Home First Lead ‘তাদেরকে ভোট দেবে কে?’

‘তাদেরকে ভোট দেবে কে?’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি সংগৃহীত

বিএনপির কোন ‘সম্ভাবনা’ দেখছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে কারণেই বিএনপি বারবার নির্বাচনকে ‘বিতর্কিত করার চেষ্টা’ করছে বলে অভিযোগ সরকার প্রধানের। তিনি বলেছেন, যেভাবে হোক নির্বাচনটা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা, অর্থাৎ গণতন্ত্রের যে ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে, সেটা নষ্ট করার চেষ্টা করছে বিএনপি।

বিএনপিতে নেতৃত্ব সংকটের পাশাপাশি নির্বাচনে জেতার মতো আত্মবিশ্বাস দলটির নেই বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী।

বিএনপি জনগণের ভাগ্যের কোন উন্নয়ন করতে পারবে না- এমন ইঙ্গিত দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা দল কীভাবে জিতবে, তার নেতৃত্বটা কোথায়? বিএনপির এক নেতা এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী। আরেক নেতা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। এরপরও জনগণ কিসের আশায়, কোন ভরসায় তাদের ভোট দেবে?’

বিএনপির দুই মেয়াদের শাসনামল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামল এবং নিজের চার মেয়াদের তুলনামূলক বর্ণনা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরপরও কারা, কেন, কোন সুখে বিএনপিকে ভোট দেবে? কী কারণে অন্যদের ভোট দেবে?’

জাতিসংঘের ৭৬তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশগ্রহণ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। দুই ঘণ্টা ১৮ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে মোট ১৬টি প্রশ্নের উত্তর দেন সরকার প্রধান। এ সময় মন্ত্রিসভার সদস্য, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, দলের নেতা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

দীর্ঘ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুর্নীতি ও গাসিক নিয়ে কথা বলেছেন।

বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণ কখন ভোট দেয়? মানুষ দেখে ওই দলকে ভোট দিলে ক্ষমতায় কে যাবে। তারা (খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমান) তো ইলেকশনও করতে পারবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। মোবাইল দিয়েছি। ইন্টারনেট দিয়েছি। আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম। করোনার কারণে কিছুটা থমকে গেছি। তবে থেমে যায়নি। জরুরি সবকিছু যতটা সম্ভব চালু রাখার ব্যবস্থা করেছি। এরপরও কেন অন্যদের ভোট দেবে?’

বিএনপির জন্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের জন্মটা কীভাবে? তারা কি কখনও জনগণের দাবি আদায়ে কোন আন্দোলন করেছে? এই দলটি কি কোন নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত? বা এমন কোন নেতৃত্ব যে নেতৃত্ব বাংলাদেশে কোনদিনও জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা নিয়ে আন্দোলন করেছে, সংগ্রাম করেছে বা কিছু করেছে? তা তো না।’

বিএনপিকে ‘অত্যন্ত সুবিধাবাদী’ এবং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাতে তৈরি করা সংগঠন আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা জানে নির্বাচনে তাদের কোন সম্ভাবনা নেই। তারা ক্ষমতায় আসার পর মানুষ কী পেয়েছে? কোন সম্ভাবনা নেই, কোন সুবিধা পাচ্ছে না বলেই নির্বাচন নিয়ে বিএনপির এতো ক্ষোভ।’

বিএনপির সরকারের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির শাসনামলে জঙ্গিবাদ বিস্তার লাভ করেছে, বোমাবাজি হয়েছে, সারাদেশে বোমা হামলা হয়েছে, মানুষের জীবনের নিশ্চয়তা ছিল না। পাকিস্তানিরা যেভাবে ধর্ষণ করতো সেভাবে তাদের ক্ষমতা চলাকালে মানুষকে নির্যাতন করা হয়েছে। মানুষের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। তাদের শাসনামলে পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দেশ।’

বিএনপির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মানুষের ভোট নিয়ে যত কথা। আমরা আধুনিক প্রযুক্তিতে গেলাম। ইভিএমে ভোট হচ্ছে, সেটা নিয়েও প্রশ্ন। এরা যেহেতু সব সময় পরভাতে পালিত এখন সেই জায়গাটা বোধ হয় তাদের আর নেই। এজেন্সিগুলোর যে সুযোগ নিয়ে তাদের তৈরি করা হয়েছিল সেই এজেন্সিগুলো এখন যেহেতু বিএনপি ক্ষমতায় নেই, তাই তাদের নিয়ন্ত্রণও নেই। তারা তাদের সুবিধা পাচ্ছে না। আমরা তো সেভাবে তাদের ব্যবহার করি না। আমরা দেশের রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহার করি। দল ভাঙা, দল গড়া, দল করার জন্য তো ব্যবহার করি না। তারা সুবিধাগুলো পাচ্ছে না বলে হয়তো ক্ষোভ।’

এই অঞ্চলে যারা উন্নয়ন করেছে, সেসব দেশে কয়টি দল আছে

‘বাকশাল’ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে আন্তর্জাতিকভাবে বলা হলো- এখানে দুর্ভিক্ষ হবে, কোটি কোটি মানুষ মারা যাবে, কিন্তু কিছুই হলো না।

তবে ১৯৭৪ সালে ষড়যন্ত্র করে একটি দুর্ভিক্ষ করা হলেও তাতে কোন মানুষ মারা যায়নি।

স্বাধীনতার পর একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে ‘বাকশাল’ গঠন করা হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু এই বাকশালের মাধ্যমেই দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ করেছিলেন। এরপরই ষড়যন্ত্র শুরু হলো। বাকশালের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু হলো।

এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার সমালোচনা করেন। এই অঞ্চলে যারা উন্নতি করেছে বিশেষ করে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে কয়টি দল আছে?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছে। পঁচাত্তর থেকে ৯৬ আর ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ধরেন মানুষ কী পেয়েছে? সেই তুলনাটা করেন আপনারা। তারপরও বিবেচনা করেন। আমার কাছে তো আর ক্ষমতাটা ভোগের বস্তুও না, শুধু ক্ষমতা পাওয়ার জন্য ক্ষমতা না।’

সার্চ কমিটির মাধ্যমেই নতুন নির্বাচন কমিশন
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রপতি ‘সার্চ কমিটি’র মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে এই বিষয়ে উদ্যাগ গ্রহণ করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (গাসিক) মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিতর্কিত মন্তব্য প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উনাকে এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে।’

‘কারও কারও কাছে রিফিউজি পালা একটা ব্যবসা
মায়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হতাশাজনক ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোন কোন সংস্থা রোহিঙ্গাদের শরণার্থী করে রাখতেই বেশি আগ্রহী বলে তার মনে হচ্ছে।

এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মনে হয় রিফিউজি পালাটা একটা ব্যবসা কোন কোন সংস্থার জন্য। রিফিউজি না থাকলে তাদের চাকরিই থাকবে না। এটা হলো আসল কথা।’

এ সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো ভূমিকা ও অব্যাহত সহযোগিতা আশা করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মায়ানমারকে অবশ্যই তার নাগরিকদের প্রত্যাবর্তনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহযোগিতা করতে সদা প্রস্তুত।’

অনেক সংস্থা রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে বরাবারই ভালো সাড়া দিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আবার কিছু সংস্থা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে সেই আগ্রহ দেখায় না। আমার কাছে একটা জিনিস মনে হয়, রিফিউজি থাকলে কিছু লোকের মনে হয় লাভই হয়। অনেক প্রস্তাব আসে রোহিঙ্গাদের জন্য এখানে অনেক কিছু করে দিতে চায়। আমি সোজা বলে দিই, যান মায়ানমারে, ওখানে ঘর করেন, স্কুল করেন, এখানে করা লাগবে না। আমার কাছে যেটা মনে হয়, সব কিছুই যেন একটা ব্যবসা।’

রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে
রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের পরিবেশ ও প্রতিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে, সে কথা জাতিসংঘে তুলে ধরা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেখানে নানা ধরনের অসঙ্গতি চলছে, নারী পাচার, শিশু পাচার, সবচেয়ে বড় ড্রাগ, এই ড্রাগ পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে তারা। যেটা আমাদের জন্য সবচেয়ে আশঙ্কাজনক। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলছি, এটা সেখানে হচ্ছে, আরও হবে, যদি প্রত্যাবাসন না হয়।’

জাতিসংঘের এবারের অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা ও এর স্থায়ী সমাধানের বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘যা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মায়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখবে বলে আমি আশা করি। রোহিঙ্গা সমস্যা মায়ানমারের তৈরি করা। সমাধানও রয়েছে মায়ানমারের হাতে।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, করোনা মহামারী শুরু প্রায় দুই বছর পর এবারই প্রথম তিনি দেশের বাইরে সশরীরে কোন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদান করেন।

তিনি বলেন, ‘নিউইয়র্কে অবস্থানকালে আমার অত্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের মূল সভা ও সাইড ইভেন্ট মিলিয়ে মোট ১০টি সভা ও ৮টি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিই। ৭৬তম অধিবেশনের সাধারণ বিতর্ক পর্বের উদ্বোধনী দিনেও যোগদান করি।’

কোভিড-১৯ টিকার সর্বজনীন প্রাপ্যতা, সহজলভ্যতা ও মহামারী থেকে টেকসই পুনরুদ্ধার স্বভাবতই জাতিসংঘের আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাশাপাশি জলবায়ুর পরিবর্তন, নারীর ক্ষমতায়ন, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি, টেকসই উন্নয়ন তথা এসডিজি, পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ এসবও আলোচনায় উঠে এসেছে।’

শেখ হাসিনা করেছে, বিতর্কিত তো করতেই হবে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, তার শাসনামলে ১৯৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত দশ লাখ গরিব ও আশ্রয়হীন নাগরিককে ঘর তৈরি করে দেয়া হয়েছে।

মুজিব বর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়হীনদের জন্য সরকারের দেয়া উপহারের কিছু ঘর ধসেপড়া সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পে নয়টি জায়গায় দুর্নীতি পেয়েছি। এতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। তবে দেড় লাখ ঘর দেয়া হলো। এগুলোর সবগুলোই কি ভেঙে পড়েছে নাকি কেউ ভেঙেছে?

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্ত কিছু ঘরের ছবি দেখিয়ে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এগুলো হাতুড়ি-শাবল দিয়ে ভেঙেছে। শেখ হাসিনা করেছে, বিতর্কিত তো করতেই হবে। আপনারা বিষয়টি একটু ভালো করে দেখেন, খোঁজ নেন। আপনারা এটা খুঁজে বের করলেন না, কারা এটা ভাঙলো। করোনাকালে ঘরগুলো তৈরির ফলে এতো মানুষের কাজের সুযোগ হলো, সেটাও দেখলেন না। আমি কি জানতে পারি কেন আপনারা এটা দেখেননি?’

-সূত্র: দৈনিক সংবাদ