বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
ফাইজারের টিকা করোনার নতুন স্ট্রেনকে নষ্ট করার মতো ক্ষমতা রাখে। কিন্তু যদি দরকার পড়ে, তাহলে নতুন টিকাও তৈরি করা যেতে পারে খুব তাড়াতাড়ি, আশ্বাস দিলেন জার্মানির বায়োএনটেকের প্রতিষ্ঠাতা, শীর্ষ বিজ্ঞানী ডক্টর উগার সাহিন।
করোনার নতুন স্ট্রেন ১৭ বার জিনের বিন্যাস বদলে ফেলেছে। এত ঘন ঘন জিনগত বদল বা জেনেটিক মিউটেশন করোনার অন্য কোনও স্ট্রেনের মধ্যে আগে দেখা যায়নি। তাই নতুন ভাইরাল স্ট্রেনকে হাইলি ‘মিউট্যান্ট’ বলছেন বিজ্ঞানীরা। জিনের বিন্যাস এত দ্রুত বদলাচ্ছে এই নতুন ভাইরাল স্ট্রেন যে এর ছড়িয়ে পড়ার গতিও সাঙ্ঘাতিক। ৭০ শতাংশ দ্রুত বেগে মানুষের শরীরে সংক্রামিত হতে পারে নতুন করোনা। একে তাই ‘সুপার স্প্রেডার’ বলছেন গবেষকরা।
একে করোনাভাইরাসকে কাবু করতে হিমশিম খাচ্ছে গোটা বিশ্ব, তার মধ্যেই ব্রিটেনের নতুন সংক্রামক ভাইরাল স্ট্রেনের আবির্ভাবে রীতিমতো চিন্তা বেড়েছে। যদিও বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন স্ট্রেন কতটা সংক্রামক তা এখনও জানা যায়নি। জটিল রোগের খবর মেলেনি। ভ্যাকসিনের ওপর এই নতুন ভাইরাল স্ট্রেন প্রভাব ফেলবে না বলেই দাবি করেছেন গবেষকরা।
মেসেঞ্জার আরএনএ টেকনোলজিতে তৈরি টিকা নতুন করোনাকে ঘায়েল করবে
বায়োএনটেকের প্রধান উগার সাহিন বলেছেন, বার্তাবহ আরএনএ বা মেসেঞ্জার আরএনএ (mRNA) সিকুয়েন্সকে কাজে লাগিয়ে তৈরি টিকা নতুন ভাইরাল স্ট্রেনকে কব্জা করতে পারবে। বায়োএনটেক ও ফাইজারের যৌথ উদ্যোগে যে টিকা তৈরি হয়েছে তাও আরএনএ (রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) টেকনোলজিতেই। বার্তাবহ আরএনএ-র বিন্যাসকে কাজে লাগিয়েই ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট BNT162 তৈরি হয়েছে। বার্তাবহ আরএনএ-র কাজ হল কোষে কোষে খবর পৌঁছে দেওয়া। তাই আএনএ সিকুযেন্সকে কাজে লাগিয়ে তৈরি ভ্যাকসিন যে কোনও সংক্রামক প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করতে পারবে বলেই দাবি গবেষকের। বলেছেন, এই ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট তৈরির জন্য সার্স-কভ-২ ভাইরাসের সংক্রামক আরএনএ স্ট্রেন স্ক্রিনিং করে আলাদা করে প্রথমে ল্যাবরেটরিতে বিশেষ উপায় পিউরিফাই করা হয়েছে। এই পর্যায়ে ভাইরাল স্ট্রেনকে এমনভাবে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয় যাতে শরীরে ঢুকলে তার সংক্রামক ক্ষমতা কমে যায়। এই নিষ্ক্রিয় বা দুর্বল আরএনএ স্ট্রেন তখন কোষে ঢুকে প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে না। অথচ এই জাতীয় ভাইরাল স্ট্রেনের খোঁজ পেলেই সক্রিয় হয়ে ওঠে বি লিম্ফোসাইট কোষ বা বি-কোষ। নিজেদের অজস্র ক্লোন তৈরি করে রক্তরসে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে শুরু করে। পাশাপাশি, ভাইরাল অ্যান্টিজেনকে ভাল করে চিনেও রাখে। ফের যদি এমন অ্যান্টিজেনের খোঁজ পায় তাহলে খুব দ্রুত যাতে রোগ প্রতিরোধ বা ইমিউনিটি পাওয়ার গড়ে তুলতে পারে। এই প্রক্রিয়াকে বলে অ্যান্টিবডি বেসড ইমিউন রেসপন্স বা অ্যাডাপটিভ ইমিউন রেসপন্স (Adaptive Immune Response)।
উগার বলছেন, ভাইরাসের যে কোনও মিউট্যান্ট স্ট্রেনের জন্যই কার্যকরী হবে এই টিকা। তবে দরকার পড়লে আরএনএ টেকনোলজিতেই নতুন টিকা তৈরি করা যাবে যা শুধুমাত্র এই নতুন ভাইরাল স্ট্রেনকেই নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারবে। নতুন ভাইরাল স্ট্রেন তার স্পাইক প্রোটিনে অ্যামাইনো অ্যাসিডের কোড মুছে দিচ্ছে। N501Y নামে মিউটেশন হচ্ছে যেখানে একদিনে অ্যামাইনো অ্যাসিডের বিন্যাস বদলাচ্ছে, অন্যদিকে ভাইরাসের রিসেপটর বাইন্ডিং ডোমেন আরও শক্তপোক্তভাবে দেহকোষের রিসেপটরকে আঁকড়ে ধরতে পারছে। ফলে দ্রুত কোষের ভেতরে ঢুকে পড়তে পারছে। নতুন টিকা তৈরির সময় মিউটেশন বা জিনের গঠন বদলের এই প্রক্রিয়াকেই নকল করা হবে। দেহকোষ যাতে ভাইরাসের এমন জিনগত বদলের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে এবং সেই মতো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে। প্রয়োজন হলে আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে এমন নতুন টিকা তৈরি করে ফেলা যাবে বলে জানিয়েছেন উগার সাহিন।