Home জাতীয় দ্রুত বিচার আইনে ন্যায়বিচার চান মা

দ্রুত বিচার আইনে ন্যায়বিচার চান মা

ঢাকা: রাজধানীর কলাবাগানে ‘ও’ লেভেল শিক্ষার্থী আনুশকা নুর আমিনকে ‘ধর্ষণ ও হত্যা’র ঘটনায় দ্রুত ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন তার মা। এছাড়া পুরো ঘটনা নিয়ে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিযুক্ত দিহানের তিন বন্ধু ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলেও ফের দাবি জানিয়েছেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বুধবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে এসব দাবির কথা জানান।

এদিকে আনুশকা ধর্ষণ-হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ইফতেখার ফারদিন দিহান ঘটনার দিন কোনো মাদক বা উত্তেজক ওষুধ সেবন করেছিলেন কি না, তা পরীক্ষা করে দেখতে বলেছে আদালত।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরা বুধবার এ আদেশ দেন।

মহিলা পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আনুশকার মা সরকারের কাছে কয়েকটি দাবি জানান। সেগুলো হচ্ছে : ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ন্যায়বিচার করা, মামলার কার্যক্রম দ্রুত বিচার আইনে করা, দিহান ও তার সঙ্গীদের বিচারের আওতায় আনা, স্বচ্ছ ডিএনএ পরীক্ষা কার্যকর করা এবং ভুক্তভোগীর পরিবার যেন কোনো অযাচিত অসুবিধার শিকার না হয় তার ব্যবস্থা করা।

মেয়ের পরিণতির কথা জানাতে গিয়ে আনুশকার মা বলেন, ‘৭ জানুয়ারি দিহান ও তার সঙ্গীরা আমার মেয়েকে অপহরণ করে তার বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে আমার মেয়েকে অমানবিক নির্যাতন, ধর্ষণ এবং হত্যার পর আমাকে ফোন করা হয়। দিহান আমাকে ফোন করে জানায়, আনুশকা সেন্সলেস হয়ে গেছে। আমি হসপিটালে এসে দেখি, দিহানসহ তার তিন সঙ্গী বসে আছে। তারা আমার পা জড়িয়ে ধরে বলে, আন্টি আমাদের বাঁচান। যখন আমার মেয়েকে দেখতে চাই, তখন আমাকে দেখতে যেতে দেওয়া হয়নি।’

কর্তব্যরত চিকিৎসক তখন মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ জানান উল্লেখ করে আনুশকার মা বলেন, ‘পরে দিহানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি, আমার মেয়েকে তোমরা কোথায় পেলে, কেন মারা গেল? তখন সে আমাকে বলে, আমরা চারজন ওকে আমাদের বাসায় নিয়ে যাই এবং সেখানে সে সেন্সলেস হয়ে যায়। তখন আবার জিজ্ঞেস করি, বাসায় আর কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড ছিল না বা তোমার বাবা-মা ছিল না? তখন বলে, না, আমরা চারজনই তাকে নিয়ে গিয়েছিলাম। এরপর আমার বুঝতে বাকি থাকে না সেখানে কী হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেভাবে মামলাটি করতে চেয়েছি, পুলিশ সেভাবে মামলাটি নেয়নি। একটি মহল দিহান ও তার সঙ্গীদের আড়াল করার এবং আমার মেয়ের চরিত্র হননের চেষ্টা করছে। বলা হচ্ছে, আমার মেয়ের সঙ্গে দিহানের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এটি একদমই ঠিক না। কিছু কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেটি প্রচার করা হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আনুশকার বাবা বলেন, ‘আমার মেয়েকে প্রতিটা মুহূর্তে আমি মায়ের মতো করে রেখেছি। আমার পারমিশন ছাড়া অথবা আমার সঙ্গে কথা না বলে সে কোথাও কিছু করত না। ভবিষ্যতে প্রতিটা মুহূর্ত কী করবে সেটা আমার সঙ্গে কথা বলেই করত। আমি আমার মেয়েকে সেভাবে গড়ে তুলেছি। এভাবে ওইদিনও যখন সে বিপদে পড়েছে বা কোনো ডিসিশন নিতে হবে ভেবেছে, তখন আমাকে জানাতে ফোন করেছে। আমার কষ্টের বিষয় যে ওই মুহূর্তে আমি কলটা ধরতে পারিনি। যদি সে সময় কলটি ধরতে পারতাম, তাহলে হয়তো এত বড় দুর্ঘটনা ঘটত না। আমার একটাই চাওয়া, আমি যেটা হারিয়েছি, এটা যেন আর কোনো বাবা-মা কখনো না হারান।’

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘দিহানের এই পথে যাওয়ার পেছনে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের দাবি মেনে নিতে হবে। হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘যৌন নিপীড়ন অভিযোগ সেল’ গঠন করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে হবে। ময়নাতদন্তে চিকিৎসক বলেছেন, শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু শিক্ষার্থীর মায়ের দেখানো একটি ছবিতে দেখা গেছে, পিঠে কালশিটে দাগ রয়েছে, যা ময়নাতদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়নি।’

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৩ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। এগুলো হলো : যৌন নির্যাতনের ক্ষেত্রে সাইবারের মাধ্যমে ব্যবহৃত ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র শিশু-কিশোর ও তরুণদের মানসিক বিকাশের উপযোগী সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, খেলাধুলার সুযোগ বৃদ্ধি করা এবং ধর্ষণ, যৌন অপরাধের ঘটনা প্রতিরোধে পাঠ্যসূচিতে যৌন ও প্রজনন শিক্ষার বিষয়ে অন্তর্ভুক্তকরণসহ এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিমা মুসলেম, ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি মাহাতাব নেছা, ঢাকা মহানগর মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনুস প্রমুখ। এছাড়া আনুশকার চার সহপাঠী উপস্থিত ছিলেন।

-বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক