Home সারাদেশ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কেসিং মারমা শিক্ষক হতে চায়, কিন্তু পারবে কি

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কেসিং মারমা শিক্ষক হতে চায়, কিন্তু পারবে কি

কেসিং মারমা
মিঠুন সাহা, পানছড়ি ( খাগড়াছড়ি ) থেকে: খাগড়াছড়ির পানছড়ি সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া  দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কেসিং মারমা ২ দশমিক ৪২ পেয়ে পাশ করেছে।
১৩ ফেব্রুয়ারী( রবিবার) দুপুর ১২ টার সময়  উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা হলে কলেজ ওয়েবসাইট থেকে তার পাশ হওয়ার বিষয়টি জানা যায়।
জানা যায়, খাগড়াছড়ির সিঙ্গিনালার একটি প্রত্যন্ত এলাকায় জন্মগ্রহণ করলেও তার শৈশবকাল ও  প্রাথমিক বিদ্যালয়েল সমাপনী শেষ হয়েছে মাটিরাঙ্গার বাইল্লাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। এরপর মাটিরাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অন্যের সহযোগিতা নিয়ে পড়া রেকর্ড করে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি ও পানছড়ি সরকারি ডিগ্রি কলেজ এর একই বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করে।
তার এই জার্নিতে পরিবারের বাইরে অনেকে নানা ভাবে সহযোগিতা করেছে। বিশেষ করে পানছড়ি সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সমীর দত্ত চাকমা তার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য নানা ভাবে উৎসাহ ও সার্বিক সহযোগিতা করেছেন।
দরিদ্র পরিবারের দুইভাই ও একবোন এর মধ্যে সেই পড়ালেখা ধরে রেখেছে। ছোট বেলা থেকে তার স্বপ্ন একজন শিক্ষক হওয়া।।বাবা কৃষক। মা গৃহিনী।।জীবনের গন্তব্যে এতোটুকু পর্যায়ে এলেও ভবিষ্যত যেন অন্ধকারের বার্তা দিচ্ছে বলে জানান কেসিং মারমা ও তার পরিবার। কারণ সামনের দিকে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার মতো আর্থিক সার্মথ্য নেই তাদের।
কেসিং মারমার সাথে মুঠোফোনে আলাপ কালে তিনি জানান:বাবার অনুপ্রেরণা, শিক্ষক ও বন্ধুদের উৎসাহে এতদূর এসেছি।পানছড়ি সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সমীর দত্ত স্যার আমার পড়ালেখার বিষয়ে অনেক সহযোগিতা করেছেন। তিনি আমাকে টেপ রেকর্ডার কিনে দিয়েছেন। আমি শুনে শুনে তা আত্মস্থ করেছি এবং পরীক্ষায় সফল হয়েছি।বর্তমানে আমার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার মতো তেমন সামর্থ্য নেই। এই ক্ষেত্রে বিত্তবানরা যদি আমার দিকে সুদৃষ্টি দেন। তাহলে আমার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া সহজ হবে।
আর তাছাড়া ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা করার জন্য যে বইগুলো দরকার সে বইগুলোর যদি ব্যবস্থা হয়। তাহলে আমি অন্যের সাহায্য ছাড়া নিজে নিজে পড়তে পারবো। আমি সবার সহযোগিতায় সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। এবং একজন ভালো শিক্ষক হতে চাই।
পানছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আনচারুল করিম বলেন কেসিং মারমা  খুব আত্মবিশ্বাসী একজন ছাত্র। সে এইচএসসি পরীক্ষায় সফল হওয়ায় আমি তাকে অভিনন্দন জানাই। প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নন। তাদের একটু উৎসাহ ও সুযোগ সৃষ্টি করে দিলে তারা অন্য সবার মতো সমাজের উন্নয়নে সমান ভূমিকা রাখতে পারে। আমি তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।
পানছড়ি সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সমীর দত্ত চাকমা বলেন, আমাদের কলেজ থেকে দীপা নন্দী  শারিরীক প্রতিবন্ধী হওয়া স্বত্তেও জিপিএ ৫ অর্জন করেছে অন্যদিকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কেসিং মারমা পাশ করেছে। তাদের সাফল্যে আমরা আনন্দিত। প্রতিবন্ধীতা মানে প্রতিবন্ধকতা নয় এটা তারা প্রমাণ করলো আরও একবার।তাদের জন্য আমার শুভেচ্ছা রইলো।