একটি মামলার শুনানিতে এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি পর্যবেক্ষণ, নাবালিকার স্তন চেপে ধরা এবং তার পায়জামার ফিতে ছিঁড়ে দেওয়াকে কোনওভাবেই ধর্ষণ বা ধর্ষণের প্রচেষ্টা বলা যায় না। বিষয়টি আইনের চোখে ‘গুরুতর যৌন নিপীড়ন’ হিসেবেই বিবেচিত হবে।
উত্তরপ্রদেশের কাসগঞ্জে ২০২১ সালে ঘটে যাওয়া এক ঘটনার মামলা চলছিল এলাহাবাদ হাইকোর্টে। অভিযুক্ত দুই যুবক পবন ও আকাশের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, তারা ১১ বছর বয়সি এক শিশুর স্তন চেপে ধরে, তার পায়জামার ফিতে ছিঁড়ে ফেলে তাকে টেনে হিঁচড়ে প্রকাশ্য রাস্তা দিয়ে অন্যত্র চেষ্টা করেছিল। পথচারীরা এগিয়ে এসে বাধা দিলে, তারা পালিয়ে যায়। অভিযোগে বলা হয়, অভিযুক্তরা নাবালিকাটিকে গাড়িতে লিফট দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল, তারপরেই এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটে।
কাসগঞ্জের ট্রায়াল কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, পবন ও আকাশের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারা (ধর্ষণ) এবং পকসো আইনের ১৮ ধারার (ধর্ষণের চেষ্টা) অধীনে বিচার শুরু হওয়ার কথা ছিল। পাল্টা অভিযুক্তরা হাইকোর্টে আপিল করে। এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি রাম মনোহর নারায়ণ মিশ্রর বেঞ্চ নির্দেশ দেয় যে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩৫৪-বি ধারা (অশালীন আচরণ বা জোর করে পোশাক খুলতে বাধ্য করা) এবং পকসো আইনের ৯/১০ ধারা (গুরুতর যৌন নিপীড়ন) অনুযায়ী বিচার চলবে।
এই মামলায় পবনের বাবা অশোকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে। আক্রান্ত নাবালিকার পরিবারের বক্তব্য অনুযায়ী, ঘটনার পর যখন তারা অশোকের কাছে অভিযোগ জানায়, তখন অশোক তাদের গালাগালি করেন ও হুমকি দেন। এই কারণে, আদালত তাঁকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৪ ও ৫০৬ ধারায় অভিযুক্ত করেছে।
উচ্চ আদালত কেন মনে করছে যে এই অপরাধ ‘ধর্ষণের চেষ্টা নয়’?
এই মামলায় বিচারপতি রাম মনোহর নারায়ণ মিশ্রর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ও মামলার তথ্য অনুযায়ী এটি ধর্ষণের চেষ্টার পর্যায়ে পড়ে না। হাইকোর্টের মতে, ধর্ষণের চেষ্টা প্রমাণ করতে হলে ‘প্রস্তুতির স্তর’ অতিক্রম করে ‘আসল প্রয়াসের স্তরে’ পৌঁছতে হবে। অভিযোগের বিবরণে তার উল্লেখ নেই।
বিচারপতি মন্তব্য করেছেন, ‘ধর্ষণের চেষ্টা ও প্রস্তুতির মধ্যে ফারাক রয়েছে। মূল পার্থক্য হল, সংকল্পের মাত্রা। এই মামলায়, উপস্থাপিত তথ্য থেকে বোঝা যায় না, যে অভিযুক্তরা ধর্ষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছনোর সংকল্প করেছিল।’ বিচারপতি আরও বলেন, ‘সাক্ষীদের বক্তব্য থেকে বোঝা যায় না যে, অভিযুক্তদের এই কাজের ফলে আক্রান্ত মেয়েটি নগ্ন হয়েছিল কিনা। এমনও কোনও অভিযোগ নেই, অভিযুক্তরা শিশুটির শরীরে পেনিট্রেট করার চেষ্টা করেছিল কিনা বা যৌনাঙ্গে প্রবেশমূলক যৌন নিপীড়নের চেষ্টা করেছিল কিনা।’
এছাড়াও আদালত নির্দেশে জানিয়েছে যে, ‘আকাশের বিরুদ্ধে অভিযোগ হল, সে ভুক্তভোগীকে কালভার্টের নীচে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল এবং তার পায়জামার ফিতে ছিঁড়ে ফেলেছিল। কিন্তু এটি কোথাও উল্লেখ নেই যে, শিশুটি এই ঘটনায় উলঙ্গ হয়েছিল বা তার পোশাক খুলে গিয়েছিল কিনা।’
-আজকাল