Home রকমারি সংবাদ দৈত্যাকৃতি গাছটির নাম ছিল ‘কার্ল মার্ক্স’

দৈত্যাকৃতি গাছটির নাম ছিল ‘কার্ল মার্ক্স’

জুরাসিক যুগে পৃথিবীর বুকে রাজত্ব চালিয়ে গিয়েছিল আকাশ ছোঁয়া কিছু প্রাণী। যেমন ব্র্যাকিওসরাস, জাইগান্টোসোরাস, কার্কারোডন্টোসরাস, টির্যা।নোসরাস, জিরাফাটাইটান ব্রাঙ্কাই, আর্জেন্টিনোসরাস, সুপারসরাস, ডিপ্লোডোকাস। তাদের পদধ্বনির অনুরণনে প্রায় ১৬ কোটি বছর ধরে কেঁপেছিল পৃথিবী। তবে আমাদের প্রিয় পৃথিবী শুধু অতিকায় প্রাণী নয়, দেখেছে অতিকায় উদ্ভিদও। আজও এমন কিছু উদ্ভিদ টিকে আছে এই পৃথিবীতে, যাদের আকৃতি ও বয়স আমাদের বিস্ময় জাগায়।

পৃথিবীর উচ্চতম বৃক্ষের নাম হাইপারিয়ন। রেডউড শ্রেণীর এই বৃক্ষটি আছে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াতে। বৃক্ষটির উচ্চতা ৩৮০ ফুট। গুঁড়িতে ১৮,৬০০ ঘনফুট কাঠ আছে। ১৯৭৮ সালে, রেডউড ন্যাশনাল অ্যান্ড স্টেট পার্কের গভীরে হাইপারিয়ন নামের বৃক্ষটিকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল।

হাইপারিয়ন ট্রি

আমেরিকার ইনাইয়ো ন্যাশনাল ফরেস্টের ভেতর আছে সুপ্রাচীন ‘মেথুসেলা গ্রোভ’। এটি আসলে ‘ব্রিস্টলকোন পাইন’ গাছের ঝাড়। তারই মধ্যে লুকিয়ে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক উদ্ভিদ ‘মেথুসেলা’। যেটির বয়স ৪৮৫২ বছর।

পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক বৃক্ষ মেথুসেলা

তবে বর্তমান পৃথিবীতে জীবিত ও দৈত্যাকৃতি গাছদের মধ্যে মেগাস্টার গাছ একটিই। তার নাম ‘জেনারেল শেরম্যান’। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার সেকোইয়া ন্যাশনাল পার্কে আছে এই গাছটি। গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম ‘সেকোইয়াডেন্ড্রন জায়গান্টিয়াম’। বয়স, উচ্চতা ও গাছটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ইতিহাসের জন্যেই সেটি বিশ্ববিখ্যাত।

জেনারেল শেরম্যান

আমেরিকার গৃহযুদ্ধের বিখ্যাত জেনারেল, উইলিয়াম টিকামেশ শেরম্যানের নামে দৈত্যাকৃতি সেকোইয়া গাছটির নাম রাখা হয়েছিল ‘জেনারেল শেরম্যান’। ১৮৭৯ সালে গাছটির নাম জেনারেল শেরম্যান রেখেছিলেন ৯ নম্বর ইন্ডিয়ানা ক্যাভালরির লেফটেন্যান্ট ও প্রকৃতিবিদ জেমস উলভারটন। গৃহযুদ্ধের সময় তিনি জেনারেল উইলিয়াম টিকামেশ শেরম্যানের অধীনে বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন।

জেনারেল উইলিয়াম টিকামেশ শেরম্যান।

১৮৮৬ সালে এলাকাটি চলে গিয়েছিল ‘কাওয়েয়া’ নামে একটি গোষ্ঠীর দখলে। কাওয়েয়া গোষ্ঠীটি জঙ্গলের বড় বড় গাছ কেটে কাঠব্যবসা শুরু করলেও, তাদের চিন্তাধারা ছিল সমাজবাদী। তাই তারা ‘জেনারেল শেরম্যান’ গাছটির নাম পাল্টে দিয়েছিল। গাছটির নতুন নাম হয়েছিল ‘কার্ল মাক্স’। ১৮৯২ সালে এলাকাচ্যুত হয়েছিল কাওয়েয়া গোষ্ঠী। কারণ এলাকাটি জুড়ে গড়ে উঠেছিল ‘সেকোইয়া ন্যাশনাল পার্ক’। কাওয়েয়া গোষ্ঠী এলাকা ছাড়ার পর, সেকোইয়া গাছটি ফিরে পেয়েছিল তার পুরোনো নাম ‘জেনারেল শেরম্যান’।

জেনারেল শেরম্যানের উচ্চতা ২৭৫ ফুট। গুঁড়ির গড় বেড় ২৫ ফুট, সর্বোচ্চ ৩৫ ফুট। গুঁড়িতে কাঠ আছে ৫২,৫০০ ঘনফুট। গাছটির গুঁড়ির আনুমানিক ওজন ২১০৫ টন। মাটির নীচে কয়েকশো ফুট এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে জেনারেল শেরম্যানের মূল।
 জেনারেল শেরম্যানের বয়স নেহাত কম না। প্রায় ২৭০০ বছর। ২০০৬ সালে জেনারেল শেরম্যানের সব চেয়ে বড় ডালটি ভেঙে পড়েছিল। ডালটি ছিল ৯৮ ফুট লম্বা এবং পরিধি ছিল সাত ফুট। বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন পাল্টে যেতে থাকা আবহাওয়াই এর জন্য দায়ী।

অন্যদিক থেকে জেনারেল শেরম্যান।

জেনারেল শেরম্যানকে দেখতে হলে যেতে হবে ক্যালিফর্নিয়ার ‘সিয়েরা নেভাদা’ পর্বতাঞ্চলে। সেখানে পাহাড়ের কোলে প্রায় বারো লক্ষ একর জায়গা জুড়ে আছে সেকোইয়া ন্যাশনাল ফরেস্ট। অরণ্য ছাড়াও এখানে দেখার আছে কিংস ক্যানিয়ন, মোরো রক, ক্রিস্টাল কেভ।

সেকোইয়া ন্যাশনাল ফরেস্টে আর একটি দর্শনীয় জিনিস হল ‘টানেল লগ’। অতিকায় গাছের গুঁড়ির ভেতর দিয়ে যাওয়া আসা করছে গাড়ি ও মানুষ। জায়গাটি সারাক্ষণ কুয়াশায় ডুবে থাকে।

এই সেকোইয়া ন্যাশনাল ফরেস্টে আছে সুপ্রাচীন সেকোইয়া গাছের ৩৮ টি ঝাড়। ঝাড়গুলিতে আছে প্রায় ১০০টির বেশি দৈত্যাকৃতি গাছ। কোনও গাছেরই বয়স দেড় হাজার বছরের কম নয়।

পর্যটকেরা সেকোইয়া ন্যাশনাল ফরেস্টে আসেন এই প্রাচীন সেকোইয়া গাছগুলিরই আকর্ষণে। গাছগুলির কাছে এসে তাঁরা বিস্মিত হয়ে যান। এরকম গাছ তাঁরা আগে দেখেননি। দেড়-দু’হাজার বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলি কত ইতিহাসের সাক্ষী তা ভেবে বুঝি শিহরিত হন।

তবে সেকোইয়া ন্যাশনাল ফরেস্টের সব আকর্ষণের সেরা আকর্ষণ এখনও ‘জেনারেল শেরম্যান’। ফরেস্টে প্রবেশ করেই পর্যটকরা খোঁজ করেন জেনারেলের। ফরেস্টে থাকা সেকোইয়া গাছদের সেনাপতি ‘শেরম্যানকে চাক্ষুষ দেখে সম্মোহিত হয়ে যান পর্যটকরা। মিনিট খানেক চোখের পাতা পড়ে না।

-the wall