উজ্জ্বল বিশ্বাস
যশোর:শুধু দুর্গাপূজা না, সারা বছরই কমবেশি মাটির তৈরি খেলনার চাহিদা থাকে। এ কারণে দরকার হয় রং তুলির আঁচড়ে দৃষ্টিনন্দন করে তোলা। তবে, শারদীয় দুর্গোৎসবে ব্যস্ততা যেন একটু বেশিই থাকে। এ কারণে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। বিশ্রামের জো নেই তাদের।
দিন রাত রং তুলি নিয়ে চন্দন মান্না ও কল্পনা রানী মান্না (স্বামী-স্ত্রী) নিরন্তর কাজ করে চলেছেন। পোড়া মাটির তৈরি এ খেলনাগুলোতে রং তুলির আঁচড় দিয়ে পূজার বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন তারা। যশোর বেজপাড়া পূজা মন্দিরের সামনের শৈল্পিক কাজ করছেন তারা।
শুধু বেজপাড়া পূজা না, নীলগঞ্জ তাঁতিপাড়া, পুলেরহাট, দাইতলার রায়মানিক, ফতেপুরসহ বেশকিছু এলাকায় ২০ থেকে ৪০ প্রকারের মাটির খেলনায় রং লাগাতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে যশোরের মৃৎশিল্পীদের এ ব্যস্ততা।
পুরোহিত তপন ঠাকুর বলেন,‘পৃথিবীর প্রতিটি দেশে রয়েছে যার যার নিজস্ব সংস্কৃতি। কেননা মানুষ তার নিজস্ব সংস্কৃতি কৃষ্টির আদলেই বেড়ে ওঠে এবং সংস্কৃতিকে লালন করে। আর এসবের মূলেই রয়েছে গ্রামীণ সংস্কৃতি। যার গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে মৃৎশিল্প। বিশেষ করে বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষের বৈশাখী মেলাসহ যে কোনো উৎসব, পূজাপার্বণে যুগ যুগ ধরে মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করে আসছে বাঙালি। তারই ধারাবাহিতকায় প্রতিটি পূজায় মাটির তৈরির কদর থাকে অন্য রকম। বর্তমানে প্লাস্টিকের জন্য মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা একটু কমেছে বলে মন্তব্য তার।
মৃৎশিল্পী চন্দন মান্না বলেন, এঁটেল মাটির তৈরি পুতুলগুলো পোড়ানো অবস্থায় কেনেন তারা। তারপর সেইগুলোতে নানা ধরনের রং দিয়ে দৃষ্টিনন্দন করেন। তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে দীর্ঘদিন ধরে এ কাজ করছেন। তাদের তৈরি এই মৌসুমে ভারতসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ বিক্রির উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করেন বলে জানান তিনি।
যশোর সদর উপজেলার রায়মানিক গ্রামের সুশান্ত কুমার চন্দ্র পাল। পূজা আসলেই তার ব্যস্ততা বেড়ে যায়। বিশেষ করে দেবদেবীর ছোট ছোট প্রতিমাগুলোই তার বেশি তৈরি করেন। তিনি প্রতিবছর দুর্গাপূজায় মাটির তৈরি প্রতিমা ব্যাপকভাবে বিক্রি করেন। তার তৈরি মাটির এসব জিনিসগুলো মণিরামপুর, কেশবপুর, বেনাপোল, নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহসহ আশেপাশের বিভিন্ন স্থানের খুচরা দোকানিরা কিনে পূজার মেলায় নিয়ে বিক্রি করেন।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তপন ঘোষ বলেন, সনাতন ধর্মালম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। দুর্গোৎসবে মন্দির ও মন্ডপে চলছে এখন প্রতিমা তৈরির কাজ। তবে, বসে নেই মাটির তৈরির জিনিসপত্রের কারিগররাও। প্রতিবছর তারা এ ধরনের খেলনাগুলো বিক্রি করেন।