শামসুল ইসলাম:পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আজ। ১৪৪৩ হিজরীর সনের আজ ১২ রবিউল আউয়াল। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও যথাযথ মর্যাদায় মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে এ দিনটি পালন করবেন।
এ দিনটি মানব জাতির মহোত্তম পথপ্রদর্শক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম ও ওফাতের দিন। দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে পবিত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (সা.) নামে পরিচিত। প্রায় সাড়ে ১৪শ’ বছর আগে এই দিনে আরবের পবিত্র মক্কার মরু প্রান্তরে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। আবার এই দিনে তিনি মহান আল্লাহ তা‘আলার ডাকে সাড়া দিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) হলেন বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত। তার সার্বজনীন শান্তির বার্তা দুনিয়ার সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। সমাজে সাম্য ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় তাঁর আদর্শের কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কোরআনুল কারীমে বলেছেন, আমি আপনাকে পুরো জগদ্বাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং-১০৭)। জীবনের সব ক্ষেত্রের জন্যই প্রিয়নবী (সা.) আমাদের আদর্শ। কোরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনেই তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সূরা আহজাব, আয়াত নং-২১)।
এক সময় গোটা আরব অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। আরবের সর্বত্র দেখা দিয়েছিল অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা। এ যুগকে বলা হতো আইয়ামে জাহেলিয়াত। তখন মানুষ হানাহানি ও কাটাকাটিতে লিপ্ত ছিল এবং মূর্তিপূজা করতো। অন্ধকার সেই যুগ থেকে মানবকুলের মুক্তিসহ তাদের আলোর পথ দেখাতে মহান আল্লাহ তা‘আলা রসূলুল্লাহকে (সা.) প্রেরণ করেন এই ধরাধামে। মহানবী অতি অল্প বয়সেই আল্লাহর প্রেম অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং প্রায়ই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। পঁচিশ বছর বয়সে মহানবী (সা.) মক্কায় বিবি খাদিজা নামের এক ধনাঢ্য মহিলার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মাত্র ৪০ বছর বয়সে তিনি নবুয়্যাতপ্রাপ্ত হন। আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভ করেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, “আমি আপনার আলোচনাকে বুলন্দ করেছি।” কতটুকু বুলন্দ? এতটুকু যে মহান আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাম মুবারকের সাথে দরূদ সংযুক্ত করে দিয়েছেন।
হযরত আবু কাতাদা আল-আনসারী রদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সোমবার দিন রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এ দিনে (সোমবারে) আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এ দিনেই আমি নব্যুয়ত পেয়েছি।’ মুসলিম শরীফ।
বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় এ দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পালন করে থাকেন। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের জন্য সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর ওপর আলোচনা, র্যালী, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।
এ উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার থেকে বায়তুল মোকাররমের চত্বরে মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বিকেলে ইসলামী বইমেলা উদ্বোধন করেছেন। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বইমেলা খোলা থাকবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জাতীয় মসজিদে প্রতিদিন বাদ মাগরিব থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ওয়াজ মাহফিল, সপ্তাহব্যাপী সেমিনার, স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান, রসূল (সা.)-কে নিয়ে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর, কেরাত মাহফিল, হামদ-নাত প্রতিযোগিতা, মহানবীর (সা.) জীবন ও শিক্ষাবিষয়ক আলোচনা সভা।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে উন্নত খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।