Home First Lead চট্টগ্রামে নাবিকদের জন্য বিশ্বমানের আবাসন

চট্টগ্রামে নাবিকদের জন্য বিশ্বমানের আবাসন

ইমদাদ হোসাইন

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন শত শত দেশি-বিদেশি জাহাজ ভিড়ে বন্দরটিতে। কিন্তু বিদেশি নাবিকদের জন্য বিশ্রাম ও বিনোদনে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। তাই বিদেশি জাহাজগুলোর নাবিকদের জন্য ‘সীম্যান্স হোস্টেল কমপ্লেক্স’ নামের একটি ভবন নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে নাবিক ও প্রবাসী শ্রমিক কল্যাণ পরিদপ্তর। আগামী ১১ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি আলোচনার জন্য উঠবে বলে জানা গেছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে নাবিক ও প্রবাসী শ্রমিক কল্যাণ পরিদপ্তর, যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে। বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হিসেবে বলা হয়েছে, সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিকদের উন্নতমানের সাময়িক আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করা, চট্টগ্রাম বন্দরে আগত বিদেশি নাবিকদের সাময়িক আবাসন ও বিনোদন সুবিধা প্রদান, দেশি-বিদেশি নাবিকদের চিত্তবিনোদন, লাইব্রেরি, ক্যাফেটেরিয়া, সাইবার ক্যাফে, জিমনেশিয়াম, এমিউজমেন্ট কর্নার ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান।

এছাড়া প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা নাবিক ও প্রবাসী শ্রমিক কল্যাণ পরিদপ্তর তাদের প্রকল্প প্রস্তাবে বলছে, বাংলাদেশ মার্চেন্ট শিপিং অধ্যাদেশ-১৯৮৩-এর ১২ ধারার বিধান বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তারা এ প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে। এর মাধ্যমে মেরিটাইম লেবার কনভেনশনের রেগুলেশন অনুযায়ী নাবিকদের কল্যাণ সুবিধা নিশ্চিতকরণ; আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর সুপারিশ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

নাবিক ও প্রবাসী শ্রমিক কল্যাণ পরিদপ্তর আরও জানিয়েছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পে ১৯৫ জন বিভিন্ন পদমর্যাদার দেশি-বিদেশি নাবিকের সাময়িক অবস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। প্রতিদিন গড়ে ১২০ জন বিভিন্ন শ্রেণির নাবিকের উন্নতমানের সাময়িক আবাসন, চিত্তবিনোদন, লাইব্রেরি, ক্যাফেটেরিয়া, সাইবার ক্যাফে, জিমনেশিয়াম, অ্যামিউজমেন্ট কর্নার ও অন্যান্য কল্যাণ সুবিধা দেওয়া হবে। এছাড়া প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন নাবিককে মেডিকেল সুবিধার আওতায় আনা হবে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রকল্পটির মূল ব্যয়ই যাবে আবাসিক ভবন নির্মাণে। এতে দেখা যায় ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আবাসিক ভবনটি নির্মাণ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ১ হাজার ঘনমিটারের ভূমি উন্নয়ন ও মাস্টার ড্রেন নির্মাণে ব্যয় হবে ৯ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিশ্চিতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা। দেড় কোটি টাকায় কেনা হবে আসবাবপত্র। এছাড়া প্রস্তাবিত ওই ভবনে বানানো হবে ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি জিমনেশিয়াম।

প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার যৌক্তিকতায় বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরে আগত বিদেশি নাবিকদের কল্যাণ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট ফেডারেশন ট্রাস্টের সহায়তায় সীম্যান্স হোস্টেলের একটি এফ টাইপ কোয়ার্টারকে ইন্টারন্যাশনাল সীফ্যারস ড্রপ ইন সেন্টারে রূপান্তরিত করা হয়। বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল সীফ্যারস ড্রপ ইন সেন্টারের এফ টাইপ কোয়ার্টারটিও অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। নাবিক হোস্টেলের ৭ দশমিক ২৭ একর জায়গা নাবিক ও প্রবাসী শ্রমিক কল্যাণ পরিদপ্তরের হলেও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ওই স্থানে ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি হয়েছে। নতুন ইন্টারন্যাশনাল সীফ্যারস ড্রপ ইন সেন্টারের সমন্বয়ে চারতলাবিশিষ্ট সীম্যান্স কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি। এ প্রেক্ষাপটে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।