চট্টগ্রামের দুঃখ-বঞ্চনাগাঁথারও যেন শেষ নেই। সমৃদ্ধি-সম্ভাবনা সবই আছে, তারপরও কোথায় যেন না পাওয়ার বঞ্চনা চট্টগ্রামের নাগরিকরা প্রতি পদেপদে অনুভব করছেন: সুজন
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: অতীতে যাঁরা জনদুর্ভোগ নিরসনে ভূমিকা রাখেননি, সরকারি বরাদ্দের অপব্যবহার করেছেন আগামী নির্বাচনে তাদেরকে প্রত্যাখ্যান এবং সৎ, যোগ্য ও ভালো মানুষকে নির্বাচিত করার আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিকউদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।
তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস, সংঘাত, সহিংসতা নয়- নির্বাচন হোক সৎ, যোগ্য ও ভালো নেতৃত্ব নির্বাচনের মহোৎসব।’ বুধবার সকালে নগরীর ক্লাব ফোর কনভেনশন হলে সাংবাদিকদের সাথে চলমান বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচান প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন খোরশেদ আলম সুজন।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাগরিকউদ্যোগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. ইলিয়াছ, আব্দুর রহমান মিয়া, রুহুল আমিন তপন, সাইদুর রহমান চৌধুরী, মহানগর যুবলীগের সভাপতি মাহাবুবুল হক সুমন, নুরুল কবির, মোরশেদ আলম, মো. সেলিম, জাহেদ আহমদ চৌধুরী, ডা. অঞ্জন কুমার দাশ, অনির্বাণ দাশ বাবু, সমীর মহাজন লিটন, মো. বাবলু, ফেরদৌস মাহমুদ আলমগীর, রকিবুল আলম সাজ্জি, আব্দুর রহিম জিল্লু, পাভেল ইসলাম, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম ইমরান আহাম্মেদ ইমু, মনিরুল হক মুন্না প্রমূখ।
জননেতা খোরশেদ আলম সুজন বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হয়েছে। প্রার্থীরা আপনাদের দুয়ারে-দুয়ারে হাজির হয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে নাগরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়ে নাগরিকউদ্যোগের বক্তব্য তুলে ধরার জন্য এই সংবাদ সম্মেলন। তিনি বলেন,
দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, এটা শতভাগ সত্য। তারপরও নাগরিকদের অনেক সমস্যা-অসুবিধা আছে। দেখা গেছে, অনেকে নির্বাচিত হওয়ার পর আর জনগণের খোঁজখবরই রাখেননি বা সরকার যে বরাদ্দ দিয়েছে সেটা ঠিকভাবে ব্যবহারও করেননি। দেখা যাচ্ছে, এমন অনেকেই আবারও প্রার্থী হয়ে এসে জনগণের কাছে ভোট চাচ্ছে। সৎ, যোগ্য ও ভালো মানুষকে নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে আমরা নাগরিকরা যাতে কোনো ভুল না করি বা কোনো সস্তা প্রলোভনে যাতে মোহগ্রস্ত না হই, সেই বিষয়টি বিনয়ের সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আমরা নাগরিকদের দায়িত্ব-কতর্ব্যের বিষয়ও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। যিনি আমাদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে নিজেকে রাজার আসনে বসিয়ে আমাদের চাওয়া-পাওয়াকে উপেক্ষা করেছেন, আমাদের কথা বলেননি, আসুন আমরা তাকে প্রত্যাখান করি, আসুন আমরা তাকে জবাব দিই ভোটের মাধ্যমে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই দায়িত্ব তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, একাধিক ফ্লাইওভার, জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নসহ হাজার-হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে চট্টগ্রামকে বদলে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এত উন্নয়নের পরও চট্টগ্রামের কোথাও কোথাও নাগরিকদের কাছ থেকে এখনও হতাশার সুর ভেসে আসে। যেমন- চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর একটি সড়কসহ রেলসেতু নির্মাণের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে। এ সেতুর সমস্যা শুধু বোয়ালখালী বা দক্ষিণ চট্টগ্রামের নয়। কক্সবাজার, মহেশখালী, মাতারবাড়ি এবং চীন পর্যন্ত সড়ক নেটওয়ার্ককে কেন্দ্র করে বহুমাত্রিক উন্নয়নমুখী অর্থনীতির যে মহাযাত্রা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুরু করেছেন, সেজন্য এ সেতু অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এ মুহুর্তে সর্বাগ্রে প্রয়োজন, পদ্মা বা যমুনা সেতুর মতো আলাদা অথরিটি প্রতিষ্ঠা করে কালুরঘাট সেতুর কাজ শুরু করা। শুধু বোয়ালখালী নয়, চট্টগ্রামের সকল প্রার্থীকে একযোগে ওয়াদা করা উচিৎ যে, তারা নির্বাচিত হতে পারলে সম্মিলিতভাবে এ সেতু বাস্তবায়নে কাজ করবেন।
খোরশেদ আলম সুজন বলেন, পাহাড়-নদী-সাগরের মিলনমোহনার জনপদ এই বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। যে সবুজের সমারোহ একদিন এই জনপদকে দেশ-বিদেশের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছিল, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বর্ণদুয়ার হিসেবে যে চট্টগ্রাম সুদীর্ঘকাল ধরে বিবেচিত হয়ে আসছে, সেই চট্টগ্রামের দুঃখ-বঞ্চনাগাঁথারও যেন শেষ নেই। সমৃদ্ধি-সম্ভাবনা সবই আছে, তারপরও কোথায় যেন না পাওয়ার বঞ্চনা চট্টগ্রামের নাগরিকরা প্রতি পদেপদে অনুভব করছেন। এ কী শুধু আবহমান ধরে চলা বঞ্চনার মর্মগাঁথা না কি যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তাদের তা পালনে অক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ- এ প্রশ্ন আজ নাগরিকদের মনে সঞ্চার হয়েছে।
ছবির ক্যাপশন:
সাংবাদিকদের সম্মানে আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজে বক্তব্য রাখছেন নাগরিকউদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।