বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় প্রতি বছরের মতো শরতের শেষে এবারও দেখা মিলেছে পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্লভ মায়াবী দৃশ্য। দিনের শুরুতে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে একটু কালচে দেখা যায়। পরে বদলাতে থাকে রুপ। কখনো টুকটুকে লাল, কখনো কমলা, কখনো হলুদ আবার কখনো সাদা। পরে ক্রমান্বয়ে ঝাপসা হতে হতে মিলিয়ে যায়। তবে শেষ বিকেলে সূর্যের কিরণ যখন বরফাচ্ছাদিত পাহাড়ের ওপর পড়ে, তখন আবারও দেখা দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সূর্যোদয়ের পর থেকেই তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলোসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করছেন এলাকাবাসী। তারা বলছেন, প্রতি বছর নভেম্বরের শুরুর দিকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা গেলেও এবার অক্টোবরের শেষের দিকে দেখা মিলছে। উত্তরের আকাশে নয়নাভিরাম হিমালয় মূলত বরফে ঢাকা সাদা মেঘের মতোই দেখতে। সেই সঙ্গে রয়েছে পিরামিডের মতো কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া।
প্রতি বছর কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পর্যটকরা ছুটে যান এ পর্বতশৃঙ্গ দেখার সবচেয়ে আদর্শ জায়গা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং শহরের টাইগার হিল পয়েন্টে। কেউ কেউ সরাসরি নেপালে গিয়েও কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ উপভোগ করেন। যেসব বাংলাদেশি পর্যটকের এসব জায়গায় সুযোগ হয় না, তারা কাঞ্চনজঙ্ঘার নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন তেঁতুলিয়ায়। গত বছর বাংলাবান্ধায় ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে প্রচুর মানুষ ভারতের এই পাহাড় দেখতে এসেছিল। এবার করোনার কারণে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট বন্ধ রয়েছে।
জানা গেছে, দেশের সর্ব-উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন থেকে নেপালের দূরত্ব মাত্র ৬১ কিলোমিটার, এভারেস্ট শৃঙ্গের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার, ভুটানের দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার, চীনের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার, ভারতের দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার, শিলিগুড়ির দূরত্ব ৮ কিলোমিটার আর কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব মাত্র (আকাশ পথে) ১১ কিলোমিটার।
নীলফামারীর ডিমলা থেকে তেঁতুলিয়ায় বেড়াতে আসা ইদ্রিস আলী বলেন, ‘আমি গত বছর তেঁতুলিয়ায় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এসেও দেখতে পারিনি। আজ হঠাৎ তেঁতুলিয়ায় এসে দেখতে পেলাম। অনেক ভালো লাগল। মনে হলো, কাঞ্চনজঙ্ঘার কাছে গিয়ে দেখে এলাম।’
কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে আসা পর্যটকদের জন্য তেঁতুলিয়া ও বাংলাবান্ধা এলাকার আশপাশে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি হোটেল-মোটেল ও পিকনিক স্পট।
তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মাহামুদুর রহমান ডাবলু জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য তেঁতুলিয়ায় এসে ভিড় জমায়। পিক কর্নারে এসে বেশির ভাগ পর্যটক কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করে তাই উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে পিকনিক কর্নারকে নতুন করে সাজানো হয়েছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, আকাশ মেঘমুক্ত ও পরিষ্কার থাকায় খালি চোখেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে। উত্তরবঙ্গে সাম্প্রতিক বৃষ্টির কারণে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ কমে যাওয়াতেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দৃশ্যমান হচ্ছে।