নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আরও তীব্র হচ্ছে ভারতের উত্তর-পূর্ব জুড়ে। ইতিমধ্যেই অসম ও ত্রিপুরায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা। নামানো হয়েছে সেনা। কিন্তু তাতেও প্রতিবাদ কমছে না। ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের হাত কেটে রক্ত দিয়ে পোস্টার লিখে প্রতিবাদ জানাচ্ছে এই বিলের বিরুদ্ধে।
এদিন সন্ধ্যা সাতটা থেকেই অসমের তিনসুকিয়া, কামরূপ, গোলাঘাট, দিসপুর, ধেমাজি, শিবসাগর, জোরহাট-সহ একাধিক জায়গায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা। ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে নানারকম গুজব ছড়ানোর আশঙ্কায় অসম সরকারের মিনিস্ট্রি অফ হোম অ্যাফেয়ার্স-এর তরফ জারি করা হয়েছে এই নিষেধাজ্ঞা । আপাতত আগামী ২৪ ঘণ্টা থাকবে এই নিষেধাজ্ঞা। ত্রিপুরাতেও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা।
আপাতত উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে মোট ৫ হাজার আধা সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। অসমে এদিন দিসপুর, গুয়াহাটি, ডিব্রুগড় এবং জোরহাটে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। কয়েকজন মহিলা সহ আহত হয়েছেন ২৫ জন। তাঁদের মধ্যে সাংবাদিক ও টিভি চ্যানেলের কর্মীরাও আছেন।
তারপরেও ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিবাদে নেমেছে গুয়াহাটির রাজপথে। হাত কেটে পোস্টার লেখার কাজ চলছে। এই প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন প্রচুর মানুষ। অসমের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী জুবিন গর্গ আগামীকাল গুয়াহাটিতে পথে নামার ঘোষণা করেছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের এই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন উত্তর-পূর্বের বহু বিখ্যাত ব্যক্তি।
বুধবার অসমের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বন্ধ ডাকে অসমের সমস্ত ছাত্র সংগঠন এবং নর্থ ইস্ট স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন। এসএফআই, ডিওয়াইএফআই, এআইএসএফ, আইসা-সহ একাধিক বামপন্থী ছাত্র সংগঠনও সামিল হয়েছে এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ মিছিলে। গুয়াহাটি শহরের বিভিন্ন এলাকায় উঠেছে নাগরিকত্ব বিল বিরোধী স্লোগান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের কুশপুতুলও পোড়ায় বিক্ষোভকারীরা। রাস্তার উপর টায়ার জ্বালিয়ে চলে প্রতিবাদ। ডিব্রুগড় জেলায় সিআইএসএফ কর্মীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিও হয় বন্ধ সমর্থকদের। দুলিয়াজান জেলায় অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের অফিসে কর্মীদের ঢুকতে বাধা দেয় বিক্ষোভকারীরা। সেই সময় দু’পক্ষের হাতাহাতিতে দু’জন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন বলে খবর।
পুরাকে নাগরিকত্ব বিলের আওতা থেকে বাইরে রাখার দাবিতে মঙ্গলবার আগরতলায় বিক্ষোভ দেখায় জনতা। ধলাই জেলায় একটি বাজারে আগুন লাগিয়ে দেয় তারা। অসম এবং ত্রিপুরা-সহ উত্তর-পূর্বের একাধিক রাজ্য এখন ফুঁসছে। বনধের জেরে পরিস্থিতি বেসামাল হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অসমে বিজেপির সদর দফতর, অসম গণ পরিষদ, দুরদর্শন কেন্দ্র এবং অসমের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার স্ত্রীর মালিকানায় থাকা একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের অফিসে সামনে ধর্নায় বসেন বিক্ষোভকারীরা। লাগাতার চলতে থাকে নাগরিকত্ব বিল বিরোধী স্লোগান। অসমের পরিস্থিতি এতটাই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে যে মুখ্যমন্ত্রী সোনোয়াল-সহ রাজ্যের একাধিক মন্ত্রীর কনভয়ের রুট পরিবর্তন করা হয়। উত্তর-পূর্ব ফ্রন্টিয়ার রেলের তরফে বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, অবরোধের কারণে বহু ট্রেন বাতিল করা হয়েছে।