মোঃআরিফুল ইসলাম, ফুলবাড়ী(কুড়িগ্রাম) থেকে: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ি কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে। ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন স্থাপনাটি অবহেলা-অযত্নে পড়ে আছে।যা এখন প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
তৎকালীন অবিভক্ত ভারতবর্ষের নাওডাঙ্গা পরগনার জমিদার বাহাদুর প্রমদারঞ্জন বক্সী বাড়িটি নির্মাণ করেন।
পরবর্তীতে জমিদারীর উত্তরসুরী বীরেশ্বর প্রসাদ বক্সী নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়িতে একটি মাইনর স্কুল এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। যা বর্তমানে নাওডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে পরিচিত। বীরেশ্বর প্রসাদ বক্সী শ্রীকৃষ্ণের পুণ্য জন্মতিথিতে প্রতি দোলপূর্ণিমায় নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ির সামনের মাঠে দোল মেলার আয়োজন শুরু করেন। যা এখনও চালু রয়েছে।
জমিদারদের শাসন আমলে এই পরগনার অধীন ছিল, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বিদ্যাবাগিশ, শিমুলবাড়ী, তালুক শিমুলবাড়ী, কবির মামুদ প্রভৃতি। পাঙ্গা এলাকায় এ জমিদারের আরেকটি জোত ছিল। এটির দেখাশোনাসহ পূর্ণ পরিচালনার ভার ন্যস্ত ছিল শিবপ্রসাদ বক্সীর ওপর। তার ছিল ৩ ছেলে। বীরেশ্বর প্রসাদ বক্সী, বিশ্বেশ্বর প্রসাদ বক্সী ও বিপুলেশ্বর প্রসাদ বক্সী। এর মধ্যে বীরেশ্বর প্রসাদ বক্সীকে পরে জমিদারের দায়িত্বভার দেওয়া হয়।
এদিকে জমিদার প্রমদরঞ্জন বক্সীকে নিয়ে তার বাকি ২ ছেলে কুচবিহারে থাকতে শুরু করেন। শেষ জমিদার হিসেবে বিশ্বেশ্বর প্রসাদ বক্সী আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন তার জমিদারি টিকিয়ে রাখার। কিন্তু জমিদারি বিলুপ্ত হয়ে গেলে পরে তিনিও কুচবিহারে পাড়ি জমান। আর এ ভাবেই এই জমিদার বংশের জমিদারীর ইতি ঘটে।
তিনি চলে যাওয়াতে নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ি একদম অভিভাবক শুন্য হয়ে পড়ে। এক সময় জমিদার বাড়িতে রাণীর গোসলখানা, শোবার ঘর, কয়েদি খানাসহ আরও বেশ কয়েকটি ঘর থাকলেও এখন সেসবের খুব কম অংশই অবশিষ্ট আছে। দাঁড়িয়ে থাকা সামনের প্রবেশদ্বারটি প্রায় ১০০ মিটার উঁচু এবং বাড়ির পাশে রয়েছে ত্রিশ ফুট উঁচু শিব মন্দির।
শিব মন্দিরটি সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গেলে এটি সংস্কার করা হয়। এখনও অনেক সনাতন ধর্মের মানুষ শিব মন্দিরে আসেন পূজা অর্চনা করতে। এছাড়াও জমিদার বাড়ির ভেতরে রয়েছে একটি দুর্গা মন্দির। দুর্গা মন্দিরের সংস্কারের পর থেকে সনাতন ধর্মের মানুষজন এখানে গীতা পাঠের আসরে ভিড় করেন। এক সময়ের জৌলুসময় জমিদার বাড়ি এখন বিলুপ্তির পথে। ইট-চুন-সুড়কি দিয়ে নির্মিত এই জমিদার বাড়ির পশ্চিম দিকের দোতলা ভবন ভেঙ্গে গেছে। এছাড়াও বেশিরভাগ দালানেরই ছাদ অবশিষ্ট নেই। পশ্চিমের একটা দোতলা দালানও ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে তারা।
অবশিষ্ট আছে সামনের মূল দালান ও ভেতরের একটা ছোট কাটরা। স্থানীয়রা সেখান থেকেও বিম ও ইট খুলে নিয়ে গেছে। শত বছরের পুরোনো এ স্থাপনাকে আশ্রয় করে বেড়ে উঠছে কিছু অপ্রয়োজনীয় গাছ। তাই সংস্কার আর সংরক্ষণের অভাবে ফুলবাড়ীর মানচিত্র থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ি নামে এ প্রাচীন স্থাপনা ।