বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে রোগগুলো শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে, অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয়রোগ তার মধ্যে অন্যতম। হাড়ের ক্ষয় হওয়ার পেছনে নির্দিষ্ট মাত্রায় হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া মূল কারণ। হাড়ের ঘনত্ব কমতে শুরু করলে ক্যালসিয়ামের পরিমাণও কমে আসে এবং এর স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হয়ে যায়। এতে ধীরে ধীরে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়।
কারণ: নানা কারণেই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ক্ষয়রোগ দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
নারীদের বেলায় ইস্ট্রোজেন হরমোনের অভাব। পুরুষের বেলায় টেস্টোস্টেরন হরমোনের অভাব। থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা। প্যারা থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা। ক্যালসিয়ামের অভাব। ভিটামিন-ডি-এর অভাব। বংশে যদি কারও হাড়ের ক্যানসার রোগ থেকে থাকে।
লক্ষণ ও উপসর্গ: রোগটি মারাত্মক পর্যায়ে না পৌঁছা পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রেই বোঝা যায় না। বেশির ভাগ রোগীর হাড় ভাঙতে শুরু করলে তবেই বুঝতে পারেন তিনি অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। দেহের বিভিন্ন পেশি কিংবা হাড়ে কিংবা মেরুদণ্ডে ব্যথা হওয়া কিংবা কুঁজো হয়ে যাওয়া এই রোগের প্রধান উপসর্গ।
ঝুঁকি: নারীর ঋতু বন্ধ হয়ে গেলে। পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ না করলে। ভিটামিন-ডি-এর অভাব থাকলে। ধূমপানে আসক্ত ব্যক্তি। অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ করলে। রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিস রোগে আক্রান্ত রোগী। ক্যানসার, এইডসসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হলে এবং এসব রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
তা ছাড়া নিয়মিত শরীর চর্চা না করলেও হাড়ের ক্ষয়রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
চিকিৎসা: এ রোগে প্রধান ও প্রথম পদক্ষেপ হবে ঝুঁকি শনাক্তকরণ, সম্ভব হলে রোধ করা। এরপর বেশ ওষুধ পাওয়া যায় যেগুলো চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করা। যেহেতু হাড়ক্ষয় (অস্টিওপরোসিস) একবার হলে আর পুরোপুরি সারানো সম্ভাব্য হয় না, তাই কতটুকু ঝুঁকিতে আছেন বা কারা ইতিমধ্যেই হাড়ক্ষয়ে ভুগছেন, তা নির্ধারণ করতে হবে এবং উপযোগী চিকিৎসা নির্বাচন ও প্রয়োগ করতে হবে।
রোগীকে দুই ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়। একটি হলো রোগীর জীবনযাত্রার ধরন পরিবর্তন, আরেকটি হলো ফিজিওথেরাপি ও ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা। জীবনযাপনের ক্ষেত্রে রোগী ভারী কাজ করবে না, রোগী হাঁটু ভেঙে কাজ করবে না, প্রয়োজন হলে রোগীর জুতার পরিবর্তন করতে হবে। আর কিছু হাঁটুর ব্যায়াম করতে হবে। হাঁটুর চারপাশে যে মাংস সেগুলোকে সবল করার ব্যায়াম। একই সঙ্গে রোগীর ব্যথা থাকলে ব্যথার ওষুধ খেতে হবে। জটিল আকার ধারণ করলে একজন রোগী ১০ মিনিটের বেশি হাঁটতে পারছে না, এক্স-রেতে খুব শেষপর্যায় দেখা যাচ্ছে। ক্ষয়টা অনেক বেশি হয়ে গেছে, তখন সার্জারির মাধ্যমে নি রিপ্লেসমেন্ট করতে হয়।
-ডা. আতিকা সুলতানা