বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
ইন্দোনেশিয়ার দানি উপজাতির মধ্যে আজও বীভৎস এক রীতি প্রচলিত রয়েছে। পরিবারের কেউ মারা গেলে এঁরা প্রিয়জনের স্মৃতির উদ্দেশে নিজের হাতে একটি আঙুল কেটে ফেলেন। আঙুলটি তাঁরা উৎসর্গ করেন মৃত প্রিয়জনের উদ্দেশে। ইন্দোনেশিয়ার সরকার অবশ্য অনেক আগেই এই পৈশাচিক রীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, তবে এই আদিম উপজাতির শিকড় থেকে উপড়ে ফেলতে পারেনি প্রাচীন প্রথা।
ইন্দোনেশিয়ার জয়াউইজায়া প্রদেশে বাস করেন দানি উপজাতির মানুষজন। তাঁদের এই উদ্ভট প্রথার নাম ইকিপালিন। এই প্রথা অনুযায়ী, পরিবারের কোনও পুরুষ সদস্য মারা গেলে তাঁর প্রিয়জন হাতের একটি আঙুল কেটে ফেলেন। মহিলাদেরই এমনটা করতে হয়। অবশ্য গোটা আঙুল নয়, আঙুলের উপরের অংশ কেটে ফেলেন পরিবারের কোনও একজন মহিলা। মৃত মানুষের সবচেয়ে কাছের যিনি, তাঁকেই এই ইকিপালিন পালন করতে হয়। দানি উপজাতির লোকেরা বিশ্বাস করেন, যথাযথভাবে ইকিপালিন পালন করলে মৃত ব্যক্তির আত্মা শান্তি পায়।
ইকিপালিনে যে মহিলার আঙুল কাটা হবে, তাঁর আঙুলটি আগে শক্ত করে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। ওই আঙুলে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ করার জন্যেই এই ব্যবস্থা। বাঁধার কিছুক্ষণের মধ্যে আঙুলের উপর চালিয়ে দেওয়া হয় ধারালো কুঠার।
এখানেই শেষ নয়, আঙুলের মাথা কেটে ফেলার পর যখন মহিলার হাত থেকে গলগল করে রক্ত বেরিয়ে আসে, তখন সেই রক্তপাত বন্ধ করার জন্যেও নিষ্ঠুর পন্থা নেওয়া হয়। আঙুলের ডগা আগুনের সংস্পর্শে এনে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
এই উদ্ভট প্রথার পিছনে দানি উপজাতির আরও একটি ভাবনা কাজ করে। তাঁরা মনে করেন, যে মানুষটি মারা গেছেন, তাঁর মৃত্যুর বেদনা এই তীব্র শারীরিক যন্ত্রণার মাধ্যমে ভুলে থাকা যাবে। শরীরের ক্ষত ম্লান করে দেবে মনবেদনা।
নিষ্ঠুর এই প্রথা বন্ধ করার জন্য ইন্দোনেশিয়ার সরকার ইতিমধ্যে অনেক পদক্ষেপ করেছে। সাধারণ মানুষও বহুবার বহুভাবে পথে নেমেছে। প্রশ্ন উঠেছে, কেন শুধু মহিলাদের উপরেই এই ভয়াবহ প্রথা চাপিয়ে দেওয়া হয়? পুরুষরাও কেন এর ভাগীদার হয় না?
আন্দোলন, প্রতিবাদে ফল যে একেবারে শূন্য, তা নয়। আগের চেয়ে ইকিপালিনের দাপট অনেক কমেছে। তবে আজও তা নির্মূল হয়নি। উপজাতির একটা বড় অংশের মানুষ এখনও এই প্রথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন।