কলেজছাত্রকে বিয়ে করে ভাইরাল হওয়া সেই অধ্যাপিকার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
নাটোর: কলেজছাত্রকে বিয়ে করে ভাইরাল হওয়া নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর মোজাম্মেল হক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক খায়রুন নাহারের অস্বাভাবিক মৃত্যু হত্যা না আত্মহত্যা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য পুলিশের অপেক্ষা এখন ময়না তদন্ত রিপোর্টের জন্য।
পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, বিষয়টি আত্মহত্যার মতোই মনে হচ্ছে। তারপরও মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত স্বামী মামুন বাইরে থাকাসহ সব পয়েন্ট মাথায় রেখেই তদন্ত শুরু হয়েছে। আশা করা যায় খুব তাড়াতাড়ি পুলিশ মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটন করতে সক্ষম হবে।
নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক আব্দুল মোমিন জানান, রবিবার বিকেলে খায়রুন নাহারের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। শরীরে আঘাতে কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। শ্বাসরোধ হওয়ার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অসম বিয়ের কারণে শিক্ষিকার সঙ্গে অনেকের খারাপ ব্যবহার, কথা না বলা, স্বামী নেশাগ্রস্ত হওয়া ও ফেসবুকে মানুষের ক্রমাগত নেচিবাচক মন্তব্যের কারণে বিপর্যস্ত ছিলেন কলেজ শিক্ষিকা। হয়তো এ কারণে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।
কলেজ শিক্ষক আমানুল ইসলাম আমান জানান, খায়রুন রাজশাহী কলেজে দর্শন বিষয়ে অনার্সে পড়ার সময় বাঘা উপজেলার আড়ানী পান্নাপাড়ার সহপাঠী জহুরুল ইসলাম বাবলুকে বিয়ে করেন। তাদের দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। একজনের বয়স ১৭ বছর। আরেকজনের বয়স সাত। দুই বছর আগে স্বামীকে তালাক দেন খায়রুন। এর এক বছর পর ফেসবুকে মামুনের সঙ্গে পরিচয় হয়। ছয় মাস সম্পর্কের পর গত বছর ডিসেম্বর মাসে দুজন গোপনে বিয়ে করেন। কিছুদিন আগে বিষয়টি জানাজানি হলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
আটকের সময় সাংবাদিকদের স্বামী মামুন বলেন, শয়ন ঘরে স্ত্রীকে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে রাত সাড়ে ৩টার দিকে তিনি বাসা থেকে বের হন। সকালে কলেজে যাওয়ার জন্য স্ত্রীকে ডেকে দিতে মোবাইলে কল দিলে স্ত্রী কল রিসিভ না করায় তিনি বাসায় ফেরেন। বাসায় ফিরে ড্রয়িং রুমে স্ত্রীকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখে হাতের কাছে কিছু না পেয়ে পকেটে থাকা গ্যাস লাইট দিয়ে ওড়নায় পুড়িয়ে স্ত্রীকে নামান। বুঝতে পারেন স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে।
তবে খায়রুনের ভাতিজা নাহিদ হাসান জানান, নতুন বিয়ের পর থেকেই তার ফুপুর কাছ থেকে পালসার মোটরসাইকেলসহ প্রায় ৫ লাখ টাকা নিয়েছে মামুন। নতুন করে আবার আর ওয়ান-৫ মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল। তিনি বলেন, মামুন নেশা করে। চারদিন আগে গুরুদাসপুরে নেশা গ্রহণ নিয়ে বিরোধের জেরে মামুন অন্যদের সঙ্গে মারামারি করে। এ ঘটনায় গুরুদাসপুর থানায় মামুনসহ কয়েকজনের নামে মামলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মামুন ও খায়রুন নাহারের মনোমালিন্য চলছিল। তবে গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুল মতিন জানান, সেই মামলায় মামুন অভিযুক্ত নয়।
খায়রুন নাহার গুরুদাসপুর উপজেলার চাঁচকৈড় পৌর এলাকার মো. খয়ের উদ্দিনের মেয়ে। তার স্বামী মামুন হোসেন একই উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের পাটপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ আলী মেম্বারের ছেলে ও নাটোর নবাব সিরাজউদদৌলা সরকারি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।