তাপস প্রান্ত
চট্টগ্রাম: সারাদেশে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেশ কিছুদিন ধরে অস্বাভাবিক হারে বেড়েই চলেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন কোম্পানির ৫০ কেজি ওজনের সিমেন্টের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা প্রতিব্যাগে। মাস দুয়েক আগে বিক্রি হতো ৩৫০ থেকে ৩৯০ টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪৩০ টাকা থেকে ৪৭০ টাকা দামে।
জানা যায়, জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধির অজুহাত তুলে কারখানা মালিকরা আরেক দফা সিমেন্টের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছেন। তারা বলছেন, সিমেন্টের প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানিতে খরচ বেড়ে গেছে ফ্রেইট বৃদ্ধির কারণে।
বিভিন্ন মানের রডের দাম বেড়েছে ১২ হাজার টাকা থেকে ১৩ হাজার টাকা প্রতিটনে। বর্তমানে বাজারে বিএসআরএম স্টিল কোম্পানির তৈরি ৬০ গ্রেডের রড বিক্রি হচ্ছে প্রতি টন ৭২ হাজার টাকা। একেএস স্টিলের ৬০ গ্রেডের রড বিক্রি হচ্ছে ৭১ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া রহিম স্টিলের ৬০ গ্রেড রডের বাজার মূল্য ৭০ হাজার টাকা। ৪০ গ্রেড রডের বাজার মূল্য ৫৩ হাজার টাকা থেকে ৬৫ হাজার টাকা। মাস দুয়েক আগে ৬০ গ্রেডের রডের টন ছিল ৫০ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা।
প্রতি হাজার ইটের দাম বেড়েছে ১ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। বালির দাম বেড়েছে প্রতিফুটে ২ টাকা থেকে ৩টাকা।
আবাসন ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্মাণ সামগ্রীর বারবার দাম বাড়াটা অযৌক্তিক। দামের লাগাম টানতে না পারলে, নির্মানাধীন অনেক প্রকল্প বন্ধের আশংকা করছেন তারা।
গেটওয়ে প্রপার্টিজের প্রকল্প ব্যবস্থাপক অনিক বড়ুয়া বলেন, মহামারি করোনার কারণে আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলাম। এখনো ক্ষতি পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারিনি। তার ওপর রড-সিমেন্টের দাম বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ খরচও বাড়েছে। যদিও এখনো কোনো আবাসন প্রতিষ্ঠান ফ্ল্যাটের দাম বাড়ায়নি। নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আবাসন খাতে এর চরম প্রভাব পড়বে।
চাদগাঁও এর মদিনা স্টিলের মালিক জমির উদ্দিন বলেন, এক মাস আগে যে রড টন প্রতি ৫০হাজার টাকা বিক্রি করেছি সেই রড এখন ৭২হাজার টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে । দাম বাড়ার ফলে আমাদের বিক্রি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
আসাদগঞ্জের খায়ের অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী খায়েরউদ্দিন বলেন, রডের বাড়তি দামের কারণে ভরা মৌসুমেও ব্যবসা মন্দা চলছে। প্রতিবছরই ঠিক এসময়ে রডের দাম বাড়ায় কোম্পানিগুলো। এটা নিয়ম হয়ে গেছে। আর বাজার স্থিতিশীল না থাকলে ক্রেতারা মৌসুমেও রড কম কেনেন। দাম কমার জন্য অপেক্ষা করেন।
নিজের জমানো সবকিছু দিয়ে বাড়ি বানাচ্ছে বাহিরসিগন্যাল এলাকার বাসিন্দা মো. রফিক, কিন্তু নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ায় তিনি বাড়ির কাজ স্থগিত করেছেন। তিনি বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে এই মূহূর্তে বাড়ির কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সরকারের উচিত নির্মাণ সামগ্রীর দামের লাগাম টেনে, বাজার স্বাভাবিক করা।
কয়লার মূল্যবৃদ্ধির কারণে মূলত ইটের দাম চড়া বলে জানান, সাতকানিয়া ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সহ-সভাপতি হাফেজুর রহমান। তিনি বলেন, ভাটা থেকে দাম বাড়ানো হয়নি। গত বছর প্রতিটন কয়লা ৮ হাজার টাকা ছিল। কিন্তু এবার গুনতে হচ্ছে ১২ হাজার টাকা থেকে ১৩ হাজার টাকা।
চট্টগ্রাম এলজিইডি ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান টিটু বলেন, প্রায় আড়াই হাজার টিকাদারের হাতে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে গত এক মাস ধরে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণে ঠিকাদাররা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।