তিন দিন আগে মুসলিমার সঙ্গে রিয়াজের পরিচয় হয়। এরপর বিয়ের কথা বলে ২৫ জানুয়ারি রাতে মোবাইল ফোনে মুসলিমাকে ফুলতলার উত্তরডিহি গ্রামে ডেকে আনে। এরপর যুগ্নিপাশার মুনসুরের একটি ঘরে নিয়ে এনে দুই জন মিলে ধর্ষণ করে।
চন্দন ভট্টাচার্য্য, খুলনা থেকে: খুলনায় মুসলিমা খাতুন (২০) নামে এক শ্রমিকের মস্তকহীন বিবস্ত্র মরদেহ উদ্ধারের তিন দিন পর দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলো- রিয়াজ ও সোহেল।
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-৬ এর পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ এ তথ্য জানান।

এর আগে গত বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে খুলনার ফুলতলার উত্তরডিহি গ্রামের ধান ক্ষেত থেকে মুসলিমা খাতুনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার বাড়ি দামোদর গ্রামে। তিনি আইয়ান জুট নামে একটি মিলে কাজ করতেন।
গ্রেফতার দুই জনের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে লেফট্যানেন্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ জানান, হত্যার তিন দিন আগে মুসলিমার সঙ্গে রিয়াজের পরিচয় হয়। এরপর বিয়ের কথা বলে ২৫ জানুয়ারি রাতে মোবাইল ফোনে মুসলিমাকে ফুলতলার উত্তরডিহি গ্রামে ডেকে আনে। এরপর যুগ্নিপাশার মুনসুরের একটি ঘরে নিয়ে এনে দুই জন মিলে ধর্ষণ করে।
গাড়িতে তোলার কথা বলে সেখান থেকে বিল এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে গলায় ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর মরদেহ ধান ক্ষেতে ফেলে দেয়। রিয়াজের বাড়ি থেকে বটি নিয়ে এনে মাথা বিচ্ছিন্ন করে। সেটা নির্মাণাধীন একটি ভবনের মেঝেতে পুঁতে রাখে। সেখানে মাথার সঙ্গে জামা কাপড় ও স্যান্ডেল রাখা হয়।
২৬ জানুয়ারি লাশ উদ্ধারের সময়ও রিয়াজ সেখানে উপস্থিত ছিল। পরে বিভিন্নভাবে তার নাম ওঠার পর পালিয়ে যায়। গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে শুক্রবার রাতে ফরিদপুর থেকে রিয়াজকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ফুলতলা থেকে সোহেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের পর প্রাপ্ত তথ্য অনুয়ায়ী অভিযান চালিয়ে মরদেহ উদ্ধার ও ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হয়।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় নিহত মুসলিমার বোন আকলিমা খাতুনসহ স্বজনরা। তাদের আহাজারিতে আকাশ বাতাশ ভারী হয়ে যায়। শত শত মানুষ ঘটনা দেখার জন্য ভিড় জমান। আকলিমা বলেন, এদেরকে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ড চাই। একই দাবি জানান ওই এলাকার মানুষ।
প্রসঙ্গত: গত ২৬ জানুয়ারি সকালে ফুলতলার উত্তরডিহি এলাকার ধান খেত থেকে মুসলিমার মস্তকবিহীন বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশের ময়না তদন্ত শেষে ২৭ জানুয়ারি মস্তকবিহীন দাফন সম্পন্ন হয়। এ ঘটনায় নিহতের বোন আকলিমা খাতুন বাদি হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে থানায় মামলা করেন (নং-১৩)। ওই এজাহারে বলা হয়, ২৫ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে মোবাইলে কল পেয়ে মুসলিমা বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি। পরদিন সকালে মস্তকবিহীন মৃতদেহ উদ্ধার হয়।
দুই বছর আগে যশোরের প্রেমবাগ এলাকায় সাগর নামে একজনের সঙ্গে মুসলিমার বিয়ে হয়। পরে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তখন থেকে আইয়ান জুট মিলে কাজ শুরু করেন মুসলিমা।
গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে ও উদ্ধারকৃত আলামত খুলনা জেলার ফুলতলা থানার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।