ইউনূস সরকারের প্রতি জাতির প্রত্যাশা, সামরিক- বেসামরিক প্রশাসন এবং বিচার বিভাগের, প্রত্যেক স্তরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা অসৎ, দুর্নীতিবাজদের টেনে বের করে তাদের স্থলে সৎ মেধাবী ও দেশ প্রেমিক লোকদের নিয়োগ দেওয়া এবং যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী সম্মানের সাথে কাজ করে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করা। রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা নেতৃত্ব দেবে তারা সৎ হলে নিচের দিকে যারা কাজ করে তাদের অসৎ হওয়ার কোন সুযোগ থাকে না, কারণ বাংলাদেশের মানুষ দুটো জিনিসকে অসম্ভব ভালোবাসে এবং কখনোই হারাতে চায় না, তার মধ্যে একটি হলো প্রাণ অন্যটি চাকরি, এই দুটো হারানোর ভয় থাকলে প্রত্যেকেই একেকজন দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে উঠবে। রাষ্ট্রের সকল পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে এনে অর্থনৈতিক চাকা সচল করতে হবে। যারা রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব দেবেন তারা প্রত্যেকটা কাজের হিসাব জনগণকে দেবেন রাষ্ট্রীয় শ্বেতপত্রের মাধ্যমে। যদিও আয়তন হিসেবে রাষ্ট্রে জনসংখ্যা বেশি এটি মাথায় রেখে বেশি বেশি সংখ্যক দক্ষ/অদক্ষ মানুষ দেশের বাইরে পাঠানোর সহজ ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব রাষ্ট্র দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে তারা কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সে বিষয়ে খোঁজখবর রাখতে হবে, এইক্ষেত্রে তরুণদের মেধা এবং শক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে। এইভাবে চললে একটা সময় জনগণের অভিযোগ ১০% নেমে আসবে আর এই ১০% অভিযোগ গ্রহণ করার জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করলে সাথে সাথে প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে। কোন অন্যায় বা অপরাধ করে থাকলে কোন ধরনের অজুহাত না দেখিয়ে সাথে সাথে পদত্যাগ করতে হবে।
ষষ্ঠতমঃ বেকারত্বের অবসান -এ তাঁর ভূমিকা হোক যুগান্তকারী । ড. ইউনূস ভিক্ষাবৃত্তিকে ঘৃণা করেন । তিনি দানকে অর্থবহ করে তুলেন তা রিসাইক্লিং পদ্ধতির মাধ্যমে। সামাজিক ব্যবসায় দানকৃত অর্থ বহুগুনে বারবার ফিরে আসে আরও বেশি বিনিয়োগ শক্তি নিয়ে । চাকুরী নেব না, চাকুরী দেব’ তার জনপ্রিয় শ্লোগান তরুনদের অনুপ্রনিত করে । পরাজিত সরকার তাঁকে চেয়েছিল কারাগারে পাঠাতে আর জনগণ পাঠালো তাঁকে রাষ্ট্র সংস্কারের দায়িত্বে। তিনি একটি সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার গঠন, অর্থনীতিকে জোরদার করে গড়ে তুলতে যে সংগ্রাম শুরু করেছেন, তা আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। কেননা স্বাধীনতা অর্জন অপেক্ষা তাকে রক্ষা করা আরো কঠিন এবং মহান দায়িত্ব । বিশ্বের নানাস্থানে ছড়িয়ে পড়া রেমিটেন্স ফাইটারদের মর্যাদা আপনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন ।তারা আমাদের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখে।তারপর গুরুত্ব দিতে হবে ধ্বংসপ্রাপ্ত শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারে একটি জাতিকে ধ্বংস করতে হয়।আমাদের উচ্চ শিক্ষা গবেষণা নির্ভর না হয়ে দল নির্ভর হয়ে উঠেছে । শিক্ষক রাজনীতির কুফল মুক্ত শিক্ষাঙ্গন চাই । আর শিক্ষা ব্যবস্থা জাতির ইতিহাস, সভ্যতা, সংস্কৃতি ও আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন থাকা চাই ।
বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্র সংস্কারে তাঁর যুগপৎ ভূমিকার দিকে চেয়ে আছে জাতি । দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ব্যক্তি কেন্দ্রিকতা, পরিবার তন্ত্রের যাঁতাকল থেকে রাষ্ট্রকে উদ্ধার করা সময়ের দাবী । স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মুক্ত করে জাতীয় পুলিশ কমিশন গঠন, বিচার বিভাগকে সংস্কার ও সুপ্রিমকোর্টের নিজস্ব সচিবালয় গঠন, শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন (সংকট উত্তরন), ১৫/১৬ বছরের গুম-খুন-হত্যা, দুর্নীতি সহ সকল মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা ইউনুস সরকারের কাছে জাতির অন্যতম চাওয়া। সর্বপরি একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ জবাবদিহিতা মূলক নির্বাচন কমিশন গঠনপূর্বক গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করা অন্যতম কর্তব্য ।
সামাজিক ব্যবসায় পৃথিবীতে অনন্য বিপ্লব সৃষ্টিকারী, দারিদ্র বিমোচন প্রবক্তা এবং শান্তিতে নোবেল বিজয়ী জাতির গৌরব এতদ্বসঙ্গে ইউনূস বাঙ্গালী জাতির অহংকার । পতিত সরকার না পারলেও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বীর মুক্তিকামী ছাত্রজনতা তাঁকে উপযুক্ত মর্যাদায় ভূষিত করেছে। তিনিও তাঁর সন্তানদের আহ্বান ফিরিয়ে দিতে পারেননি। আমাদের শ্রেষ্ট সন্তানদের যথোপযুক্ত শ্রদ্ধা ও সম্মান দিয়ে বিশ্বের বুকে নিজেকে একটি মর্যাদাবান সম্মানিত জাতি ও মুক্ত চিন্তার দেশ হিসেবে পরিচিত করানোটা বড়ো প্রত্যাশা । যে সব শিক্ষার্থী ও ছাত্র জনতা জীবন বাজি রেখে স্বৈরাচার মুক্ত করেছেন তাদের স্বপ্নকে ভূলুণ্ঠিত হতে দেয়া যায় না ।
এই মুহূর্তে ড. ইউনূসের নেতৃত্বের প্রতি জাতি একটি সমৃদ্ধ এবং শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ প্রতিষ্টার দিকে তাকিয়ে আছে। অগণিত শহীদদের রক্তে ভেজা বাংলাদেশ তাঁর হাত ধরে একটি নতুন দিগন্তে পৌঁছাবে- যেখানে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা পাবে। আজকের দিনে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
- এডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান
আইনবিদ, কলামিষ্ট, সুশাসন ও মানবাধিকার কর্মী।
সদস্য, ইউনুস সুহৃদ ও চিটাগাং স্যোশাল বিজনেস সেন্টার ।