Home First Lead নজিরবিহীন সংকট থেকে নজিরবিহীন সাফল্য

নজিরবিহীন সংকট থেকে নজিরবিহীন সাফল্য

  • দু’মাসে অফডকে ৭৮,৪৯৭ টিইউস স্থানান্তর

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম: নজিরবিহীন সংকট থেকে দু’মাসে নজিরবিহীন সাফল্য অর্জন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। বহির্নোঙরে অপেক্ষমান কন্টেইনারবাহী জাহাজের সংখ্যা ৯টি। দু’মাস আগে তা ছিল ৩৩টি।

ইয়ার্ডে এখন কন্টেইনার রয়েছে ৩৪ হাজার টিইউস। দু’মাস আগে তা ছিল ৪৮ হাজার টিইউসের বেশি। এই দুই মাসে বেসরকারি আইসিডিসমূহ আমদানি পণ্যভর্তি ৭৮,৪৯৭ টিইউস  কন্টেইনার নিয়ে গেছে সেখান থেকে ডেলিভারির জন্য।

কন্টেইনার জটের জেরে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল বন্দরে। একেবারে থমকে গিয়েছিল ।অতীতে কখনও এমন সংকটে পড়তে হয়নি। জাহাজ থেকে কন্টেইনার খালাস, রপ্তানি পণ্যভর্তি কন্টেইনার শিপমেন্ট, ইয়ার্ড থেকে ডেলিভারি সবকিছুতে নেমে এসেছিল একেবারে ধীরগতি। তা নিরসনে গলদগর্ম হতে হয়েছে কেবল বন্দর কর্তৃপক্ষকে নয়, সরকারি প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়েও। করোনাভাইরাস রোধে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে ডেলিভারি না থাকায় সমস্যা তৈরি হয় বন্দরে। কন্টেইনার নিয়ে আসা জাহাজকে বহির্নোঙরে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষমান থাকতে হয়েছে। জেটিতে জাহাজ থেকে কন্টেইনার নেমেছে একেবারে ধীরগতিতে। ইয়ার্ডের সবখানে ছিল ভর্তি। তাই জাহাজ থেকে কন্টেইনার নামিয়ে রাখার জায়গা ছিল না। বন্দরে কন্টেইনার রাখার সক্ষমতা  ৪৯,০১৮ টিইউসের। তা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

শিপিং সংশ্লিষ্টরা জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে বন্দর প্রশাসন তাদের সর্বোচ্চ দক্ষতা ও আন্তরিকতা দিয়ে প্রচেষ্টা চালিয়েছে। ‘নজিরবিহীন সংকট’ থেকে এত কম সময়ে উত্তরণকেও বলা যায় ‘নজিরবিহীন’। রাতদিন ২৪ ঘণ্টা কাজ করেছে ট্রাফিক বিভাগসহ কয়েকটি বিভাগ। সংকট নিরসনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)কে অনুরোধ জানানো হয় সবপণ্য বেসরকারি অফডকসমূহে সংরক্ষণ ও সেখান থেকে ডেলিভারির অনুমোদনের জন্য।  সেই অনুমোদন পাওয়ার পর পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে। আগে অনুমোদন ছিল কেবল ৩৮ রকমের পণ্য অফডক থেকে ডেলিভারির। সব আমদানি পণ্যে সেই সুবিধা উন্মুক্ত করে দেয়ার পর সংকট কেটে যায়।

নুরুল কাইয়ুম খান

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো এসোসিয়েশন ( বিকডা ) চেয়ারম্যান নুরুল কাইয়ুম খান বিজনেসটুডে ২৪ প্রতিনিধিকে জানান, বেসরকারি আইসিডিসমূহ  দেশব্যাপী  করোনা  লকডাউনের  সময়ে   চট্টগ্রাম  বন্দরকে  শুধুমাত্র  নজিরবিহীন একটি বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেনি, এই আইসিডি সেবাখাত আরও একবার দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে দেশের অর্থনীতিতে, দেশের সরবরাহ শিকল ব্যবস্থাপনায় তাদের অপরিহার্যতা, প্রয়োজনীয়তা ও উপযোগিতা বলিষ্ঠভাবে প্রমাণ করেছে। এ প্রসঙ্গে জানান, ২৪ এপ্রিল হতে ২৪ জুন পর্যন্ত দু’মাসে আইসিডিসমূহ ৭৮,৪৯৭ টিইউস আমদানি পণ্যবাহি কন্টেইনার বন্দর হতে স্ব স্ব ইয়ার্ডে স্থানান্তর করেছে। এসময়ে ইয়ার্ড হতে ৭৩,৭৫৭  টিইউস আমদানি পণ্য ডেলিভারি দেয়া হয়েছে। মহাসংকট থেকে বন্দরের যে উত্তরণ তা সম্ভব হয়েছে আমদানি পণ্যভর্তি কন্টেইনার বেসরকারি অফডকসমূহে স্থানান্তরের কারণে।

আরও জানান, এখন কন্টেইনার জাহাজের বহির্নোঙরে অপেক্ষার সময় কমে গেছে। বার্থে আসার পর নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পণ্য খালাস ও লোড নিয়ে ফিরে যেতে পারছে। জুন মাসে ২০ তারিখ পর্যন্ত ৯২টি জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে বন্দরে। এগুলোর অপেক্ষমাণ সময় কমে যাওয়ায় প্রতিটির ৬০ হাজার ডলার হিসেবে মোট প্রায় ৫৫ লাখ ডলার সাশ্রয় হয়েছে। পণ্যভর্তি কন্টেইনার অফডকে নিয়ে যাওয়ায় এই বিপুল সাশ্রয় সম্ভব হয়েছে বলে উল্লেখ করেন নুরুল কাইয়ুম খান।

তিনি দাবি করেন যে বিমান বন্দরগামী সড়ক এবং বন্দর অভ্যন্তরকে যানমুক্ত রাখতেও অফডকগুলোর ভূমিকা প্রচুর।আমদানি করা সব পণ্য অফডক থেকে ডেলিভারিতে প্রতিদিন ৩০ হাজার ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান যাতায়াত করেছে। অফডক থেকে ডেলিভারির সুযোগ না থাকলে এসব ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান প্রবেশ করতো বন্দরে। তাতে রাস্তায় যানজট হতো।