Home আইন-আদালত ৭ মাসের শিশু ধর্ষণ, অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড

৭ মাসের শিশু ধর্ষণ, অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড

বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ

কলকাতা: সাতমাসের এক শিশুকন্যা ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বড়তলা থানা এলাকায়। ৮০ দিনের মধ্যে মামলার রায়ে অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে আদালত। আদালতের পর্যবেক্ষণে ঘটনাটিকে বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার এই মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়েছে কলকাতার ব্যাংকশাল কোর্ট। পাশবিক অত্যাচারে নির্যাতিতা শিশুকন্যার মৃত্যু না হলেও আদালতের পর্যবেক্ষণ ঘটনাটি বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ। ঘটনার ৮০ দিনের মধ্যে ফাঁসির সাজা শুনিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল আদালত। পাশাপাশি নির্যাতিতার পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলেছেন আদালতের বিচারক ইন্দ্রিলা মুখোপাধ্যায় মিত্র।

৩০ নভেম্বর বড়তলা থানায় শিশু নিখোঁজের অভিযোগ জানিয়েছিলেন ফুটপাথবাসী এক দম্পতি। নিখোঁজের কয়েক ঘণ্টা পরে ওই ফুটপাথ থেকেই শিশুকন্যাকে উদ্ধার করা হয়। নির্যাতিতার যৌনাঙ্গে একাধিক ক্ষতচিহ্ন লক্ষ্য করেন পরিবারের লোকেরা। যা দেখে তাঁরা নিশ্চিত হন, ধর্ষণ করা হয়েছে শিশুটিকে। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাথমিক পরীক্ষায় যৌন নির্যাতনের প্রমাণও পাওয়া যায়।

এরপরেই ঘটনার তদন্তে নামে লালবাজার থানার পুলিশ। অভিযুক্তকে চিহ্নিত করতে রাস্তার একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। সেই ফুটেজ দেখে যুবককে চিহ্নিত করেছিলেন তদন্তকারীরা। গত ৪ ডিসেম্বর ঝাড়গ্রাম থেকে রাজীব ঘোষ নামে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে খবর, বড়তলার ফুটপাথের যেখানে শিশুটিকে পাওয়া যায়, সেখান থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরেই তার বাবা-মায়ের বাস। ঘটনার দিন শিশুটিকে রেখে তাঁরা কোথাও গিয়েছিলেন। সেই সময়ে শিশুটিকে অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ। ধৃতের নাম রাজীব ঘোষ। বয়স ৩৪। বাড়ি ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুর এলাকায়।

ঘটনার ২৬ দিনের মাথায় আদালতে ১৩ পাতার চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৩৭(২), ৬৫(২) এবং শিশু সুরক্ষা আইনের (পকসো) ৬ নম্বর ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। সোমবার তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্ট। মঙ্গলবার দোষীকে ফাঁসির সাজা শোনান আদালতের বিচারক ইন্দ্রিলা মুখোপাধ্যায় মিত্র।

এই ঘটনায় সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অজস্র সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আমরা দেখেছি। আরজি কর হাসপাতাল থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসেছিলেন শারীরিক পরীক্ষার জন্য। সেই চিকিৎসকও জানিয়েছেন, এটি বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা। যে ভাবে ওইটুকু শিশুর উপর অত্যাচার করা হয়েছে, তা ভাবা যায় না। আদালত অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘এই রায় ঐতিহাসিক। কলকাতা পুলিশ আজ ইতিহাস তৈরি করল। কারণ, এই ঘটনায় নির্যাতিতার মৃত্যু হয়নি। সে ক্ষেত্রে অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। এখানে নির্যাতিতা অসুস্থ। সে যদি সুস্থ হয়ে ফিরেও আসে, সারা জীবন তাকে যন্ত্রণা বহন করতে হবে। এটা আদালতের কাছে বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ।’’

ডিসি (উত্তর) দীপক সরকার বলেন, ‘‘সাত মাস বয়সি একটি শিশুর পাশবিক অত্যাচারের ঘটনা সামনে আসতেই অভিযুক্তকে ধরতে ঝাপিয়ে পড়ি। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযুক্তকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করি। নির্যাতিতার পোশাকে পাওয়া অপরাধের বিভিন্ন নমুনার সঙ্গে অভিযুক্তের ডিএনএ মিলে গিয়েছে। সমস্ত তথ্যপ্রমাণ পেয়ে আদালতের মনে হয়েছে, এটি বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা। সেই অপরাধের ন্যায়বিচার আমরা ৭৮ দিনের মধ্যে এনে দিতে সক্ষম হয়েছি।’’