যাঁরা ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকেন অথবা নিজের বাড়িতে জায়গার অভাবে বাগান করতে পারেননা, তাঁরা বাগান করার জন্য বেছে নিয়েছেন বাড়ির ছাদকে। মাত্রাতিরিক্ত দূষণের কারণে প্রকৃতির যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে সেই সম্পর্কে সমাজ এখন অনেকটাই সচেতন। আর এই দূষণ রুখতে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার গাছ। এই কারণেই বাড়ছে ছাদে বাগান করার প্রবণতা।
টব পদ্ধতি :
খুব সহজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করা যায় বলে এটাই সহজ পদ্ধতি বলে বিবেচিত। তবে ফলের গাছের জন্যে টব সাধারণত যে আকারের হয়ে থাকে তাতে খুব একটা ভালো হবে না। বড় আকারের টবে ফলের গাছ লাগানো যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে সিমেন্টের তৈরি বড় টব ব্যবহার করা যায়। টবে চাষ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জৈব সার ব্যবহার করা উচিত। ১৪ ইঞ্চি থেকে ১৮ ইঞ্চি আকারের একটি টবের জন্য জৈব সারের পাশাপাশি ১০০ গ্রাম এসএসপি এবং ৫০ গ্রাম এমওপি সার ভালোভাবে মিশিয়ে ১০ – ১২ দিন রেখে দিতে হবে। তারপর টব ভরাট করতে হবে।
হাফড্রাম পদ্ধতি :
বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষই হাফড্রাম পদ্ধতিতে ছাদে ফলের বাগান করে থাকেন। হাফড্রামের নীচের দিকে ছিদ্র করতে হবে। ছিদ্রগুলোয় ইটের টুকরো বসাতে হবে; তার উপরে ড্রামের তলদেশে প্রথম ১ ইঞ্চি পরিমাণ খোয়া বা সুড়কি দিতে হবে এবং তার উপরে এক ইঞ্চি পরিমাণ জৈব সার বা পচা গোবর দিতে হবে যাতে অতিরিক্ত জল সহজেই বের হয়ে যেতে পারবে।
জৈব সারের পাশাপাশি প্রতিটি ড্রামে ২০০ গ্রাম এসএসপি, ১০০ গ্রাম এমওপি ব্যবহার করা যেতে পারে। আম ও লেবু জাতীয় গাছের জন্য প্রতিটি ড্রামে উপরিউক্ত জৈব ও রাসায়নিক সারের পাশাপাশি ৫০০ গ্রাম হাড়ের গুড়া ব্যবহার করা যেতে পারে। শাক-সবজি, ফুলের জন্য ছোট খাট টব বা পাত্র হলেও চলে। কিন্তু ফলের ক্ষেত্রে পাত্র/ড্রাম যত বড় হয় তত ভালো।
স্থায়ী বেড পদ্ধতি :
ছাদে বাগান করার জন্য স্থায়ী বেড পদ্ধতি একটি আধুনিক পদ্ধতি। স্থায়ী বেড পদ্ধতিতে ছাদে বাগান করার পূর্বে ছাদ বিশেষভাবে ঢালাই দিয়ে নেট ফিনিশিং করে নিতে হবে। এর ২ টি পদ্ধতি আছে।
ছাদের চারদিকে স্থায়ী বেড পদ্ধতিঃ এ পদ্ধতিতে বাগান করার জন্য ছাদের চারিদিকে ২ ফুট প্রস্থের দুই পাশে ১.৫ ফুট উঁচু দেয়াল ৩ ইঞ্চি গাঁথুনির নেট ফিনিশিং ঢালাই দিয়ে তৈরি করলে মাঝখানে যে খালি জায়গা তৈরি হয়, সেই খালি জায়গার তলায় প্রথমে এক ইঞ্চি ইটের সুড়কি বা খোয়া, পরের এক ইঞ্চি গোবর সার দেয়ার পর বাকি অংশ ২ ভাগ মাটি ও ১ ভাগ গোবরের মিশ্রণ দিয়ে ভরাট করে স্থায়ী বেড তৈরি করা হয়।
ট্যাংক পদ্ধতি :
ছাদে ট্যাংক পদ্ধতিতেও গাছ লাগানো যায়। সেজন্য ছাদে এক ফুট উঁচু ৪টি পিলারের উপর জলের ট্যাংক আকৃতির ৩ ফুট দৈর্ঘ্য, ২ ফুট প্রস্থ ও ১.৫ ফুট উঁচু ৩ ইঞ্চি গাঁথুনির নেট ফিনিশিং ঢালাই দিয়ে যে ট্যাংক তৈরি করা হয়। একেই বলে ট্যাংক বেড পদ্ধতি।
শহরের ইট-পাথরের মধ্যে ছুটে চলার বিরাম নেই। দিনের শেষে প্রকৃতির একটু কোমল সজীবতা পাওয়ার জন্য মন কেমন করে ওঠে। তাই ছাদের ওপরেই করে নেওয়া যেতে পারে একটু সবুজের ছোঁয়া। কখনো টবে, কখনো বা কিছুটা জায়গায় মাটি ফেলে তৈরি করে ফেলতে পারেন মনের মতো বাগান।
– ডঃ ব্রতী আচার্য্য,