চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ নাগাদ কমতে পারে পেঁয়াজের ঝাঁজ। এ সময়ে বাজারে আসবে প্রচুর নতুন পেঁয়াজ। আশা করা হ”েছ পেঁয়াজের দর নি¤œমুখী হয়ে পড়বে। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ২৩ দশমিক ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন। আর আমদানি করা হয়েছে ১০ দশমিক ৯২ লক্ষ মেট্রিক টন। ফলে মোট সরবারহের পরিমাণ ৩৪ দশমিক ২২ লক্ষ মেট্রিক টন। অন্যদিকে, দেশে বাৎসরিক পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে ২৪ লক্ষ মেট্রিক টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি থাকার কথা নয়। বরং উদ্বৃত্ত থাকার কথা। তবুও বাজারে লাগামহীনভাবে পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে। ভারত থেকে রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় অপরিহার্য সামগ্রীটির দাম আকাশছোঁয়া। গত অর্থবর্ষে ২২ লক্ষ টন পেঁয়াজ রপ্তানি করেছিল ভারত। কিন্তু, এবার দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ৪৫০০ টাকা প্রতি একশো কেজি পেরোতেই রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় ভারত।
বর্তমানে খুচরো বাজারে কেজি প্রতি ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। দেশে পেঁয়াজের জোগান ঠিক আছে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ঢাকার বসুন্ধরা, নতুনবাজার ও বাড্ডা বাজারে খুচরো বাজারের অধিকাংশ দোকানেই পেঁয়াজের দেখা মিলছে তুলনায় অনেক কম। বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ কেজি প্রতি ১৫০-১৫৫ টাকা, মিশরীয় পেঁয়াজ ১৩০ টাকা, মায়ানমারের পেঁয়াজ ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ দু’দিন আগেও দেশি পেঁয়াজ কেজি প্রতি বিক্রি হয়েছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। ওই সময় মিশরীয় পেঁয়াজ ১২০ টাকা আর মায়ানমার পেঁয়াজ ১২৫-১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, “পাইকারি বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। তাই খুচরো ব্যবসায়ীদের বেশি দামে তা কিনতে হচ্ছে। ক্রেতারা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ শুনতে নারাজ। তাঁদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের কাছে এ এক নতুন অজুহাত। আদতে এতো বেশি দামে পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে না তাঁদের। সরকারের তরফে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণের সেভাবে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ ক্রেতাদের। এভাবে দাম বাড়তে থাকায় অনেকের হেঁশেলেই আর পেঁয়াজ ঢুকছে না বলেও দাবি বহু গৃহস্থের।
বাজারে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আমদানিকারকদের উৎসাহিত করতে ইতোমধ্যে একগুচ্ছ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে প্রশাসন। আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক এবং সুদের হার কমানোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। স্থলপথে ও বন্দরগুলিতে আমদানি করা পেঁয়াজ দ্রুত ভিত্তিতে খালাসের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া মায়ানমার থেকে সীমান্ত বাণিজ্যের মাধ্যমে টেকনাফ বন্দর হয়ে আমদানি করা পেঁয়াজ দ্রুত সারা দেশে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা-সহ একাধিক শহরে ৪৫ টাকা কিলো মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করার ব্যবস্থা করেছে সরকার।
উল্লেখ্য, ভারত থেকে আসা পেঁয়াজের অভাব পূরণ করতে আর পেঁয়াজের দাম মধ্যবিত্তের নাগালে রাখতে মায়ানমার, তুরস্ক, চিনের মুখাপেক্ষী হয়েছে। বাংলাদেশের মতোই পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ার মতো পেঁয়াজের প্রয়োজনে অন্য এশীয় দেশগুলিও তুরস্ক, চিনের শরণাপন্ন হয়েছে।