Home চেম্বার ‘তারা ভাবে, বেসরকারি খাত সব চুষে খাচ্ছে’

‘তারা ভাবে, বেসরকারি খাত সব চুষে খাচ্ছে’

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

ঢাকা: শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে উৎসে কর শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। এছাড়া নতুন উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দেয়ার জন্য দুই কোটি টাকা পর্যন্ত মূলধনের উৎস না খোঁজার সুপারিশ করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১০ জুন) বিসিআই বোর্ডরুমে প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পর্যালোচনায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব সুপারিশ করেন সংগঠনটির সভাপতি অনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)।

সংগঠনটির সভাপতি অনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) এ সময় লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন তার দিকনির্দেশনা চায় বিসিআই। কারণ বিগত কয়েক বছরে বেসরকারি বিনিয়াগ ২৩ শতাংশের কাছাকাছি আছে। করোনাকালে দেশে বিনিয়োগ আগের তুলনায় কমবে। এর মধ্যে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময়ে এমন উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ঘোষিত বাজেট আশাব্যঞ্জক হলেও বাস্তবায়নে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে সরকারকে। বাজেটে রাজস্ব আহরণে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। যা সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১০.৬৫শতাংশ বেশি। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। যা বিগত বছরের তুলনায় ৯.৬৩ শতাংশ বেশি। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশাল রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অনেকটা চ্যালেঞ্জিং হবে। আমরা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে হবে। তারা ভাবে, বেসরকারি খাত সব চুষে খাচ্ছে। তাদের ওপর জুলুম করা হয়। এমন ভাবলে হবে না। বেসরকারি খাত বিনিয়োগ আনছে, কর্মসংস্থান করছে। তাদের সহায়তা করে মিলেমিশে এগিয়ে যেতে হবে।’

এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে বেশকিছু প্রস্তাবকে সাধুবাদ জানিয়েছে বিসিআই। এর মধ্যে কোন করদাতা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ১০ শতাংশ তৃতীয় লিঙ্গের শ্রমিক অথবা শতাধিক কর্মী নিয়োগ সাপেক্ষে ৫ শতাংশ কর রেয়াতের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা খুবই কার্যকরী। এছাড়া দেশীয় পণ্য উৎপাদনকারী শিল্পে ২০ বছর, হোম অ্যাপ্লায়েন্স শিল্পে ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে ১০ বছর কর অব্যাহতি এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে যন্ত্রাংশ উৎপাদনে ১০ বছর কর অব্যাহতি প্রদান করায় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছে বিসিআই।

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতি এখন করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিপর্যস্ত, ঠিক এই কঠিন সময়ে আজকের জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য নিয়ে ঘোষিত জাতীয় বাজেট ২০২১-২২ এ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ৫.৩ শতাংশ নির্ধারণ করে আগামী ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের জন্য ৬ লক্ষ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এই সময়ে এরূপ উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ঘোষিত বাজেট আশাব্যঞ্জক হলেও বাস্তবায়নে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখমুখি হতে হবে সরকারকে। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যে বিপুল পরিমান বিনিয়োগ প্রয়োজন তার দিকনির্দেশনা চায় বিসিআই কারণ বিগত কয়েক বছরে বেসরকারি বিনিয়োগ ২৩ শতাংশের কাছাকাছি আছে।

এদিকে কিছু সুপারিশও করছে বিসিআই। এর মধ্যে ৩ কোটি টাকার টার্নওভারে ন্যূনতম কর হার ০.৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.২৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবে টার্নওভারের ন্যূনতম হার ৪ কোটিতে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ওপর ১৫ শতাংশ কর আরোপের প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি। তারা বলছে, এ কর আরোপে দেশে উচ্চশিক্ষার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।

দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়েও বলা হয় সংবাদ সম্মেলনে। মানব সম্পদকে সার্বিকভাবে উন্নয়ন করা হলে স্বাভাবিকভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে নীতিমালা সহজিকরন করে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রস্তাব করছি। গবেষণা ও স্কিল ডেভল্পমেন্টের জন্য সব ধরনের বিনিয়োগ করমুক্ত রাখার প্রস্তাব করছি।

দেশীয় বস্ত্র শিল্প বিকাশে, নগদ সহায়তা ৪ শতাংশ হতে বাড়িয়ে কমপক্ষে ৭শতাংশ করা, নগদ সহায়তার উপর উৎসে কর ১০শতাংশ হতে কমিয়ে ৩শতাংশ করা এবং নতুন বাজার সম্প্রসারণে বস্ত্রখাতের সংঙ্গায় প্রচ্ছন্ন রপ্তানীকারককে সংযুক্ত করার প্রস্তাব করছি। ইলেকট্রিসিটি ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণে আন্তর্জাতিক দরপত্রে ঠিকাদার কর্তৃক ষ্টিল টাওয়ার ও অন্যান্য পণ্য/সামগ্রী বিদেশ থেকে আমদানী করলে উৎসে কর কর্তন করা হয় না। অথচ দেশে স্থাপিত শিল্প কারখানা থেকে উৎপাদিত স্টীল টাওয়ার এবং অণ্যান্য পণ্য/সামগ্রির সরবরাহের ক্ষেত্রে ৭.৫শতাংশ উৎসে আয়কর কর্তন করা হয়ে থাকে। বৈষম্য দূরীকরণের উদ্দেশ্যে দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তন রহিত করা আবশ্যক।

কোভিড-১৯ জনিত কারনে কর্মহীনতা ও আয়- হ্রাস কমাতে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বয়স্ক ভাতা কর্মসূচী, প্রতিবন্ধী ভাতা কর্মসূচী, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা কর্মসূচী প্রভৃতির আওতা বৃদ্ধি করা হয়েছে যা ইতিবাচক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে বাজেটে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা বিনিয়োগ, শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান প্রক্রিয়াকে গতিশীল করবে বলে বিসিআই মনে করে।