তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অর্থ বাংলাদেশের স্বাধীনতা, আওয়ামী লীগ অর্থ মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার অর্জন, আওয়ামী লীগ অর্থ বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ, আওয়ামী লীগ অর্থই উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ।’
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার বাজেট অধিবেশনে আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপত্বি করছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি এবং ইনশাল্লাহ, এই আওয়ামী লীগ যদি জনগণকে সেবা করার সুযোগ পায় অবশ্যই বাংলাদেশ আগামীতে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে।’
১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর, একরকম জোর করে নির্বাসন থেকে দেশে ফিরে আসার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাবা-মা সব হারিয়ে ফিরে এসেছিলাম এবং একদিকে যেমন আওয়ামী লীগ আমাকে তাদের সভাপতি নির্বাচন করেছিল, পাশাপাশি এদেশের জনগণ, তাদের আশ্রয়েই আমি এসেছিলাম। তাদের মাঝেই আমি খুঁজে পেয়েছিলাম আমার হারানো বাবা, মা এবং ভাইদের স্নেহ। তাই এ দেশের মানুষের জন্য যেকোনো আত্মত্যাগেই আমি সবসময় প্রস্তুত।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আমরা নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পেরেছি। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, গণমানুষের সমর্থন নিয়েই আমরা সেটা করেছি। এভাবেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং আর কখনো পরমুখাপেক্ষী হবে না। কারো কাছে হাত পেতে চলবে না। আত্মমর্যাদা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণকে আমি স্যালুট করি এবং আওয়ামী লীগের অগনিত নেতাকর্মীদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জনগণেরই সংগঠন এবং সবসময়ই এদেশের শোষিত-বঞ্চিত নিপীড়িত মানুষের জন্যই সংগ্রাম করে গেছে। আর এই সংগ্রাম করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, কত পরিবার কষ্ট পেয়েছে, কত মানুষ জীবন দিয়েছে তাদের সেই আত্মত্যাগকে আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। মৃত্যুবরণকারিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৩ বছরের সংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বাধীন জাতি হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি এবং এই বাংলাদেশ নামটিও জাতির পিতারই দেয়া। আর এই আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে তোলার জন্য ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে প্রতিষ্ঠাকালিন নাম ‘পূর্ববাংলা আওয়ামী মুসলিম লীগ’ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেয়া হয়। সেই সঙ্গে দল মত নির্বিশেষে সকলের জন্য এর দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। আর স্বাধীন বাংলাদেশে কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ নামের সঙ্গেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং জনমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম জড়িত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা মাত্র সাড়ে ৩ বছর দেশ পরিচালনার সুযোগ পেয়েছিলেন এবং সেই সময়ের মধ্যে তিনি একটি প্রদেশকে রাষ্ট্রে উন্নীত করেন এবং আমাদের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন করে যান। অতি অল্প সময়ের মধ্যে ১৯৭৫ সালে দেশটি জাতিসংঘ কর্তৃক স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা লাভ করে। দুর্ভাগ্য আমাদের ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির জীবনে অমানিষার আঁধার নেমে নেমে আসে।
তিনি বলেন, সেদিন আমরা শুধু জাতির পিতাকেই হারাইনি, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সব সম্ভাবনাকেও হারিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাস বিকৃত হয় এবং যে স্লোগান দিয়ে এদেশের মানুষ বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনেছিল সেই ‘জয় বাংলা’ও নির্বাসিত হয়। সেই সঙ্গে ইতিহাস থেকেও জাতির পিতার নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ২১ বছর পর, আওয়ামী লীগ এবং পরবর্তীতে ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর আজকে বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে।
আগামীতে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সেই পরিকল্পনাও তার সরকার তৈরি করে দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে, সরকার প্রধান বলেন, ২১০০ সালের জন্য শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা প্ল্যান করে দিয়েছি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ যাতে উন্নত সমৃদ্ধ হয় সে পরিকল্পনাও তৈরি করে দিয়েছি। এই ধারবাহিকতা নিয়ে এদেশ চলতে থাকলে, এদেশের অগ্রযাত্রা আর কেউ থামাতে পারবে না, রুখতে পারবে না, এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
আওয়ামী লীগের অগনিত নেতা-কর্মী সবসময় ঝড়-বৃষ্টি, বন্যা, ক্ষরাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবসময় দেশের মানুষের পাশে আছে উল্লেখ করে দলটির সভাপতি বলেন, সরকারে থাকি আর বিরোধী দলে থাকি, যখনই বাংলার মানুষ কোনো সমস্যায় পড়েছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সবসময় ঝাঁপিয়ে পড়েছে এবং তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করেছে। এবারের চলমান সিলেট সুনামগঞ্জ এবং নেত্রকোনার বন্যা পরিস্থিতি যদি দেখেন তাহলেও দেখবেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই সেখানে আগে গেছে এবং তাদের সাহায্য করেছে। আর এভাবে মানুষের সেবা করাটাই আমাদের কর্তব্য এবং দায়িত্ব, মানুষের সেবা করাটাই আমাদের আদর্শ এবং এটাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনর মাধ্যমে আমরা ভোট ও ভাতের অধিকার ও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে পুণঃপ্রতিষ্ঠা করেছি। আর যা করতে গিয়ে আমরা বহু নেতাকর্মীকে হারিয়েছি। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে এই স্বাধীন বাংলাদেশেও অনেককে জীবন দিতে হয়েছে। আর তাদের সেই আত্মত্যাগের মধ্যদিয়েই আজ আমরা জনগণকে সেবা করার অধিকার যেমন পেয়েছি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি এবং আজ ধারাবাহিক গণতন্ত্র আছে বলেই বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে।