Home First Lead নির্বাচন মনে হয় কপালে নেই: সুজন

নির্বাচন মনে হয় কপালে নেই: সুজন

খোরশেদ আলম সুজন

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম: মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ খোরশেদ আলম সুজন। এবারও ‘নৌকার মাঝি’ হতে পারলেন না, দলের মনোনয়ন পেলেন না সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে। স্বৈরাচারি এরশাদ সরকারের পতনের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রতিটি সংসদ নির্বাচনে দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কপালে জোটেনি। ১৯৮২ সালের ২৩ মার্চ সিদ্ধান্ত হয়েছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ( চাকসু ) নির্বাচনে ভিপি পদে তিনিই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। পরদিন জারি হয় সামরিক আইন। ভেস্তে যায় চাকসু নির্বাচন। গভীর হতাশায় আজ বললেন, ‘নির্বাচন মনে হয় আমার কপালে নেই। কখনও বঞ্চিত হয়েছি মনোনয়ন পাওয়া থেকে, আর কখনও পেয়েও পাইনি শেষ পর্যন্ত ।’

শতবর্ষ পরেও যেন মানুষ মনে রাখে

প্রেসক্লাব ভবনে সিটি মেয়র হজ কাফেলা কার্যালয়ে বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধির সাথে একান্ত আলাপচারিতায় আরও বললেন, ‘আর কতদিন বেচে থাকবো জানিনা, যতদিন বেচে থাকবো, মানুষের জন্য, জাতির জন্য নিবেদিত থাকবো। দেশের আর মানুষের জন্য প্রতিটি মুহূর্ত আমি ব্যয় করতে চাই। যাতে অন্য রাজনীতিবিদরা অনুপ্রাণিত হয়ে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে এগিয়ে আসেন। লেখক মৃত্যুর পর তার লেখার মাঝে বেচে থাকেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত আমারও আকাঙ্খা শতবর্ষ পরেও যেন মানুষ আমাকে মনে রাখে, স্মরণ করে। খোরশেদ আলম সুজন সিটি মেয়র হজ কাফেলার নির্বাহী পরিচালক।

অতিমাত্রায় বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত মেয়র আ জ ম নাছির

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির বিগত সিটি নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়ে বর্তমানে মেয়র। এবারে মনোনয় পাননি। এ প্রসঙ্গে বললেন, যে বিশেষ আগ্রহ নিয়ে দল তাকে মনোনয়ন দিয়েছিল, সম্ভবত দলের সে আকাঙ্খা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেননি। তাই তাকে পরিবর্তনের বিষয়টি এসেছে। অতিমাত্রায় বিভিন্ন সংগঠন, সংস্থার সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন তিনি। একারনে তিনি কর্পোরেশনে নিরবচ্ছিন্ন সময় হয়তো দিতে পারেননি। দিলে কাজ আরও ভাল হতো। তাই পরিবর্তন এনেছে দল।

ভাল হয়েছে কাউন্সিলর সিলেকশন

মহানগর আওয়ামী লীগের যু্গ্ম সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরী সিটি কর্পোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। বর্তমান কাউন্সিলরদের ১৯ জন মনোয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। সুজন বললেন, কাউন্সিলর সিলেকশন ভাল হয়েছে। ১৯ জনকে বাদ দেয়া হয়নি। খেলায় যেমন একজনকে নামিয়ে আরেকজনকে উঠানো হয়, তেমনি এক্ষেত্রেও অধিকতর ভাল কাজের প্রত্যাশায় নতুনদের আনা হয়েছে।

মনোনয়ন কেন দেয়া হয়নি পার্টি ভাল জানে

নিজের মনোনয় না পাওয়ার বিষয়ে বললেন, কেন দেয়া হয়নি তা ভাল জানে দল। পার্টির বিভিন্ন ধরনের চিন্তাভাবনা থাকে। তা থেকে রেজাউল করিমকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, আমাকে দেয়া হয়নি। জানালেন, ‘এবারে চাইলেও গতবারে মেয়র পদে মনোনয়ন চাননি। তবে, মনোনয়ন বোর্ড ডেকে নিয়েছিল মেয়র প্রার্থীদের সভায়। ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনে প্রথমদিকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। পরে তা অন্যজনে খেয়ে ফেলেন। গতবারে মেয়র পদে চাইনি, তবে আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল মনোনয়ন বোর্ডে। ২০১৪ সালের সংসদ সংসদ নির্বাচনের আগে  চূড়ান্ত সিলেকশনে আমার নাম ছিল। পরে তা কেটে দেয়া হয়। ২০১৮ সালে গণভবন থেকে সংবাদ দেয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগ অফিসে গিয়ে মনোনয়নের চিঠি গ্রহণ করার জন্য।’

রেজাউলকে সর্বাত্মক সহযোগিতা

খোরশেদ আলম সুজন আজ জহুর আহমেদ চৌধুরী, এম এ মন্নান এবং মহিউদ্দিন চৌধুরীর কবর জেয়ারতের সময় সঙ্গে ছিলেন রেজাউলের। তবে আরও জরুরি কাজের কারণে দিনের অন্য কর্মসূচিতে থাকতে পারেননি বলে জানান।

বললেন, আগামী মেয়র নির্বাচন ব্যক্তি নির্বাচন নয়, দলের সাথে দলের নির্বাচন। দলের ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন এই প্রথম। মেয়র পদে দলের মনোনীত প্রার্থীর আগামীর সব নির্বাচনী কর্মসূচিতে সঙ্গে থাকবেন, সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন বলে জানালেন সুজন।

আগামীর নগরপিতার প্রতি প্রত্যাশা

আশা করেন যে আগামীতে মেয়র নির্বাচিত হয়ে নাগরিকদের বসবাস উপযোগী নগর প্রতিষ্ঠা করবেন, যে প্রত্যাশায় দল মনোনয়ন দিয়েছে তা পূরণ করবেন রেজাউল। তাছাড়া নগরীকে সুন্দর রাখার ব্যাপারে সক্রিয় থাকবেন, সিটি কর্পোরেশনের সাথে সম্পৃক্ত সেবা সংস্থাগুলোর সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলবেন, সরকারের সঙ্গে ও নগরীর উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহের সাথে সুসম্পর্ক রাখবেন এবং স্থানীয় সরকারকে সহায়তাকারি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করবেন আগামীর নগরপিতা।

চট্টগ্রাম শহরের সাগরও পাহাড়ের যে মেলবন্ধন, সৌন্দর্য তার সাথে ভারসাম্য রেখে আকর্ষণীয় করে এই শহরকে ব্যবসা,বাণিজ্য ও বিনিয়োগের উপযোগী করে গড়ে তোলবেন আগামী মেয়র-এই আশা খোরশেদ আলম সুজনের।

তিনি রাজনীতি শুরু করেন প্রায় অর্ধ শতাব্দি আগে কাট্টলি স্কুলে নবম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে। অর্থাৎ প্রায় ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবন। চট্টগ্রাম সরকারি মহসিন কলেজ ছাত্রলীগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালন করেন। পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ সংকট, জলাবদ্ধতাসহ নগরবাসীর বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করেছেন তিনি।

নাগরিক উদ্যোগের সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন খোরশেদ আলম সুজন
পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ সমাবেশে