Home First Lead বাংলাদেশে কুঁড়েঘর এখন কবিতায় আছে, বাস্তবে নেই: ড. হাছান মাহমুদ

বাংলাদেশে কুঁড়েঘর এখন কবিতায় আছে, বাস্তবে নেই: ড. হাছান মাহমুদ

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ
যে ছেলে বিদেশে চলে গিয়েছিল, সে দেশে এসে তাঁর নিজের শহর, নিজের গ্রাম চিনতে পারে না।

কলকাতা: আগামী বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদের নির্বাচন (Bangladesh election 2023) হওয়ার কথা। এখন থেকেই সে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। টানা সাড়ে চোদ্দ বছর ক্ষমতায় রয়েছে শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) সরকার। দ্য ওয়াল-এর এক্সিকিউটিভ এডিটর অমল সরকারকে কলকাতায় দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী তথা শাসক দল আওয়ামী লিগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ (Dr. Hasan Mahmud) ব্যাখ্যা করলেন, কেন শেখ হাসিনার সরকারের বিকল্প নেই। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব তিনি যা বললেন—

বাংলাদেশের উন্নয়ন

গত সাড়ে চোদ্দ বছরে বাংলাদেশে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। যে ছেলে বিদেশে চলে গিয়েছিল, সে দেশে এসে তাঁর নিজের শহর, নিজের গ্রাম চিনতে পারে না। আমাদের দেশ থেকে কুঁড়েঘর হারিয়ে গেছে। কবিতায় আছে। কিন্তু বাস্তবে নেই। খালি পায়ে মানুষ দেখা যায় না। ছেঁড়া কাপড় পরা মানুষ দেখা যায় না। মানুষ ভিক্ষা করে না বললেই চলে। পেশাদার ভিক্ষুক আছে। কিন্তু বাধ্য হয়ে যে ভিক্ষা করা, সেটি আসলে নেই বললেই চলে। একদম নেই আমি বলব না।

তাছাড়া, মাথাপিছু আয় ছয়শো ডলার থেকে প্রায় তিন হাজার ডলারে উন্নীত হয়েছে। বাজেটের আকার সাড়ে চোদ্দ বছরে সাড়ে এগারো গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জিডিপির আকার দশ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

Image - ‘বাংলাদেশে কুঁড়েঘর এখন কবিতায় আছে, বাস্তবে নেই’, দাবি হাসিনার মন্ত্রীর

দেশের এই যে পরিবর্তন, এতে প্রতিটি মানুষের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশে এক বছরের বেশি সময়ের আগে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি আমরা। শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পরিষেবার আওতায় এসেছে। গ্রামের মানুষ এসি ব্যবহার করে। গ্রামের মসজিদে, মন্দিরে এসি ব্যবহার হয়। মানুষের জীবনযাত্রার আমুল পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। আমি যদি আমার নির্বাচনী এলাকার কোনও জায়গায় এক বছর পরে যাই তখন সেই এলাকা চিনতে কষ্ট হয়। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এগুলিকেই আমরা ফোকাস করব।

বিএনপির জমানা ও রাজনীতি

বিপরীতে যারা ক্ষমতায় আসতে চায় সেই বিএনপি কী করেছে? তারা যখন ক্ষমতায় ছিল, পর পর পাঁচবার বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। চারবার একত্রিতভাবে। আর একবার আফ্রিকার একটি দেশের সঙ্গে যুগ্মভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অত্যন্ত লজ্জার কথা। তাদের সময় হাওয়া ভবন সৃষ্টি করে সমান্তরাল সরকার চলত। গণভবনে বসতেন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। হাওয়া ভবনে তাঁর পুত্র তারেক জিয়া। সমস্ত ব্যবসা বাণিজ্যের উপর থেকে তারা কর আদায় করত।

জঙ্গি তৎপরতা

বিএনপির সময়ে সমগ্র দেশে জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্য তৈরি হয়েছিল। পাঁচশো জায়গায় বোমা ফাটিয়ে তারা জানান দিয়েছিল তাদের শক্তি। তখন সায়েক শায়খ আবদুর রহমান (জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ বা জেএমবির প্রয়াত নেতা) সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই (প্রয়াত বাংলাদেশি সন্ত্রাসবাদী, যিনি জাগ্রত মুসলিম জনতা, বাংলাদেশ নামে উগ্রপন্থী সংগঠনের নেতা ছিলেন)-তাদের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। যারা প্রকাশ্যে জঙ্গিবাদের পক্ষে মিছিল করত। এ তো গেল বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালের কাহিনি।

বিরোধী দল হিসাবে গত সাড়ে চোদ্দ বছরে রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য, রাজনৈতিক দাবি আদায় করার জন্য বিএনপি জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তারা রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য একশো দিন অবরোধ করেছে। অর্থাৎ মানুষকে একশো দিন অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। তারা বাসে আগুন, স্কুলে আগুন, গাড়িতে আগুন, ঘরবাড়িতে আগুন দেয়। শিশুদের বইপত্র পুড়িয়ে দেয়। আমরা এগুলিকেই ফোকাস করব। আর এই কারণেই মানুষ আমাদের ভোট দেবে।

জিনিসপত্রের দাম

জিনিসপত্রের দাম বিশ্বব্যাপী বেড়েছে। ভারতেও বেড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশ। পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নে মুদ্রাস্ফীতির হার ১০ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে। তুর্কিতে ৮২ শতাংশ। পাকিস্তানে ৩২ শতাংশ। সেখানে আমাদের দেশে আট কী নয় শতাংশ।

আসন্ন নির্বাচন ও ভারতের কাছে প্রত্যাশা

আমাদের নির্বাচন আমাদের বিষয়। আমরা কোনও বিদেশি শক্তির উপর নির্ভরশীল নই। আমরা জনগণের শক্তিতে বলীয়ান। জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি। তবে আঞ্চলিক স্থিতি, শান্তি, সাম্প্রদায়িক যে মেলবন্ধন আছে দু-দেশের মধ্যে আছে, সেগুলিকে অক্ষুন্ন রাখতে হলে আমি মনে করি বাংলাদেশে আওয়ামী লিগের কোনও বিকল্প নেই। আওয়ামী লিগ সরকারের অনেক ভুল আছে, সব সরকারেরই থাকে। দুশো বছর আগে যারা সরকার পরিচালনা করেছে তারাও পুরোপুরি নির্ভুল ছিল, বলা যাবে না। দুশো বছর পর যারা সরকার পরিচালনা করবে তারাও নির্ভুল হবে না শতভাগ।

ভুলগুলি কী, কী

সামান্য ভুল, তবে ভুল থাকলেও আজকে সব কিছু ছাপিয়ে যেটি বাস্তবতা, যা গোটা বিশ্ব স্বীকার করছে, বিশ্ব নেতৃবৃন্দ স্বীকার করছে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেছেন, জাতিসংঘের মহাসচিব, আইএফএম, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টও স্বীকার করেছেন বাংলদেশের উন্নয়নের কথা। কিছুদিন আগে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ওয়াশিংটনে গিয়েছিলেন। আইএমএফের প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে জন্য শেখ হাসিনার কোনও বিকল্প নেই। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, তাঁর সন্তানেরা শেখ হাসিনাকে আইডল মনে করেন।

Image - ‘বাংলাদেশে কুঁড়েঘর এখন কবিতায় আছে, বাস্তবে নেই’, দাবি হাসিনার মন্ত্রীর

আঞ্চলিক উন্নয়ন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষা, জঙ্গিবাদ যাতে মাথাচাড়া না দেয় এবং সংখ্যালঘুদের উপর কেউ যাতে হামলা করতে না পারে পারে সেজন্য বাংলাদেশে আওয়ামী লিগের সরকার জরুরি। এটা ভারতের জনগণও জানেন।

আওয়ামী লিগের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, তোলাবাজির অভিযোগ

তোলাবাজি শব্দটি আমাদের দেশে প্রচলিত নয়। কিছু অভিযোগ ছিল। আমাদের দল এ সবের বিরুদ্ধে। যারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমাদের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এই ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে চলেছেন।

সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা

সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনাগুলি আমরা কঠোরভাব মোকাবিলা করেছি। ঘটনা যা ঘটেছে তার শতভাগ বিএনপি এবং মৌলবাদীদের ইন্ধনে ঘটেছে। বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতায় সাম্প্রদায়িক অপশক্তি সচেষ্ট। কিন্তু প্রতিটি ঘটনায় কঠোর পদক্ষেপ করা হয়েছে।

-দ্য ওয়াল