*করোনার চেয়ে ভয়ংকর মাঝিরঘাটের ধুলো!
*আগামী মাসে সংস্কার কাজ শেষ হবে: প্রকল্প পরিচালক
*নাজমুল হোসেন*
চট্টগ্রাম: নগরীর ব্যস্ততম সড়ক স্ট্র্যান্ড রোড। সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত এই সড়কটিতে প্রতিনিয়ত অসংখ্য পণ্যবাহী বড় যানের চলাচল থাকলেও রাস্তার ভয়াবহ দুরবস্থা যেন নিত্যসঙ্গী। রাস্তাজুড়ে ছোট বড় অসংখ্য গর্তের পাশাপাশি ধুলাবালিতে নাজেহাল অবস্থা চলাচলরত যানবাহন ও পথচারীদের।
মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা যায়, যতদূর চোখ যায় যেন যুদ্ধ বিধ্বস্ত এক শহর। সবদিকেই ধুলা আর ধুলা। ধুলার কারণে এক হাত দূরেও স্পষ্ট দেখা যায় না। বাসা থেকে বের হতেই ধুলায় ধূসর হয়ে যায় এলাকার বাসিন্দারা। ধুলা উড়িয়ে সড়কজুড়ে দাপিয়ে বেড়ায় বন্দরকেন্দ্রিক বড় বড় পণ্যবাহী গাড়িগুলো। আর চার পাশজুড়ে উন্নয়নমূলক সংস্থাগুলোর বিভিন্ন প্রকল্পত রয়েছে।
যদিও, ক’দিন আগে সিটি প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের কঠোর নির্দেশনায় পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করলেও এখন আর পানি ছিটানো হয়না। নতুন মেয়রও যেনো ভাগ্য ফেরাতে পারেনি এই এলাকার বাসিন্দাদের।
মাঝিরঘাট স্ট্র্যান্ড রোড হয়ে মাদারবাড়ী পর্যন্ত এলাকায় চলছে পানি নিষ্কাশনের জন্য নতুন নালা নির্মাণের কাজ। ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় যা বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।
সেনাবাহিনী-৩৪ ইসিবি’র প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী বিজনেসটুডে২৪কে বলেন, আমরা ওখানে কাজটা দ্রুত শেষ করে দিচ্ছি। বেশ কয়েকবার আমরা গিয়ে এটা দেখেছি। নতুন করে নির্মিত নালার উপর স্ল্যাব ঢালাই শেষ হয়েছে আর অল্প কিছু কাজ বাকি আছে। আগামী মাসের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ হবে ইনশাআল্লাহ।
এছাড়া, ধুলার কারণে ব্যবসা বাণিজ্য গুটিয়ে অনেকে ছেড়েছেন এলাকা। মুদিদোকানসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবসায়ীরাই এলাকা ছাড়া হয়েছেন বেশি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এক দিন পরই রোজা, রোজা রেখে এই এলাকায় বসবাস করা অসম্ভব। এলাকার চলমান জলবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প, সড়কজুড়ে নিয়ন্ত্রণহীন ভারী গাড়ি চলাচলসহ বেশকিছু কারণ একসাথে যুক্ত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে এমন বেহাল দশা। অথচ চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে সারাদেশে মালামাল পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এটি। মাঝিরঘাট, ইয়াকুব ঘাট, ইউসুফ ঘাটসহ বিভিন্ন ঘাট হয়ে কোটি টাকার পণ্য দৈনিক শত শত ট্রাকে পরিবহন হচ্ছে সারাদেশে।
ধুলার দাপট থেকে বাঁচতে মাঝিরঘাট সড়কের সামনে একটি অংশে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছিলেন হোটেলের দোকানদার সাগর।
তিনি বলেন, এভাবে প্রতিদিন অন্তত ৬ থেকে ৭ বার পানি ছিটাই। খাবারের দোকান হওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে পানি ছিটাই।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি করেন ইয়াসির আরাফাত সানি। তিনি জানান, প্রতিদিন বাইকে করে অফিসে যেতে মনে হয় রোলার-কোস্টারে করে অফিসে যাই। ব্যাগে করে অতিরিক্ত জামাকাপড় নিয়ে যেতে হয়। মাঝে মাঝে বাইক স্লিপ কেটে পড়েও যায়।
তিনি আরও বলেন, আমরা নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এই এলাকার বাসিন্দা ও আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের তরুণ চিকিৎসক মেহেদী হাসান ইমরান বিজনেসটুডে২৪কে বলেন, বায়ুর মান শূন্য থেকে ৫০ পিএম২.৫ থাকলে সেটাকে বিশুদ্ধ বায়ু বলা হয়। কিন্তু এই এলাকার বায়ুতে বসবাসের অযোগ্য। এমন পরিবেশের কারণে শ্বাসকষ্ট জনীত সকল রোগ যেমন ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া,হুপিং কাশিসহ বর্তমান সময়ের মহামারি কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য ভয়াবহ অবস্থা। তিনি আর বলেন, করোনার চেয়ে ভয়ংকর এই এলাকার ধুলো।
সরেজমিনে আরো দেখা গেছে, পুরাতন কাস্টমস রোড়ে কোন রকম পানি ছিটানো ছাড়াই সড়কে ঝাঁড়ু দিচ্ছেন সিটি কর্পোরেশনের একদল পরিচ্ছন্নকর্মী। এতে পরিছন্ন হওয়া তো দূরেই থাক উল্টো ধুলার উড়াউড়ি বেড়ে সে পথে হাঁটা চলা হয়ে উঠছে কষ্টসাধ্য।
চলমান বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজগুলোতে একেতো তদারকি নেই। নগরে চালু হওয়া পানি ছিটানোর গাড়িগুলোরও দেখা নেই। সেই সাথে ধুলাবালিতে নিমজ্জিত এলাকাগুলোতে ঝাঁড়ু দেওয়ার সময় পানি ছিটানোর কোন নির্দেশনা আদৌ দেওয়া হয়েছে কিনা এমনটা জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে ফোন কল রিসিভ করেননি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নুরী বিজনেসটুডে২৪ কে বলেন, ‘মাঝিরঘাটের উন্নয়ন প্রকল্প সম্পর্কে আমরা অবহিত ছিলাম না। এ বিষয়ে কেউ অনুমতিও নেননি। যে যার ইচ্ছামতো কাজ করে যাচ্ছে।
সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বিজনেসটুডে২৪কে বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই এলাকায় আমি সরেজমিনে গিয়েছি। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে নালার সংস্কার কাজ শেষ হলে রাস্তার কাজ শেষ করা হবে।